পর্দা


পর্দা মুসলিম রমনীর সৌন্দর্য। পর্দা নারীর ভূষণ। নারীর মান-সম্মান, ইজ্জত-আবরুর রক্ষাকবচ পর্দা। ‘মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত’ ঘোষণার মাধ্যমে নারী জাতিকে মহামান্বিত করেছে যে ইসলাম, নারীর মহামহিম মর্যাদা রক্ষায় পর্দার অপরিহার্যতাকে অনিবার্য কর্তব্য বলে ঘোষণা করেছে সেই ইসলাম।


ইসলাম পর্দার মাধ্যমে অন্ধকার যুগের অশ্লীলতা ও দেহ প্রদর্শনী প্রথার মূলোচ্ছেদ করেছে এবং পর্দাহীন সমাজে সৃষ্ট যাবতীয় বেলেল্লাপনা ও যৌন অপরাধ প্রবণতা চিরতরে বন্ধ করে দেওয়ার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। যাহেলী যুগের পর্দাহীন নারীর কী দূরাবস্থা ও কী করুণ বিপর্যয় ছিল তার ইতিহাস জানা থাকলে ইসলামে পর্দা প্রথার গুরুত্বও আবশ্যকতা বুঝতে সহজ হবে। আবার এ মুসলমানরাই পর্দা প্রথা নিয়ে একটু বাড়াবাড়ি করে পর্দা প্রথাকে বিতর্কিত করে তুলেছে। অনেক লোক বিভ্রান্তিবশত পর্দার অর্থ বলতে নারীকে অন্ধকার ঘরে বসিয়ে রাখাকে বুঝিয়েছেন, যেখান থেকে নারী যেন কোথাও আসতে বা যেতে না পারে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অনেক ক্ষেত্রে এমন অবস্থা দাঁড়ায় যে, বিয়ের পর মেয়েরা শুধু নিজের পিতৃগৃহ ছাড়া আর কোথাও যাতায়াত করতে পারত না এবং স্বামীর গৃহ থেকেই শেষ বারের মতো তার জানাযা বের হতো। এটাকে তারা তাদের পারিবারিক আভিজাত্যের প্রতীক মনো করতো এবং এটা ছিল তাদের কাছে বিশেষ প্রশংসনীয় বিষয়। এ ধরণের বিদঘুটে অবস্থায় নারী যদি কোনো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হতো তাহলে ডাক্তারকে পর্যন্ত রোগীনীকে দেখার অনুমতি দেওয়া হতো না।


আবার কোন কোন সমাজে কড়াকড়িটা একটু কম ছিল। তাদের মেয়েরা নিকটাত্মীয়দের বাড়ি যাতায়াত করতে পারতো, তবে এই আসা-যাওয়ার অনুমতি ছিল শুধু রাতের বেলায় যেন তার উপর কোন পুরুষের নজর না পড়ে। আর বিত্তশালী পরিবারে মেয়েরা পালকি বা পশুচালিত যানবাহনে যাতায়াত করতো; কিন্তু এসব যানবাহন ও পালকির দরজা-জানালা খুব ভালো করে বন্ধ রাখা হতো। দরজা-জানালা না থাকলে সেক্ষেত্রে পুরো পালকি ও বাহনটিকে কাপড় দিয়ে মুড়ে দেওয়া হতো। এরূপ কঠোর পর্দা ব্যবস্থা দেখে অনেক মুসলিম রমনী পর্দা প্রথাকে ভয়ংকর ও অনেক কঠিন বিধি মনে করে এর বাস্তবায়ন থেকে নিজেকে দূরে সরে রেখেছে। ইসলামের সহজ বিধানকে কঠিন করে তোলা উচিত নয়। আমাদেরকে এ কথাও ভুলে গেলে চলবেনা যে, দ্বীন সহজের জন্য কঠিন করে তোলার জন্য নয়। মহান আল্লাহও মানুষের সাধ্যের বাইরে কোন কাজ কারো উপর আরোপিত করেন না। সুতরাং পর্দা অবলম্বন করা নারীদের জন্য মোটেও কঠিন বিষয় নয়।

 
Top