কিছু উপাধীর বর্ণনাঃ


মাসআলাঃ ঐতিহাসিক ও ভাষাবিদগণ বলেছেন, ‘ফেরাউন’ শব্দটি ‘তাফরাউন’ শব্দ থেকে নির্গত। অর্থ-অহংকারী, দাম্ভিক। মূলতঃ শব্দটি ‘ফুরওয়াআতুন’ থেকে উৎকলিত। মিসরীয় পুরাতন অভিধানে যার অর্থ- শাহান্শাহ বা মহান সম্রাট। আরবরা এটা আরবী ভাষার অন্তর্ভুক্ত করতে গিয়ে ফেরাউন করেছেন। 


ফেরাউনঃ 

ফেরাউন কোন বাদশাহর নাম ছিল না। বরং মিসরীয় বাদশাহগণের উপাধি ছিল। তারা মিশর বিন হা-ম ইবনে নুহ-এর বংশধর ছিল। যেমন হিন্দুস্তানের বাদশাহকে ‘রাজা’ এবং প্রাচীন রোমের বাদশাহগণকে ‘কায়সার’ বলা হতো। ২৯৩

 ➥২৯৩. হক্কানী মাখ্যনে ইলুম, পৃষ্ঠা- ৫৭০


হামানঃ 

ফেরাউনের উজির বা মন্ত্রীর নাম। যাকে ফেরাউন আল্লাহকে দেখার জন্য উঁচুস্থান নির্মাণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, ‘ফেরাউন বলল, হে পরিষদবর্গ! আমি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন খোদা আছে বলে আমার জানা নেই। অথচ মুসা (عليه السلام) এক খোদা প্রমাণ দিচ্ছে। ফেরাউন তার উজিরকে লক্ষ্য করে বলল, হে হামান! তুমি মাটির ইট পোড়াও, অতঃপর আমার জন্য একটি প্রাসাদ নির্মাণ কর, যাতে আমি মুসার (عليه السلام) খোদাকে উঁকি মেরে দেখতে পারি।’  ২৯৪

 ➥২৯৪. সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ৩৮


নামরুদঃ 

নামরুদ এক কাফির বাদশাহর নাম। সে হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام)-এর সময়কার বাদশাহ ছিল এবং নিজেকে খোদা বলে দাবী করত। যে কেউ তার দরবারে গেলে, তাকে সিজদা করতে হতো। সে হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام)কে তার নিকট ডেকে পাঠাল কিন্তু তিনি এসে সিজদা করতে অস্বীকৃতি জানালেন এবং সিজদা সংক্রান্ত বিষয়ে নামরুদকে স্তব্ধ করে দেন। ফলে নমরুদ তাঁর শত্রু হয়ে গেল এবং তাঁকে আগুনে নিক্ষেপ করল কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে অত্যন্ত নিরাপদে রাখেন।


মাসআলাঃ জ্ঞাতব্য যে, চন্দ্র বর্ষ এটি তিনশত চুয়ান্ন দিন। সে হিসেব অনুযায়ী সূর্য বৎসর চন্দ্র বৎসরের চেয়ে এগার দিন এবং দিনের একুশাংশের একভাগের সমপরিমাণ বেশি। উক্ত বর্ষ গণনা আরম্ভ হয় হুযূর সৈয়্যদুল মুরসালীন (ﷺ)-এর হিজরতের তারিখ থেকে।


‘সানাতুন’ এটি আরবি শব্দ, অর্থ-বছর, অন্ধকার যুগেও বছরের হিসেব চন্দ্র হিসেবে বার মাস গণনা করা হতো। যেমনিভাবে ইসলামেও নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্ভবতঃ ইসলামের দু’শো বছর পূর্বে কোন শহরে এ নিয়ম প্রচলিত ছিল এবং প্রত্যেক তৃতীয় বছরে এক মাস বর্ধিত করা হতো, যেমন- হিন্দী লোকদের মাস হয়ে থাকে। যাতে সূর্যের হিসেবের সাথে চন্দ্রের হিসেব মিলে যায়। সে কারণে তাদের হজ্ব প্রত্যেক বছর একই সময়ে হয়ে থাকে এবং তাদের রীতি-নীতি ও আধুনিকতায় কোন পার্থক্য সৃষ্টি হয় না।


