বিষয় নং-০৯: ‘আমার সাহাবাগণ আকাশের তারকা তুল্য:


‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৪১২ পৃষ্ঠায় লেখক উক্ত হাদিস প্রসঙ্গে অনেক মনগড়া বক্তব্য প্রদান করে একে জাল বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছেন। তার দৃষ্টিতে এটি নাকি কোনো নির্ভরযোগ্য হাদিসের কিতাবে নেই। তাই সে তার এ নিকৃষ্ট গ্রন্থে লিখেছেন-‘‘প্রকৃত বিষয় হলো, সিহাহ সিত্তা তো দূরের কথা অন্য কোনো প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থে এ হাদীসটি নেই।’’ 


অপরদিকে মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী সম্পাদিত ‘প্রচলিত জাল হাদীস’ গ্রন্থের ৫৯ পৃষ্ঠায়ও অনূরুপ বক্তব্য দিয়েছে। তাদের উভয়ের এ হাদিসকে জাল বলার পিছনে মূল দর্শন হলো আলবানীর ‘সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ’ গ্রন্থের ৫৯ নং হাদিসে একে জাল বলা। সেখানে আলবানী হাদিসটিকে জাল বলেছেন। আহলে হাদিস আলবানী কোন হাদিসকে জাল বললে তাদের আর কারও ব্যাখ্যা দেখার প্ররয়াজন মনে করেন না। মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী নিজেকে হানাফী মাযহাবের অনুসারী দাবী করেও আহলে হাদিস আলবানীর নাম এভাবে উল্লেখ করেন-‘‘ইমাম শারানীর এ মন্তব্যের উপর আল্লামা নাছির উদ্দীন আলবানী অভিযোগ আরোপ করে বলেন যে,....।’’ তাই তাদের মুখোশ উন্মোচনে আমি অধম দীর্ঘ গবেষণা করে এ বিষয়ের জবাব দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করি। মহান রব যেন আমার শ্রমকে কবুল করেন, আমিন। 


প্রথম সূত্র: 


মিশকাত শরীফে বাবে ‘মানাক্বিবে সাহাবা’ অধ্যায়ে রয়েছে, 


سعيد بن المسيب - رحمه الله - أن عمرَ بنَ الخطاب قال: سمعتُ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم- يقول قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ: سَأَلْتُ رَبِّي عَنِ اخْتِلَافِ أَصْحَابِي مِنْ بَعْدِي فَأَوْحَى إِلَيَّ: يَا مُحَمَّدُ إِنَّ أَصْحَابَكَ عِنْدِي بِمَنْزِلَةِ النُّجُومِ فِي السَّمَاءِ بَعْضُهَا أَقْوَى مِنْ بَعْضٍ وَلِكُلٍّ نُورٌ فَمَنْ أَخَذَ بِشَيْءٍ مِمَّا هُمْ عَلَيْهِ مِنِ اخْتِلَافِهِمْ فَهُوَ عِنْدِي عَلَى هُدًى  قَالَ: وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ : أَصْحَابِي كَالنُّجُومِ فَبِأَيِّهِمُ اقْتَدَيْتُمْ اهْتَدَيْتُمْ 


-‘‘হযরত উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, আমি আমার প্রতিপালককে আমার ইন্তেকালের পর আমার সাহাবীদের মধ্যে মতভেদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি ওহীর মাধমে আমাকে জানিয়ে দিলেন যে,  হে মুহাম্মদ (ﷺ)! আমার নিকট তোমার সাহাবীদের মর্যাদা হল আসমানের নক্ষত্র তুল্য। তার একটি আরেকটির তুলনায় অধিক উজ্জ্বল। অথচ প্রত্যেকটির মধ্যেই আলো বিদ্যমান, সুতরাং তাদের মতভেদ হতে যে কোন ব্যক্তি কোন একটি অভিমত গ্রহণ করবে, সে আমার নিকট হেদায়াতের উপরই প্রতিষ্ঠিত। হযরত উমর (رضي الله عنه) বলেন, রাসূল (ﷺ) আরও বলেছেন, আমার সাহাবারা হল তারকা সাদৃশ। অতএব তোমরা তাদের যে কারও অনুসরণ করবে, হেদায়াত লাভ করবে।’’ ৩৮

৩৮. 

ক. ইমাম আবু রাজীন : তাজরীদ ফিল বাইনাস সিহহাহ : ১/২৮০ পৃ.

