ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন বেলাল (رضي الله عنه)-এর আক্বিদা


দূর থেকে সফর করে রওজা যিয়ারতঃ-

ইমাম ইবনে আসাকির (رحمة الله) বিশুদ্ধ ‘হাসান’ সনদে হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হযরত বেলাল (رضي الله عنه) শামে অবস্থান কালে- 


ثُمَّ إِنَّ بِلاَلاً رَأَى النَّبِيَّ -صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- فِي مَنَامِهِ وَهُوَ يَقُوْلُ: مَا هَذِهِ الجَفْوَةُ يَا بِلاَلُ؟ أَمَا آنَ لَكَ أَنْ تَزُوْرَنِي؟


‘এক রাতে তিনি দেখলেন যে, রাসুল (ﷺ) তার উদ্দেশ্যে বলেন, বেলাল! তোমার এ নির্দয় আচরনের কারণ কী! আজও কী আমার জিয়ারতের সময় হয়নি?’ এরপর তিনি বিষন্ন মনে ও ভিতসন্ত্রস্ত্র অবস্থায় জেগে উঠলেন। তারপর তিনি বাহনে চড়ে মদিনার উদ্দেশ্যে সফরে রওয়ানা হলেন। রওজা শরীফে পৌঁছে তিনি রওজার পাশে কাঁদতে লাগলেন এবং তাঁর চেহাড়া রওজা শরীফের সাথে মললেন।’ ২৮৯

{২৮৯. আল্লামা ইবনে আসাকীর : তারীখে দামেস্ক : ৭/১৩৭পৃ., যাহাবী, তারীখুল ইসলাম : ৪/২৭৩পৃ, ইবনে হাজার আসকালানী : লিসানূল মিযান : ১/৪৫পৃ, ইমাম যাহাবী : সিয়ারু আ‘লামিন আন্-নুবালা : ১/৩৫৮পৃ, ক্রমিক. ৭৬, মুয়াস্সাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবানন, মুফতি আমিমুল ইহসান : ফিকহুস সুনানি ওয়াল আছার : ১/৪১৪পৃ. হাদিস : ১১৭১, ইমাম তকি উদ্দিন সুবকী, শিফাউস সিকাম : ৩৯পৃ. ইবনে হাজর মক্কী, যাওয়াহিরুল মুনাজ্জাম : পৃ-২৭, শাওকানী, নায়লুল আওতার : ৫/১৮০পৃ. ইমাম জাযরী আশ্-শায়বানী: সাদ্দাল গাবাত ফি মা‘রিফাতুল সাহাবা : ১/৪১৫পৃ. দারূল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম ইফরিকী, মুখতাসিরে তারিখে দামেস্ক : ৪/১১৮পৃ. উক্ত হাদিস সর্ম্পকে মুফতি আমিমুল ইহসান (رحمة الله) বলেন, ‘‘ইবনে আসাকির গ্রহণযোগ্য সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।’’ ইমাম সুবকী (رحمة الله) এবং আল্লামা ইবনে হাজার মাক্কী (رحمة الله) তাদের গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।}


এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম যাহাবী (رحمة الله) বলেন, إسناده جيّد ما فيه ضعيف -“ইহার সনদ অতি-উত্তম, যার মধ্যে দুর্বলতা নেই।”  ২৯০

{২৯০. ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, ৫/৭৭৩ পৃ. রাবী ক্রমিক. ৩৭ এর আলোচনায়।}


❏এ সম্পর্কে আল্লামা মুহাম্মদ ইবনে ইউছুফ সালেহী শামী (رحمة الله) {ওফাত ৯৪২ হিজরী} বলেন-


وروى ابن عساكر بسند جيد عن بلال


-“ইবনে আসাকির (رحمة الله) অতি-উত্তম সনদে হজরত বেলাল (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।”  ২৯১

{২৯১. ইমাম ইবনে সালেহী: সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১২/৩৫৯ পৃ:}


❏লা-মাজহাবীদের কথিত ইমাম মাওলানা কাজী শাওকানী বলেন,


عِنْدَ ابْنِ عَسَاكِرَ بِسَنَدٍ جَيِّدٍ


-“ইহা ইবনে আসাকির (رحمة الله) এর নিকট جَيِّدٍ অতি-উত্তম সনদে রয়েছে।” ২৯২

{২৯২. কাজী শাওকানী, নাইলুল আওতার, ৫/১১৪ পৃ:}


আক্বিদা

এ হাদিস থেকে বুঝা যায় যে রাসূল (ﷺ) ওফাতের পরেও তাঁর প্রিয় সাথীগণের সকল অবস্থা সম্পর্কে অবগত, তাই হযরত বেলাল (رضي الله عنه) এ অবস্থা বুঝতে পেরে বহু দূরে থেকে সফর করে রাসূল (ﷺ)‘র রওজা যিয়ারত করতে চলে আসেন এবং রওজার নিকটে কাঁদতেন থাকেন। এ হাদিস থেকে সফরের উদ্দেশ্যে মাজার যিয়ারতের বৈধতার প্রমাণ পাওয়া গেল। ২৯৩

{২৯৩. সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।}





সরাসরি কবরের আওয়াজের শব্দ শুনাঃ-


❏হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, একবার হুযূর (ﷺ) হযরত বেলাল (رضي الله عنه) কে বললেন-


يَا بِلَالُ هَلْ تَسْمَعُ مَا أَسْمَعُ؟ قَالَ: لَا وَاللَّهِ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا أَسْمَعُهُ، قَالَ: أَلَا تَسْمَعُ أَهْلَ الْقُبُورِ يُعَذَّبُونَ


-‘‘হে বেলাল! তুমি কি শুনতে পাচ্ছ যা আমি শুনতে পাচ্ছি? তিনি বললেন, না। ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর শপথ করে বলছি আমি কিছুই শুনতে পাচ্ছি না। হুযূর (ﷺ) ইরশাদ করলেন, তুমি শুনতে পাচ্ছ না এই কবরবাসীদের (ইয়াহুদীদের) কে আযাব দেয়া হচ্ছে।’’  ২৯৪

{২৯৪. ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ১/৯৮ পৃ. হা/১১৮, তিনি বলেন- هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ -‘‘এ হাদিসটি সহীহ বুখারী মুসলিমের শর্তানুসারে সহীহ।’’ ইমাম যাহাবীও তার সাথে একমত পোষণ করেছেন।}


আক্বিদা

এ হাদিস থেকে জানা গেল যে সাহাবায়ে কিরামগণের নিকট যেটি গায়ব ছিল কিন্তু রাসূল (ﷺ)‘র কাছে তা নয়। হযরত বেলাল (رضي الله عنه) কসম করে বলেছেন তিনি কিছুই শুনেননি; বুঝা গেল মাটির ভিতরে কবরের অবস্থা পঞ্চ ইন্দ্রের বাহিরে তাই এটি সুস্পষ্ট গায়ব। আর এটাই সাহাবায়ে কিরামদের আক্বিদা ছিল রাসূল (ﷺ) গায়বের খবর দাতা। ২৯৫

{২৯৫. সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।}

 
Top