পর্দা কি প্রগতির অন্তরায়?


ইসলাম নারীকে শুধু পুরুষের সমান মর্যাদা দেয়নি; বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরুষের চাইতেও বেশি মর্যাদা দিয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক সত্য হলো, এক শ্রেণির বুদ্ধিজীবী দাবিদার ইসলামী পর্দাবিধানকে প্রগতির অন্তরায় বলে উপেক্ষা করে।


কথিত প্রগতিবাদিীদের দাবি হলো, নারীরা মাতৃত্বের গুরুদায়িত্ব পালন করবে, মাজিস্ট্রেট হয়ে জেলার শাসনকার্যও পরিচালনা করবে এবং নর্তকি ও গায়িকা হয়েও চিত্তবিনোদন করবে। কী অদ্ভুত খেয়াল! বস্তুত কথিত প্রগতি নারীর ওপর দায়িত্বের এরূপ দুরূহ বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে, যার ফলে সে কোনো কাজই সুষ্ঠুভাবে সমাধা করতে পারছে না।


প্রগতির ঢেঁকিরা নারীকে এমন সব কাজে নিযুক্ত করছে, যা জন্মগতভাবেই নারীর প্রকৃতি বিরুদ্ধ। শুধু তাই নয়, তাকে তার সুখের নীড় থেকে টেনে এনে প্রতিযোগিতার ময়দানে দাঁড় করাচ্ছে, যেখানে পুরুষের মোকাবেলা করা তার পক্ষে কোনোক্রমেই সম্ভব নয়।


এর স্বাভাবিক পরিণতি এই দাঁড়াবে যে, প্রতিযোগিতামূলক কাজে সে পুরুষের পেছনে পড়ে থাকতে বাধ্য হবে। আর যদি কিছু করতে সক্ষম হয় তবে তা নারীত্বের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্যকে বিসর্জন দিয়েই করতে হবে। তথাপি এটাকেই প্রগতি বলে মনে করা হয়। আর এই তথাকথিত প্রগতির মোহেই নারীর ঘর সংসার ও পারিবারিক জীবনের মহান কর্তব্যের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হয়। অথচ এই ঘর সংসার হচ্ছে মানব তৈরি একমাত্র কারখানা। এ কারখানার সাথে জুতা কিংবা পিস্তল তৈরির কারখানার কোনো তুলনাই চলে না। কারণ এ কারখানা পরিচালনার জন্য যে বিশেষ ধরনের গুণাবলি, ব্যক্তিত্ব ও যোগ্যতা আবশ্যক, প্রকৃতি তার বেশির ভাগ শক্তিই দিয়েছেন নারীর ভেতরে। এ কারখানার পরিসর বিস্তৃত। কাজও অনেক।


যদি কেউ পরিপূর্ণ দায়িত্বনুভূতি সহকারে এ কারখানার কাজে আত্মনিয়োগ করে, তার পক্ষে বাইরের দুনিয়ায় নজর দেয়ার আদৌ অবকাশ থাকে না। বস্তুত এ কারখানাকে যতখানি দক্ষতা ও নৈপুণ্যের সাথে পরিচালনা করা হবে, ততখানি উন্নত ধরনের মানুষই তা থেকে বেরিয়ে আসবে।


কাজেই এ কারখানা পরিচালনার উপযোগী শিক্ষা ও ট্রেনিংই নারীর সবচাইতে বেশি প্রয়োজন। আর এ জন্যেই ইসলাম পর্দাপ্রথার ব্যবস্থা করেছে। 


মোটকথা নারী যাতে তার কর্তব্য থেকে বিচ্যুত হয়ে বিপথে চালিত না হয় এবং পুরুষও যাতে নারীর কর্মক্ষেত্রে নিয়মহীনভাবে প্রবেশ করতে না পারে, তাই হচ্ছে পর্দার লক্ষ্য। আজ তথাকথিত প্রগতির মোহে এক শ্রেণির নারীবাদী ব্যক্তি ও সংগঠন ইসলামী পর্দার বিধানকে ধ্বংস করতে উঠে পড়ে লেগেছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, যদি এ উদ্দেশ্যে অটল থাকা যায়, তাহলে এর পরে দুটি পথের একটি অবলম্বন করতে হবে। হয় ইসলামের পারিবারিক ব্যবস্থার সমাধি রচনা করে হিন্দু কিংবা খ্রিস্টানদের মতো নারীকে দাসী ও পদসেবিকা বানিয়ে রাখতে হবে, নতুবা দুনিয়ার সমস্ত মানব তৈরির কারখানা ধ্বংস হয়ে যাতে জুতা কিংবা পিস্তল তৈরির কারখানা বৃদ্ধি পায়, তার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।


এ কথা দৃঢ়তার সাথে বলা যায় যে, ইসলামের প্রদত্ত জীবনবিধান ও সামাজিক শৃঙ্খলাব্যবস্থাকে চুরমার করে দিয়ে নারীর সামাজিক মর্যাদা এবং পারিবারিক ব্যবস্থাকে বিপর্যয়ের কবল থেকে বাঁচিয়ে রাখা কোনোক্রমেই সম্ভব নয়।


প্রগতি বলতে যাই বোঝানো হোক না কেন, কোনো পদক্ষেপ নেয়ার আগে সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন যে, আপনারা কী হারিয়ে কী পেতে চান? প্রগতি আকেটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। এর কোনো নির্দিষ্ট কিংবা সীমাবদ্ধ অর্থ নেই।


মুসলমানরা এককালে বঙ্গোপসাগর থেকে আটলান্টিক মহাসাগর পর্যন্ত বিশাল বিস্তৃত রাজ্যের শাসনকর্তা ছিল। সে যুগে ইতিহাস, দর্শন ও জ্ঞান বিজ্ঞানে তারাই ছিল দুনিয়ার শিক্ষাগুরু। সভ্যতা ও কৃষ্টিতে দুনিয়ার কোনো জাতিই তাদের সমকক্ষ ছিলনা। আপনাদের অভিধানে ইতিহাসের সেই গৌরবোজ্জ্বল যুগকে প্রগতির যুগ বলা হয় কিনা জানি না। তবে সেই যুগকে যদি প্রগতির যুগ বলা যায় তাহলে একথা সুস্পষ্টভাবে বলা যায় যে, পর্দার পবিত্র বিধানকে পুরোপুরি বজায় রেখেই তখনকার মুসলকমানরা এতটা উন্নতি লাভ করতে সমর্থ হয়েছিল।


ইসলামের ইতিহাসে বড় বড় বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক, চিন্তানায়ক, আলেম ও দিগি¦জয়ী বীরের নাম উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। সেসব বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিগণ নিশ্চয় তাদের মুর্খ জননীর ক্রোড়ে লালিতপালিত হননি। শুধু তাই নয়, ইসলামী ইতিহাসের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে আমরা বহু খ্যাতনামা মহিলার নামও দেখতে পাই। সে যুগে তারা জ্ঞান-বিজ্ঞানে দুনিয়ায় অসাধারণ প্রসিদ্ধি অর্জন করেছিলেন। তাঁদের এই উন্নতি ও প্রগতির পথে পর্দা কখনোই প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়নি।


 
Top