খ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মেরকাতুল মাফাতীহ : ১১/১৬৩ পৃ: হা/৬০১৮ 

গ. আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সূয়তী : তাখরীযুয আহাদিসুস্ শিফা : পৃষ্ঠা নং- ১৪৮

ঘ. ইমাম ইবনে আছির, জামেউল উসূল, ৮/৫৫৬ পৃ. হা/৬৩৬৯

ঙ. খতিব তিবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ : কিতাবুল মানাকিব : হা/৬০১৮

চ. শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দীস দেহলভী : আশিয়াতুল লুমাআত : ৮/১৪২ পৃ. হা/৬০১৮


পর্যালোচনা:


ইমাম ইবনে কুদামা হাম্বলী (رحمة الله) বলেন- الحديث المعروف -‘‘এ হাদিসটি মা‘রুফ।’’ (আল-মুন্তাখাবু মিন ইলালিল খাল্লাল, ১/১৬ পৃ. হা/৭০) তবে ইমাম যায়লাঈ (رحمة الله) সনদটিকে যঈফ বলেছেন, কারণ সনদে ‘আব্দুর রহিম’ নামে একজন সুপরিচিত যঈফ রাবী রয়েছেন। (যায়লাঈ, তাখরীজু আহাদিসু কাশ্শাফ, ২/২৩২ পৃ.)


দ্বিতীয় সূত্র: 


ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) তার ‘মাদখাল’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন-


الْبَيْهَقِيُّ فِي الْمَدْخَلِ مِنْ حَدِيثِ سُلَيْمَانَ ابن أَبِي كَرِيمَةَ عَنْ جُوَيْبِرٍ عَنِ الضَّحَّاكِ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ؓ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّه ﷺ : مَهْمَا أُوتِيتُمْ مِنْ كِتَابِ اللَّه فَالْعَمَلُ بِهِ لا عُذْرَ لأَحَدٍ فِي تَرْكِهِ، فَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِي كِتَابِ اللَّه فَسُنَّةٌ مِنِّي مَاضِيَةٌ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ سُنَّةً مِنِّي فَمَا قَالَ أَصْحَابِي، إِنَّ أَصْحَابِي بِمَنْزِلَةِ النُّجُومِ فِي السَّمَاءِ، فَأَيُّمَا أَخَذْتُمْ بِهِ اهْتَدَيْتُمْ، وَاخْتِلافُ أَصْحَابِي لَكُمْ رَحْمَةٌ،


-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,  তোমরা কিতাবুল্লাহ হতে যা পেয়েছ,  তার উপর আমল কর। আর তাতে কোন ওজর বা আপত্তি থাকবে না। আর যদি কিতাবুল্লাহ এর মাঝে না পাওয়া যায়,  তাহলে সুন্নাহকে আঁকড়ে ধর। আর যদি আমার সুন্নাহতে না পাওয়া যায় তাহলে আমার সাহাবার কথার উপরে আমল কর, কেননা আমার সাহাবাগণ হলো নক্ষত্রতুল্য। আর তাদের যাকেই অনুসরণ করবে হেদায়েত বা সুপথ পাবে। আর আমার সাহাবাগণের মতবিরোধ তোমাদের জন্য রহমত স্বরূপ।’’৩৯

৩৯.  

(১) ইমাম বায়হাকী : আল মাদখাল : ১/১৬২ পৃ. হা/১৫২

(২) সাখাভী, মাকাসিদুল হাসানা : ৪৬ পৃ. হা/৩৯, 

(৩) মানাবী : ফয়যুল কদীর : ১/২১২পৃ. হাদিস, ২২৮

(৪) আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ১/৭৫পৃ. হা/১৫৩ ও ১/১৫০ পৃ. হা/৩৮১

(৫) ইমাম দায়লামী : মুসনাদিল ফিরদাউস, ১/২২৫ পৃ.

(৬) সুয়ূতি, জামেউস সগীর, ১/১৮ পৃ. হা/২৮৮ 

(৭) আল্লামা মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১/১৯৯ পৃ.হাদিস, ১০০৩

(৮) ইবনে হাজার আসকালানী, তালখিসুল হুবাইর, ৪/৪৬২ পৃ.ক্রমিক.২০৯৮

(৯) সুয়ূতি, জামিউল আহাদিস, ২২/৭৫পৃ, হা/২৪৩৫৫

(১০) দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ৪/১৬০ পৃ. হা/৬৪৯৭

(১১) ইবনে আসাকীর, তারীখে দামেস্ক, ২২/৩৫৯পৃ. হা/২৬৯৫

(১২) জুরকানী, শরহুল মাওয়াহেব, ৭/৪৬৯ পৃ.

