রাসুলের(ﷺ)শানে হযরত সাওয়াদ বিন কারিবের কবিতায় ওহাবীদের ভ্রান্ত ধারণা খন্ডনঃ


হযরত সাওয়াদ ইবনে কারিব  (رضي الله عنه) নবী করিম(ﷺ)-এর সম্মুখে এ পংক্তিগুলাে পাঠ করেছেন-“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই আল্লাহ ব্যতীত কোন বস্তু নেই, আর নিঃসন্দেহে আপনি সকল অদৃশ্য জ্ঞানের রক্ষক। অবশ্যই আপনি পাক পবিত্র পিতা-মাতার সন্তান, শাফায়াতের ব্যাপারে সকল রাসুলদের থেকে নিকটতর। আপনি আমার জন্য সুপারিশকারী হয়ে যান, যেদিন আপনি ব্যতীত সওয়াদ ইবনে কারিবের জন্য কোন সুপারিশকারী উপকার করতে পারবে না”। 

মুসনাদে ইমাম আহমদে আমরা এ বর্ণনা পেয়েছি- “আল্লাহ ছাড়া আর কোন বস্তু নেই। যদিও অন্য বর্ণনায় এ কথা আছে যে-“তিনি ব্যতীত কোন রব নেই'। এটাই আমি বলছি, এখানেতাে হযরত সাওয়াদ  (رضي الله عنه) প্রথমতঃ আল্লাহ ছাড়া প্রত্যেক বস্তুর অস্তিত্বকেও অস্বীকার করেছেন। 

দ্বিতীয়তঃ আমাদের প্রিয় হাবীব (ﷺ)-এর জন্য সমস্ত গায়ব (অদৃশ্যজ্ঞান) প্রমাণিত করছেন। এমনকি হুজুর (ﷺ)কে সকল গায়বের ‘আমীন বা রক্ষক ভূষিত করেছেন। 

তৃতীয়তঃ এ কথায় বিশ্বাস করেছেন যে, আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ) শাফায়াত প্রাপ্ত হয়েছেন। যেমন মুসলিম শরীফের হাদীস রাসুলে করীম(ﷺ) ইরশাদ। করেছেন-“আমাকে শাফায়াত প্রদান করা হয়েছে”। ওহাবীদের ন্যায় নয়, যারা - বলে, হুজুর (ﷺ)কে এখনাে শাফায়াত প্রদান করা হয়নি, কিয়ামত দিবসেই তার এটার (শাফায়াত) অনুমতি হাসিল হবে। এর দ্বারা তারা এটাই বলতে চায় যে, দুনিয়াতে রাসুল (ﷺ) থেকে ফরিয়াদ করা যাবেনা। কেননা, তিনি এখন শাফায়াতের শক্তি রাখেন না। আর আল্লাহ তায়ালার এ ইরশাদ, “আপনি আপনার নিকটাত্মীয় মুসলমান পুরুষ ও নারীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। আর আল্লাহ তায়ালার এ বাণী-“যখন তারা স্বীয় আত্মার উপর যুলুম করবে, আর আপনার দরবারে উপস্থিত হয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আর রাসুল যদি তাদের জন্য শাফায়াত করেন, তাহলে নিশ্চয়ই তারা আল্লাহকে তাওবা কবুলকারী ও দয়াবানরূপে পাবেন। ওহাবীরা এ আয়াতসমূহ থেকে এমনভাবে পৃষ্ট প্রদর্শন করেছে যেন তারা কিছুই জানেনা। 

চতুর্থতঃ এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছেন যে, রাসুল সৈয়দে আলম(ﷺ)এর শাফায়াত সবচেয়ে নিকটবর্তী। এটা তারই বিপরীত যা তাদের পেশাওয়া ইসমাঈল দেহলভী ‘তাকৃবিয়াতুল ঈমানে’ বলেছে যে, আল্লাহ তায়ালা যখন কোন অনুতপ্ত ও তাওবাকারীর ক্ষমার জন্য ফন্দি করতে চাইবেন, তখন যাকে ইচ্ছে তাকে সুপারিশকারী নিয়ােগ করবেন। এতে কারাে বিশেষত্ব নেই। তিনি অনুতপ্ত তাওবাকারীর উল্লেখ এ জন্যই করেছেন যে, তার মতে শাফায়াত ঐ ব্যক্তির জন্যই হবে অনুতপ্ত তাওবাকারীর সে ব্যক্তির জন্য নয়, যে তাওবা করেনি।

 