উক্ত হিসেবের নিয়ম পদ্ধতি হচ্ছে, কতেক দিন মাসের খুচরা হিসাবের ওপর বাড়িয়ে দেয়া। যার ফলে তিন বছরে পূর্ণ একমাস বেরিয়ে আসে। এ হিসাব বর্তমানেও মিশরীয় আরবদের মধ্যে প্রচলিত আছে। কিন্তু ইসলাম এটাকে অনর্থক বলেছে, শুধুমাত্র চাঁদ দেখানুপাতে চন্দ্র হিসেব চালু রেখেছেন। ইসলামের সকল দল সাধারণত শরয়ী বিধানসমূহের হিসাব-নিকাশ চাঁদ দেখানুপাতে সম্পাদন করে থাকেন। যেমন কোরআন মজিদে আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা যেদিন আসমান-যমিন সৃষ্টি করেছেন সেদিন থেকে আল্লাহর কিতাব অর্থাৎ লওহে মাহফুযে ও গণনায় মাস বারটি লিখে আসছে। তন্মধ্যে সম্মানিত মাস চারটি। এটিই দ্বীন-ধর্মের সঠিক পথ। হে মুসলমানেরা! এর মধ্যে তোমরা নিজেদের সত্তার প্রতি যুলুম-অত্যাচার করো না। আর তোমরা মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করো সমবেতভাবে, যেমন তারাও তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে সমবেতভাবে।’ ২৯৫

 ➥২৯৫. সূরা তাওবা, আয়াত: ৩৬


ইসলামী বর্ষ মুহররম মাস থেকে শুরু হয় এবং পূর্ণ সংখ্যা বার মাস হয়। এটাই পবিত্র কোরআন ও হাদীস শরীফ দ্বারাও প্রমাণিত।


হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কুরবানীর দিন খুৎবা প্রদানকালে ইরশাদ করেন যে, যামানা বা বছর তার মূল ভিত্তির ওপর এসে পৌঁছেছে। যেমনি আল্লাহ তা‘আলা আসমান-যমিন সৃষ্টি করার দিন ছিল। অর্থাৎ বছর, বার মাসের গণনা হয়েছিল। তন্মধ্যে চার মাস হচ্ছে সম্মানিত।


এর মধ্যে তিন মাস হচ্ছে লাগাতার ও মিলানো যিলকদ, যিলহজ্জ ও মুহর্রম এবং রজব মাস হচ্ছে জমাদিউস সানি ও শাবান মাসের মাঝখানে। ২৯৬

  ➥২৯৬. ইসলামী মালুমাত কা মাখ্যান, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৪১৫।






সমাপ্ত


-----------------------------------------------------------------



 বি:দ্র:- তাওহীদ, রিসালাত, ঈমান, আক্বীদা, অযু, গোসল, নামায, রোযা, হজ্ব ও যাকাত ইত্যাদি শরীয়তের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও যুগোপযোগী মাসআলা-মাসায়েল সম্পর্কে আরো বিস্তারিতভাবে জানার জন্য এশিয়াখ্যাত আলেমেদ্বীন, শাইখুল হাদিস, তাফসীর, ফিকহ ও আদিব, আলেমকুল শিরমণি, বহু মসজিদ, মাদ্রাসা ও খানকার প্রতিষ্ঠাতা, বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন ভাষায় শতাধিক গ্রন্থ প্রণেতা, পেশ্ওয়ায়ে আহলে সুন্নাত, শাইখে তরিকত, হযরতুলহাজ্ব আল্লামা মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক আল্-কাদেরী (মা.জি.আ.)’র লিখিত কিতাবসমূহ পাঠ করার অনুরোধ রইল। বিশেষ করে ফতোয়া আজিজি আয্ ফুয়ূযে কাযেমী ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম খণ্ড, মুনিয়াতুল মুসলেমীন ১ম ও ২য় খণ্ড, গাউছিয়া আজিজিয়া নামায শিক্ষা, র্কুরাতুল উয়ুন লিমানিল মু’মিনুনাল মুখলিসুন, তরিকুস সালাত ‘আলা ছাবিলিল ইজাজ বিল-মাযহাবিল হানাফী ইত্যাদি কিতাবসমূহ পাঠ করুন।    (অনুবাদক)



 
Top