(১৩) আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্-দ্বঈফাহ ওয়াল মাওদ্বুআহ, ১/১৩৬ পৃ. হা/৫৯

(৮) ইমাম যুবাইহিদী : ইত্তাহাফুস-সাদাতুল মুত্তাকীন : ১/২০৪ পৃ.


পর্যালোচনা


এ সনদটি নিয়ে ইতোপূর্বে আলোকপাত করা হয়েছে, তাই এখানে দ্বিতীয়বার আলোচনা নিষ্প্রয়োজন।


তৃতীয় সূত্র: 


ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) খাসায়েসুল কোবরায় উলে­খ করেন, 


وَأخرج عبد بن حميد فِي مُسْنده عَن ابْن عمر ؓ أَن النَّبِي ﷺ قَالَ مثل أَصْحَابِي مثل النُّجُوم يَهْتَدِي بهَا فَأَيهمْ أَخَذْتُم بقوله أهتديتم 


-‘‘ইমাম আব্দ বিন হুমায়দ (رحمة الله) তার ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: নিশ্চয় আমার সাহাবীদের উদাহরণ হল আকাশের তারকার মত, যে ব্যক্তি কোনো বিষয়ে তাঁদের কথাকে গ্রহণ করবে তাহলে হেদায়েত পেয়ে যাবে।” ৪০

৪০. 

ক. সুয়ূতি :খাসায়েসুল কুবরা : ২/৪৬৭পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।

খ. আল্লামা ইমাম হুমায়দী : আল মুসনাদ : ২৫০ পৃ. হা/৭৮৩ 

গ. আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ১/৩৯৩ পৃ.

ঘ. ইমাম সুয়ূতি, মানাহিলুস সাফা ফি আহাদিসুস শিফা, ১৯৩ পৃ. হা/১০২৭

ঙ. ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে শিফা, ২/৯২ পৃ.

চ. ইমাম কাযি আয়্যায, শিফা শরীফ, ২/৫৩ পৃ.

ছ. ইবনে হাজার, মাতালিবুল আলিয়া, হাদিস নং ৪১৫৯


এই হাদিস সম্পর্কে ইবনে কুদামা মাকদেসী (رحمة الله) বলেন: لا يصح هذا الحديث -“এই হাদিস সহীহ্ নয়।” 

(আল মুন্তাখাবু মিন ইলালিল খিলাল, ১ম খণ্ড, ১৪৩ পৃ: হাদিস নং ৬৯)


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আমি কিতাবের শুরুতে আলোকপাত করেছি যে, কোনো মুহাদ্দিসের ‘হাদিসটি সহীহ নয়’ বলা বক্তব্য দ্বারা হাদিসটি ‘হাসান বা যঈফ হওয়া বুঝায় জাল নয়।


পর্যালোচনা:


ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) এ হাদিসটির সনদে একজন ‘হামযা নাসেবী’ নামক একজন যঈফ রাবী রয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। (ইবনে হাজার, তালখিসুল হুবাইর, ৪/৪৬৩ পৃ. হা/২০৯৮, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)


চতুর্থ সূত্র: 


এ বিষয়ে তিনি আরেকটি হাদিস সংকলন করেছেন এভাবে 


وَأخرج ابْن أبي عمر فِي مُسْنده عَن أنس عَن النَّبِي ﷺ قَالَ مثل أَصْحَابِي فِي أمتِي مثل النُّجُوم يَهْتَدِي بهَا إِذا غَابَتْ تحيروا


-‘‘ইমাম ইবনে আবি উমর (رحمة الله) তাঁর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه) হতে একটি হাদিস সংকলন করেন তিনি রাসূল (ﷺ) হতে তিনি বলেন, আমার সাহাবিদের তুলনা হলো (আকাশের) তারকার ন্যায় যার দ্বারা হিদায়াত পাওয়া যায়, আর যখন ডুবে যায় পথ খুঁজতে হয়।’’ ৪১

৪১. 