পঞ্চমতঃ হযরত সাওয়াদ ইবনে কারিব (رضي الله عنه) ওহাবীদের এ ধারণা খন্ডনের জন্য রাসুলের কাছে ফরিয়াদ করেছেন। 


যষ্ঠতঃ প্রথমেই যে বলেছিলাম, হুজুর সৈয়দে আলম (ﷺ)-এর শাফায়াত সবচেয়ে নিকটতর। তা থেকে উন্নতি করে শাফায়াতকে হুজুরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে দিয়েছেন এবং এ সত্যই অবশিষ্ট রয়েছে। আর সকল শাফায়াতকারী নবীর দরবারেই শাফায়াতের জন্য দরখাস্ত করবেন। আল্লাহর নিকট হুজুর (ﷺ) ব্যতীত কোন শাফায়াতকারী নেই। যেমন রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন ‘আমি সকল নবীদের শাফায়াতের মালিক, এটা আমার গর্ব নয়।' 


সপ্তমতঃ তিনি প্রমাণ করেছেন, যে রাসুলে পাক (ﷺ)-এর সাহায্য প্রার্থী হবে, সে অবশ্যই হুজুরের সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। এতে ওহাবীদের পেশাওয়ার - (ইসমাইল দেহলভী) উক্তির খন্ডন রয়েছে। সে এ উক্তি করেছিলাে, নবীয়ে করীম (ﷺ) স্বীয় কন্যার কল্যাণ করতেও অক্ষম। অন্যেরতাে প্রশ্নও উঠেনা।' সুতরাং এ সম্মানিত সাহাবীর এ সামান্য বাক্যের মহা কল্যাণ দেখুন! নিশ্চয়। হাদিস সাক্ষ্য যে, রাসুলে পাক (ﷺ) তাঁর এ সকল বাক্যবলী স্থায়ী করে রেখেছেন। এটাই বুঝে নিন। আর আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-“যে দিবসে আল্লাহ তায়ালা সকল নবীদের একত্রিত করবেন এবং তাদের বলবেন তােমরা কি উত্তর দিবে? আরজ করবেন, আমাদের কিছু জানা নেই। 


আমি বলছি, আম্বিয়ায়ে কিরাম প্রকৃত অবস্থার উপর বাক্যলাপ করেছেন এবং স্বীয় (সত্ত্বাগত) জ্ঞানের পরিপূর্ণভাবে অস্বীকার করেছেন। এ কারণে যে, ছায়া যখন বাস্তবের সম্মুখীন হয়, তখন সে কিছু দাবী করতে পারে না। আর ফিরিস্তারা আরজ করেছেন, আপনার পবিত্রতা আমাদের এ সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই, কিন্তু আপনি যা আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। এখানে ফিরিস্তারা প্রকৃত প্রদত্ত জ্ঞান সম্পর্কে বাক্যলাপ করেছেন। সুতরাং উভয়ের অস্বীকারকে একত্রিত করলে দেখা যায়, হযরত আম্বিয়ায়ে কিরাম শিষ্টাচারের দিক দিয়ে ফিরিস্তাদের থেকেও অনেক ঊর্ধ্বে, তা’জীমের সম্মান দিক দিয়েও তাদের সবার উপর

দরুদ ও সালাম। 

 

ফিরিস্তাদের যখন স্মরণ আসলাে, তখন তারা নিজ বাক্য পরিবর্তন করলেন এবং হাছর (বিশিষ্টতা) মুলকভাবে ইরশাদ করলেন যে, নিশ্চয়ই আপনি জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাময় অর্থাৎ আপনি ব্যতীত কোন জ্ঞানী নেই। সারাংশ হলাে, সব আল্লাহর জন্য আর তার প্রদত্ত ব্যতীত কেউ কিছুর জ্ঞান রাখেনা। তাহলে কথার মােড় এদিকেই ঘুরলাে যা ইমামগণ বিশ্লেষণ করেছেন যে, অস্বীকার (টিকা ১) এরই যে, কেউ স্বয়ং আল্লাহ প্রদত্ত ব্যতীত সত্তাগত ভাবে জ্ঞানী নয়। 


(টিকা ১) যে ব্যক্তি জেনেছে এবং দেখেছে যা প্রথম নজরে' অতিবাহিত হয়েছে? অতঃপর পারস্পরিক প্রতিকুলতার অপবাদ দিয়েছে সুস্পষ্ট আয়াত সমূহে। নিশ্চয়ই সে অলসতা করেছে ও ধােকা খেয়েছে। আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থী যেন তিনি আমাদের পূর্বাপর সকল গুনাহ ক্ষমা করেন!
 
Top