মাহর


বিবাহবন্ধন উপলক্ষে স্বামী বাধ্যতামূলক ভাবে স্ত্রীকে নগদ অর্থ, সোনা-রূপা বা স্থাবর সম্পত্তির আকারে যে মাল প্রদান করা হয় তাকে মাহর বলে। অথবা বলা হয় মাহর হলো ঐ সম্পদের নাম যা বিবাহের আকদের ফলে স্ত্রীর যৌনাঙ্গ ব্যবহারের অধিকারের বিনিময়ে স্বামীর উপর ওয়াজিব হয়। তা নির্দ্দিষ্টভাবে উল্লেখ করার মাধ্যমেও হতে পারে কিংবা আকদের ভিত্তিতে সাব্যস্থ হতে পারে। দেন মাহর স্বামীর একটি বাধ্যতামূলক কর্তব্য এবং এটা সম্পূর্ণ স্ত্রীর হক। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

 وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً فَإِنْ طِبْنَلَكُمْ عَنْ شَيْءٍ مِنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَرِيئًا 

আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মাহর দিয়ে দাও সন্তুষ্ট চিত্তে। খুশী মনে তারা মাহরের কিছু অংশ ছেড়ে দিলে তোমরা তা স্বাচ্ছন্দে ভোগ কর। ৮৮

৮৮.সূরা নিসা আয়াত: ৪

 

প্রাক ইসলামী যুগে স্ত্রীদের মাহর আদায়ের ক্ষেত্রে বহু ধরনের তালবাহনা ও অবিচার প্রচলন ছিল । 


এক. স্ত্রীর মাহর তার হতে পৌঁছত না বরং মেয়ের অভিভাবকগণ তা আদায় করে আত্মসাৎ করতো। এ প্রথা উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে-

 وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ 

অর্থাৎ তোমরা স্ত্রীদের মাহর তাদেরকে অর্পণ করো কোন অভিভাবকের হাতে নয়। 


দুই. স্ত্রীর মাহর পরিশোধ করার ক্ষেত্রে নানা প্রকার তিক্ততার সৃষ্টি করা হতো। মাহর পরিশোধ না করার উপায় খুঁজতো। একান্ত পরিশোধ করতে হলে এটাকে জরিমানা মনে করতো এবং সন্তুষ্টচিত্তে তা পরিশোধ করত না। এ অন্যায় রোধ করার উদ্দেশ্যেই বলা হয়েছে نحلة অর্থাৎ তোমরা মাহর খুশি মনে পরিশোধ কর। তিন. অনেক স্বামী স্ত্রীকে প্রহসনমূলক রাজি করিয়ে কিংবা চাপ সৃষ্টি ও নির্যাতন করে মাহর মাপ করিয়ে নিতো এবং স্বামী এভাবে নিজেকে দায়মুক্ত মনে করতো। তা প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে বলা হয়েছে

فَإِنْ طِبْنَ لَكُمْ عَنْ شَيْءٍ مِنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَرِيئًا

অর্থাৎ যদি স্ত্রী স্বতর্ফুত ভাবে নিজের পক্ষ থেকে মাহরের কোনো অংশ ক্ষমা করে দেয়, তবেই তোমরা তা ভোগ করতে পারবে। সুতরাং ইসলাম নারীকেই মাহরের অধিকারী সাব্যস্থ করেছে। এখানে স্বামী কিংবা অভিভাবক কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। মাহর মূলত দেনা স্বরূপ। অনাদায় আবস্থায় স্বামী মারা গেলে তার সম্পত্তি থেকে স্ত্রী তার মাহর উসূল করে নিতে পারবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো বর্তমান মুসলিম সমাজে জাহেলী যুগের ন্যায় মাহর নিয়ে নানা তালবাহানা ও অন্যায় অবিচার পরিলক্ষিত হয়। এই সব বদ অভ্যাস থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। বতমানে আরো একটি পরিত্যাজ্য বিষয় আমাদের অহংকারে পরিনত হয়ে উঠেছে। তা হলো মোটা অংকের বিরাট পরিমাণের মাহর ঘোষনা করা। স্বমীর অবস্থা ভেদে মাহর নির্ধারিত হওয়া উচিত। তার পিতার অবস্থা বিবেচ্য নয়। কারণ এটি পিতার উপর কর্তব্য নয় বরং ছেলের উপর ওয়াজিব। আর আমাদের দেশে তা তৎক্ষণাৎ পরিশোধ করতে হয়না বলে লাগামহীন ভাবে বড় আকারের মাহর নির্ধারণ করা হয়। এটা একপ্রকারের প্রতিযোগিতা ও লৌকিকতায় পরিণত হয়ে গেছে। রাসূলুল্লাহ ’র স্ত্রীদের মাহর সাড়ে বার উকিয়া তথা পাঁচশত দেরহামের বেশী ছিলনা। হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (رضي الله عنه) বলেন-

 أَلَا لَا تُغَالُوا صَدُقَةَ النِّسَاءِ فَإِنَّهَا لَوْ كَانَتْ مَكْرُمَةً فِي الدُّنْيَا وَتَقْوَى عِنْدَ اللهِ لَكَانَ أَوْلَاكُمْ بِهَا نَبِيُّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا عَلِمْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَكَحَ شَيْئًا مِنْ نِسَائِهِ وَلَا أَنْكَحَ شَيْئًا مِنْ بَنَاتِهِ عَلَى أَكْثَرَ مِنَ اثْنَتَيْ عَشْرَةَ أُوقِيَّةً.

সাবধান! তোমরা স্ত্রীদের মাহর বৃদ্ধি করোনা। কেননা তা যদি দুনিয়াতে সম্মানের এবং আখিরাতে আল্লাহর কাছে তাকওয়ার বিষয় হতো তবে তোমাদের অপেক্ষা সেই ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অধিক উপযোগি ছিলেন। কিন্তু তিনি বার উকিয়ার বেশী দিয়ে কোন স্ত্রীকে বিবাহ করেছেন কিংবা তার কোন কন্যাকে বিবাহ দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। ৮৯

৮৯.আহমদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ ও দারেমী, সূত্র মিশকাত, পৃ.২৭৭

 

জান্নাতে রমনীকুলের সর্দার, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অতি আদরের কন্যা হযরত ফাতিমা রা,’র মাহর ছিল ৪৮০ মতান্তরে ৫০০ দিরহাম। 

ইসলামী নীতি অনুসরণ না করে বড় মাপের মাহর ঘোষণা করলে পরিবারে বহুবিদ সমস্যা দেখা দেয়। একদিকে স্ত্রীর সামান্য ব্যতিক্রম দেখলে স্বামী বলে তোমাকে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা মাহর দিয়ে বিয়ে করেছি- এই বলে স্ত্রীকে খোটা দেয়। অপরদিকে স্ত্রী ও স্ত্রীপক্ষ মনে করে বিবাহ ভেঙ্গে গেলেও ভয় নেই, কারণ মাহর উসূল করে ঐ টাকা দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করবো কিংবা বিয়ে দেবো। ফলে বিয়ে খুব বেশী দিন স্থায়ী হয়না। বরং ধীরে ধীরে ফাটল ধরে এবং একসময় তা ভেঙ্গে যায়।

 
Top