ক. সুয়ূতি : খাসায়েসুল কুবরা : ২/৪৬৭পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।

খ. আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ১/৩৯৩


পর্যালোচনা:


ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) এ হাদিসটির সনদে একজন ‘আব্দুর রহিম ইবনে যায়েদ’ নামক একজন যঈফ রাবী রয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। (ইবনে হাজার, তালখিসুল হুবাইর, ৪/৪৬৩ পৃ. হা/২০৯৮, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)


পঞ্চম সূত্র:


ইমাম ইবনে আব্দুর বার (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-


حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ عُمَرَ قَالَ: نا عَبْدُ بْنُ أَحْمَدَ، ثنا عَلِيُّ بْنُ عُمَرَ، ثنا الْقَاضِي أَحْمَدُ بْنُ كَامِلٍ، ثنا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ رَوْحٍ، ثنا سَلَّامُ بْنُ سُلَيْمٍ، ثنا الْحَارِثُ بْنُ غُصَيْنٍ، عَنِ الْأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي سُفْيَانَ، عَنْ جَابِرٍ ؓ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: أَصْحَابِي كَالنُّجُومِ بِأَيِّهِمُ اقْتَدَيْتُمُ اهْتَدَيْتُمْ


-‘‘হযরত জাবের (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আমার সাহাবারা হল তারকা সাদৃশ। অতএব তোমরা তাদের যে কারও অনুসরণ করবে, হেদায়াত লাভ করবে।’’ (ইমাম ইবনে আব্দুর বার, জামিউল বায়ানুল ইলমি ওয়া ফাদ্বলিহী, ২/৯২৫ পৃ. হা/১৭৬০, ইমাম ইবনে ইরাকী, যায়লুল মিযানুল ই‘তিদাল, ১/৭৩ পৃ. ক্রমিক.২৫৬)


পর্যালোচনা:


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এ হাদিসের সনদে কোন সমস্যা নেই, তবে আহলে হাদিস আলবানী, জুনায়েদ বাবুনগরী দাবী করেছেন যে, ইমাম ইবনে আব্দুল বার (رحمة الله) যেহেতু এটি সংকলন করে বলেছেন-


هَذَا إِسْنَادٌ لَا تَقُومُ بِهِ حُجَّةٌ؛ لِأَنَّ الْحَارِثَ بْنَ غُصَيْنٍ مَجْهُولٌ


-‘‘হাদিসটির সনদ এমন যে এর দ্বারা হুজ্জাত সাব্যস্ত করা সম্ভব নয়, কেননা সনদে ‘হারেস ইবনে গুছায়ন’ অজ্ঞাত রাবী।’’ (ইমাম ইবনে আব্দুর বার, জামিউল বায়ানুল ইলমি ওয়া ফাদ্বলিহী, ২/৯২৫ পৃ. হা/১৭৬০, ইমাম ইবনে ইরাকী, যায়লুল মিযানুল ই‘তিদাল, ১/৭৩ পৃ. ক্রমিক.২৫৬)


বাস্তবতা:


অনেকেই একজনের এ অভিমত দেখে হাদিসকে যঈফ বলে প্রমাণ করার অপচেষ্টা চালান, অথচ উক্ত রাবী সিকাহ এবং পরিচিত। 


আমি বলি বাস্তবতার আলোকে গবেষণা করে দেখি যে, তিনি মাজহুল বা অপরিচিত নয়। ইমাম ইবনে আবদুল বার (رحمة الله) এমনটি উল্লেখ করলেও অনেকে ইমাম তাকে সিকাহ এবং পরিচয় তুলে ধরেছেন। কিন্তু আহলে হাদিস আলবানী এই সুযোগ বুঝে এই হাদিসকে জাল বলে আখ্যায়িত করেছেন।” ৪২

৪২. আলবানী, সিলসিলাতুল---দ্বঈফাহ, ১/১৪৪ পৃ. হা/৫৮


আমি বলি ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-


عن الأعمش. وعنه سلام بن سليم. قال ابن عبد البر في كتاب العلم: مجهول.... روى عن جعفر الصادق ....وذكره ابنُ حِبَّان في الثقات وقال: روى عنه حسين بن علي الجعفي.


