সপ্তম অধ্যায় 


জানাযা ও জিয়ারত সম্পর্কিত হাদিস সমূহ



বিষয় নং- ১: হযরত বিলাল (رضي الله عنه) এর মদীনা পরিত্যাগ ও স্বপ্নে প্রাপ্ত আদেশে মদীনায় আগমন।



‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থে ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর ২৭১ পৃষ্ঠায় এ হাদিসটি বিষয়ে লিখেছেন-‘‘এ কাহিনীটি বানোয়াট।’’ 


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এ কাহিনীটি কোন কিতাবে বানোয়াট বলা হয়েছে তিনি তার কিছুই উল্লেখ করেননি। তার একটাই কারণ সাধারণ মানুষদেরকে ধোঁকা দেয়া। সর্বশেষে তিনি হযরত বেলাল (رضي الله عنه)-এর ঘটনাটি বিকৃতি করে উপস্থাপন করে বানোয়াট প্রমাণ করার ব্যর্থ চেষ্টা করেন।


ড. আহমদ আলী তার ‘বিদ‘আত’ গ্রন্থের দ্বিতীয় খন্ডের ১৬১ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদিসটিকে দ্বঈফ প্রমাণ করার নিজের বানানো এক রাবীর নাম প্রচার করেন, তিনি দাবী করেন সে দুর্বল হওয়ার কারণে এটি দুর্বল। অথচ সনদে সে নামে কোনো রাবীই নেই।


❏ এ বিষয়ে আরেকটি বিশুদ্ধ রেওয়াত উল্লেখযোগ্য,


قال أبو أحمد الحاكم: حدثنا ابن الفيض، قال: حدثنا أبو إسحاق إبراهيم بْن محمد بْن سليمان بن بلال بن أبي الدرداء، قال: حدَّثَنِي أبي، عن أبيه سُليمان، عن أمّ الدَّرْدَاء، عَنْ أبي الدَّرْدَاء قَالَ:.. إِنَّ بِلاَلاً رَأَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي مَنَامِهِ وَهُوَ يَقُوْلُ: مَا هَذِهِ الجَفْوَةُ يَا بِلاَلُ؟ أَمَا آنَ لَكَ أَنْ تَزُوْرَنِي؟ فَانْتَبَهَ حَزِيْناً وَرَكِبَ رَاحِلَتَهُ وَقَصَدَ المَدِيْنَةَ فَأَتَى قَبْرَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجَعَلَ يَبْكِي عِنْدَهُ ويُمرِّغ وَجْهَهُ عَلَيْهِ.


-“হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) বলেন, নিশ্চয় হযরত বেলাল (رضي الله عنه) স্বপ্নে রাসূল (ﷺ) দেখেলেন এবং প্রিয় নবীজি (ﷺ) তাঁকে বললেন: হে বেলাল! এটা কিরূপ নির্দয় আচরণ করছ? এখনো কি আমার যিয়ারতের সময় হয়নি তোমার? অত:পর তিনি জাগ্রত হয়েই মদিনার উদ্দেশ্যে বাহনে চড়লেন। তারপর রাসূলে পাক (ﷺ) এর রওজা মোবারকে আসলেন ও তিনি কাঁদলেন এবং রওজা পাকের সাথে তাঁর চেহারা ঘষালেন।” 


(ইমাম যাহাবী: তারিখে ইসলামী, ৫/৭৭৩ পৃ., রাবী নং ৩৭ এর ব্যাখ্যায়; তারিখে ইবনে আসাকির, ৭ম খণ্ড, ১৩৭ পৃ:; ইমাম ইবনে আছির র: এর ‘উছদুল গাবা ফি মারিফাতিস সাহাবা, ১/৪১৫ পৃ:; ইমাম যাহাবী: সিয়ারু আ’লামীন নুবালা, ৩/২১৮ পৃ:; শরফুল মুস্তফা, ৩য় খণ্ড, ১৯৬ পৃ:; ইমাম ইবনে সালেহী শামী: সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১২/৩৫৯ পৃ:; সিরাতে হালবীয়্যাহ, ২/১৩৯ পৃ:; কাজী শাওকানী: নাইলুল আওতার, ৫/১১৪ পৃ:; ফিকহু সুনানি ওয়াল আছার, ১ম খণ্ড, ৪১৪ পৃ: হাদিস নং ১১৭১; সুবকী, সিফাউছ ছিক্বাম, ৩৯ পৃ:)।


❏ এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম যাহাবী (رحمة الله) বলেন: إسناده جيّد ما فيه ضعيف، -“ইহার সনদ অতি-উত্তম, যার মধ্যে দুর্বলতা নেই।” 


(ইমাম যাহাবী: তারিখে ইসলামী, ৫/৭৭৩, রাবী নং ৩৭ এর ব্যাখ্যায়)।


❏ এ সম্পর্কে আল্লামা মুহাম্মদ ইবনে ইউছুফ সালেহী শামী (رحمة الله) [ওফাত ৯৪২ হিজরী] বলেন-


وروى ابن عساكر بسند جيد عن بلال


-“ইবনে আসাকির (رحمة الله) শক্তিশালী সনদে হযরত বেলাল (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন।” 


(ইমাম ইবনে ছালেহী: সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১২তম খণ্ড, ৩৫৯ পৃ:)


❏ লা-মাজহাবীদের কথিত ইমাম মাওলানা কাজী শাওকানী বলেন,


عِنْدَ ابْنِ عَسَاكِرَ بِسَنَدٍ جَيِّدٍ


-“ইহা ইবনে আসাকির (رحمة الله) এর নিকট جَيِّدٍ অতি-উত্তম সনদে রয়েছে।” 


(কাজী শাওকানী: নাইলুল আওতার, ৫ম খণ্ড, ১১৪ পৃ:)


❏ আল্লামা মুফ্তী আমিমুল ইহছান মুজাদ্দেদী ওয়া বারকাতী (رحمة الله) বলেন: “ইবনে আসাকির (رحمة الله) جَيِّدٍ অতি-উত্তম সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।” 


(ফিকহু সুনানি ওয়াল আছার, ১ম খণ্ড, ৪১৪ পৃ: হাদিস নং ১১৭১)।


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর মুফতি আমিমুল ইহসানের কিতাবটিকে নিজেই অনুবাদ (১) করে নিজেই ধোঁকাবাজি করেছে সবার সাথে, সে কতবড় ধোকাবাজ আপনারাই চিন্তা করুন।

➥{যা বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন হতে প্রকাশিত।}



❏ এই হাদিস দ্বারা বুঝা যায়, রাসূলে পাক (ﷺ) এর রওজা মোবারক যিয়ারত কালে হযরত বেলাল (رضي الله عنه) কেঁদেছেন, রওজা মুখী হয়ে যিয়ারত করেছেন এমনকি রওজা পাকে নিজের চেহারাও ঘষলেন। তাই যিয়ারতকালে কবরের দিকে ফিরে যিয়ারত করা সাহাবীদের তথা হযরত বেলাল (رضي الله عنه) এর সুন্নাত।

 
Top