-‘‘তিনি তাবেয়ী আ‘মাশ (رحمة الله) থেকে হাদিস শুনেছেন, তাঁর থেকে সাল্লাম বিন সুলাইম হাদিস বর্ণনা করতেন, ইমাম ইবনুল বার (رحمة الله) তার কিতাবুল ইলম গ্রন্থে বলেন, তিনি মজহুল। ....তিনি ইমাম জাফর সাদেক (رحمة الله) থেকে হাদিস শুনেছেন। ....আর ইমাম ইবনে হিব্বান তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় তাকে স্থান দিয়েছেন। এবং আরও বলেছেন, তাঁর থেকে হুসাইন ইবনে আলী জু‘ফী (رحمة الله) হাদিস বর্ণনা করেছেন।”৪৩

৪৩. ইমাম ইবনে হিব্বান, কিতাবুস-সিকাত, ৮/১৮১ পৃ., ক্রমিক: ১২৮৬৭; আলবানী, সিলসিলাতুল...দ্বঈফাহ, ১/১৪৫ পৃ. হা/৫৮; ইবনে হাজার, লিসানুল মিযান, ২/৫২৪ পৃ. ক্রমিক: ২০৫২


উসূলে হাদিসের দাবী হল একজন মুহাদ্দিস যদি দুই বা দুইয়ের অধিক সিকাহ রাবী হতে হাদিস বর্ণনা করেন এবং তাঁর থেকে পরিচিত দুইজন মুহাদ্দিস যদি হাদিস গ্রহণ করেন তাহলে তাকে মজহুল বলা যাবে না। আর ইমাম ইবনে হিব্বানতো তাকে সিকাহই বলেছেন। 


ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তাঁর জীবনীতে উল্লেখ করেছেন-


عَنْ: عَطَاءِ بْنِ السَّائِبِ، وَمَنْصُورٍ، وَحُصَيْنٍ.

وَعَنْهُ: شِهَابُ بْنُ خِرَاشٍ، وَحُسَيْنُ الْجُعْفيُّ، وَيَعْلَى بْنُ عُبَيْدٍ، وَمُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ الْمَدَائِنِيُّ.


-‘‘তিনি বিখ্যাত তাবেয়ী আতা ইবনে সায়িব, মানছুর, হুছাইন (رحمة الله) থেকে হাদিস শুনেছেন। তার থেকে শিহাব ইবনু র্খারাস, হুসাইন জু‘ফী, ই‘য়ালা ইবনু উবায়দ, মুহাম্মদ ইবনু জা‘ফর মাদায়ীনী হাদিস বর্ণনা করেছেন।’’৪৪

৪৪. ইমাম যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৪/৩২৪ পৃ. ক্রমিক: ৫৪


ইমাম দারাকুতনী (رحمة الله) আরও অনেক তাঁর উস্তাদ ও ছাত্রের তালিকা পেশ করেছেন।  ৪৫

৪৫. ইমাম দারাকুতনী, মুয়াতালাফ ওয়াল মুখতালাফ, ৪/১৭৭৮ পৃ.


তাই বুঝতে পারলাম যে, ইমাম ইবনুল বার (رحمة الله) এর কথার কোন ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এই সনদের রাবী সুপরিচিত এবং সিকাহ রাবী। ইমাম খতিবে বাগদাদী (رحمة الله) তার এক গ্রন্থে উক্ত রাবীর গ্রহণযোগ্যতা এবং তার উস্তাদ এবং শিষ্যদের তালিকা প্রকাশ করেছেন।” ৪৬

৪৬. খতিবে বাগদাদী, তালখিছুল মুতাশাবাহ, ২/৭৩৩ পৃ. 


এমনকি ইমাম বুখারী (رحمة الله) তাকে মাজহুল না বলে তার পরিচয় তুলে ধরেছেন।  ৪৭

৪৭. ইমাম বুখারী, তারিখুুল কাবীর, ২/২৭৮ পৃ. ক্রমিক: ২৪৫৮


ইমাম যাহাবী (رحمة الله)  তার পৃথিবী বিখ্যাত গ্রন্থে তার বিস্তারিত পরিচয় তুলে ধরেছেন।  ৪৮

৪৮. যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৪/৩২৪ পৃ. ক্রমিক: ৫৪


এমনকি ইমাম ইবনে হাজার (رحمة الله) ও তাকে সিকাহ হিসেবে আলোচনা করেছেন।  ৪৯

৪৯. ইবনে হাজার, লিসানুল মিযান, ২/৫২৫ পৃ. ক্রমিক: ২০৫২, তাক্বরিবুত-তাহযিব,


আহলে হাদিস আলবানী আরও দাবী করেছেন যে, এই সনদের আরেক রাবী সাল্লাম বিন সুলাইমকে বাতিল রাবী। তিনি লিখেছেন-


سلام بن سليمان يروي الأحاديث الموضوعة وهذا منها بلا شك


-“সালাম বিন সুলাইমান যে জাল হাদিস বর্ণনা করতেন, আর আমার মনে হয় এটিও তিনি বানিয়েছেন।” ৫০

৫০. আলবানী, সিলসিলাতুল...দ্বঈফাহ, ১/১৪৫ পৃ. হা/৫৮


পাঠকবর্গ! সে যে কতবড় দাজ্জাল তা অনুধাবন করুন। ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় তাকে স্থান দিয়েছেন। ৫১

৫১. ইমাম ইবনে হিব্বান, কিতাবুস-সিকাত, ৬/৪১৬ পৃ. ক্রমিক: ৮৩৬৪, আল্লামা মুগলতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ৬/১৭৭ পৃ. ক্রমিক: ২৩০৮


ইমাম যাহাবী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-


قَالَ يَحْيَى بْنُ مَعِينٍ: لا بَأْسَ بِهِ. وَقَالَ أَبُو حَاتِمٍ: صَدُوقٌ.


-‘‘ইমাম ইবনে মাঈন  বলেন, তার হাদিস গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই। ইমাম আবু হাতেম বলেন, তিনি সত্যবাদী।’’  ৫২

৫২. ইমাম যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৪/৬৬৭পৃ. ক্রমিক. ১১০


ইমাম মিয্যী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-


وَقَال النَّسَائي فِي الكنى: أخبرنا العباس بْن الْوَلِيد، قال: حَدَّثَنَا سلام بْن سُلَيْمان، ثقة


-‘‘ইমাম নাসাঈ (رحمة الله) তার কুনী গ্রন্থে লিখেন, আমাকে আব্বাস ইবনুল ওয়ালীদ বলেন, সাল্লাম ইবনু সুলাইমান সিকাহ।’’   ৫৩

৫৩. ইমাম মিয্যী, তাহযিবুল কামাল, ১২/২৮৭পৃ. ক্রমিক. ২৬৫৬


৬ষ্ঠ সূত্র: 


ইমাম ইবনে সালেহ শামী (رحمة الله) সংকলন করেন-


وروى الطبراني وابن ماجة عن حذيفة- رضي الله تعالى عنه- قال: أصحابي كالنجوم بأيهم اقتديتم اهتديتم


-‘‘ইমাম তাবরানী (رحمة الله) এবং ইমাম ইবনে মাযাহ (رحمة الله) হযরত হুযায়ফা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আমার সাহাবারা হল তারকা সাদৃশ। অতএব তোমরা তাদের যে কারও অনুসরণ করবে, হেদায়াত লাভ করবে।’’ (ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১১/৪৪৮ পৃ.)


সপ্তম সূত্র:


ইমাম যায়লাঈ (رحمة الله) সংকলন করেন-


أخرجه من حَدِيث أبي زرْعَة حَدثنَا إِبْرَاهِيم بن مُوسَى حَدثنَا حَدثنَا يزِيد بن هَارُون عَن جُوَيْبِر عَن جَوَاب بن عبيد الله قَالَ قَالَ رَسُول صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم َ :إِن مثل أَصْحَابِي كَمثل النُّجُوم فِي السَّمَاء من أَخذ بِنَجْم مِنْهَا اهْتَدَى وَبِأَيِّ قَول أَصْحَابِي أَخَذْتُم فقد اهْتَدَيْتُمْ


-‘‘হযরত জাওয়াব ইবনে উবাইদুল্লাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আমার সাহাবীগণের দৃষ্টান্ত হলো আকাশের তারকার ন্যায়, তোমরা তাদের যে কাউকে অনুসরণ করবে হেদায়াত পাবে, এমনকি আমার কোনো সাহাবীর বক্তব্যের কেউ আমল করলেও সে হিদায়াত পাবে।’’ (যায়লাঈ, তাখরীজু আহাদিসিল কাশ্শাফ, ২/২২৯ পৃ.)


অষ্টম সূত্র: 


ইমাম যায়লাঈ (رحمة الله) সংকলন করেন-


أما حَدِيث جَاءَ فَرَوَاهُ الدَّارَقُطْنِيّ فِي كِتَابه الْمُسَمَّى بِغَرَائِب مَالك فَقَالَ حَدثنَا إِسْمَاعِيل بن يَحْيَى الْعَبْسِي حَدثنَا الْحسن بن مهْدي بن عَبدة الْمروزِي حَدثنَا أَبُو الْحسن مُحَمَّد بن أَحْمد السكرِي حَدثنَا أَبُو يَحْيَى بكر بن عِيسَى الْمروزِي حَدثنَا جميل بن يزِيد عَن مَالك بن أنس عَن جَعْفَر بن مُحَمَّد عَن أَبِيه عَن جَابر قَالَ قَالَ رَسُول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم َ (مَا وجدْتُم فِي كتاب الله فَالْعَمَل بِهِ لَا يَسَعكُمْ تَركهَا إِلَى غَيره وَمَا لم تَجِدُوهُ فِي كتاب الله وَكَانَت مني سنة فَالْعَمَل بهَا لَا يَسَعكُمْ تَركهَا إِلَى غَيرهَا وَمَا لم تُؤْتوا بِهِ فِي كتاب الله وَلم تكن فِي سنة فَإلَى أَصْحَابِي فَبِأَي قَول أَصْحَابِي أَخَذْتُم اهْتَدَيْتُمْ إِنَّمَا مثل أَصْحَابِي مثل النُّجُوم من أَخذ بِنَجْم مِنْهَا اهْتَدَى


-‘‘হযরত জাবের (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,  তোমরা কিতাবুল্লাহ হতে যা পেয়েছ, তার উপর আমল কর। আর তাতে কোন ওজর বা আপত্তি থাকবে না। আর যদি কিতাবুল্লাহ এর মাঝে না পাওয়া যায়,  তাহলে সুন্নাহকে আঁকড়ে ধর। আর যদি আমার সুন্নাহতে না পাওয়া যায় তাহলে আমার সাহাবার কথার উপরে আমল কর, তোমরা আমার কোনো সাহাবীর কথার উপর আমল করলে হেদায়ত পাবে, কেননা আমার সাহাবাগণ হলো নক্ষত্রতুল্য। আর তাদের যাকেই অনুসরণ করবে হেদায়েত বা সুপথ পাবে।’’ (যায়লাঈ, তাখরীজু আহাদিসিল কাশ্শাফ, ২/২২৯ পৃ.)


নবম সূত্র:


ইমাম যায়লাঈ (رحمة الله) সংকলন করেন-


فَرَوَاهُ الْقُضَاعِي فِي مُسْند الشهَاب أَنا أَبُو الْفَتْح بن مَنْصُور بن عَلّي الأنماظي حَدثنَا أَبُو مُحَمَّد الْحسن بن رَشِيق حَدثنَا مُحَمَّد بن جَعْفَر بن مُحَمَّد حَدثنَا جَعْفَر بن عبد الْوَاحِد الْهَاشِمِي أَنا وهب بن جرير بن حَازِم عَن أَبِيه عَن الْأَعْمَش عَن أبي صَالح عَن أبي هُرَيْرَة عَن النَّبِي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم َ قَالَ مثل أَصْحَابِي مثل النُّجُوم من اقْتَدَى بِشَيْء مِنْهَا اهْتَدَى


-‘‘হযরত আবূ হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি নাবী করিম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, আমার সাহাবীগণের দৃষ্টান্ত হল আকাশের তারকার ন্যায়, যে কোন বিষয়ে তাদের অনুসরণ করবে হেদায়েতের রাস্তা পেয়ে যাবে।” (মুসনাদে শিহাব, ২য় খণ্ড, ২৭৫ পৃ:; তাখরিজু আহাদিসুল কাশ্শাফ, ২য় খণ্ড, ২৩১ পৃ:)


এই হাদিসের রাবী جَعْفَرٌ بْن عَبْد الْوَاحِد ‘জাফর ইবনে আব্দুল ওয়াহেদ’ সম্পর্কে কেউ কেউ সমালোচনা করলেও ইমাম মুগলতাঈ (رحمة الله) বলেছেন: وكان ثقة -“সে বিশ্বস্ত।” (ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৯৯৬)


الْحَسَنُ بْنُ رَشِيقٍ ‘হাসান ইবনে রাশিক’ সম্পর্কে ইমাম যাহাবী (رحمة الله) বলেন: وثقه جماعة. -“একদল ইমাম তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন।” 

(ইমাম যাহাবী: মিযানুল ই‘তিদাল, রাবী নং ১৮৪৭)


‘মুহাম্মদ ইবনে জাফর ইবনে মুহাম্মদ’ সর্বসম্মতিক্রমে বিশ্বস্ত রাবী। এছাড়া বাকী সকল রাবীগণ বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য। অতএব, এই হাদিসের সর্বনিম্ন স্তর হবে ‘হাসান’। (যায়লাঈ, তাখরীজু আহাদিসিল কাশ্শাফ, ২/২৩১ পৃ.) 

তিনি বলেন, এ সনদটি যঈফ। কেননা সনদে জাফর ইবনে আব্দুল ওয়াহিদ সুপরিচিত যঈফ রাবী।


দশম সূত্র: 


ইমাম ইবনে বাত্তা আল আকবারী (رحمة الله) {ওফাত ৩৮৭ হিজরী} তদীয় কিতাবে উল্লেখ করেন,


وَحَدَّثَنِي أَبُو يُوسُفَ يَعْقُوبُ بْنُ يُوسُفَ قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو يَحْيَى زَكَرِيَّا بْنُ يَحْيَى السَّاجِيُّ قَالَ: حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْحَاقَ الْأَنْوَارِيُّ قَالَ: حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ يُونُسَ قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو شِهَابٍ عَنْ حَمْزَةَ بْنِ أَبِي حَمْزَةَ عَنْ عَمْرِو بْنِ دِينَارٍ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّمَا أَصْحَابِي كَالنُّجُومِ فَبِأَيِّهِمُ اقْتَدَيْتُمُ اهْتَدَيْتُمْ


-“হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন, আমার সাহাবীগণ আকাশের তারকার মত, তাঁদের যে কাউকে অনুসরণ করলে হেদায়াতের রাস্তা পেয়ে যাবে।” (ইমাম ইবনে বাত্তা: ইবানাতুল কুবরা, ২য় খণ্ড, ৫৬৪ পৃ: হাদিস নং ৭০২)


একাদশ সূত্র: 


ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-


وَقَالَ الْبَيْهَقِيُّ فِي الِاعْتِقَادِ عَقِبَ حَدِيثِ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ الَّذِي أَخْرَجَهُ مُسْلِمٌ بِلَفْظِ: النُّجُومُ أَمَنَةُ أَهْلِ السَّمَاءِ، فَإِذَا ذَهَبَتْ النُّجُومُ أُتِيَ أَهْلُ السَّمَاءِ مَا يُوعَدُونَ، وَأَصْحَابِي أَمَنَةٌ لِأُمَّتِي، فَإِذَا ذَهَبَ أَصْحَابِي أُتِيَ أُمَّتِي مَا يُوعَدُونَ


-‘‘ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) তার ই‘তিকাদ গ্রন্থে সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হযরত আবূ মূসা আশ‘আরী (رضي الله عنه)-এর হাদিসটি শক্তিশালী করে, যেমন বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, নক্ষক্রগুলো আসমানের জন্য নিরাপত্তা স্বরূপ। যখন এসব নক্ষত্র বিধ্বস্ত হয়ে যাবে, তখন আসমানে তাই সংঘটিত হবে যার প্রতিশ্রুতি পূর্বেই দেওয়া হয়েছে (অর্থাৎ ধ্বংস হয়ে যাবে) আর আমি হলাম আমার সাহাবীদের জন্য নিরাপত্তা স্বরূপ সুতরাং আমি যখন চলে যাব, তখন আমার সাহাবীদের মধ্যে তাই সংঘটিত হবে, যার প্রতিশ্রুতি পূর্বে দেওয়া হয়েছে।’’ (ইবনে হাজার, তালখিসুল হুবাইর, ৪/৪৬৩ পৃ. হা/২০৯৮, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)


এ হাদিসটি সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। (ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ৪/১৯৬১ পৃ. হা/২৫৩১)


মুহাদ্দিসগণের অভিমত:


১. এই হাদিস সম্পর্কে আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) উল্লেখ করেন:


وَقَدْ ذَكَرَهُ ابْنُ حَجَرٍ الْعَسْقَلَانِيُّ فِي تَخْرِيجِ أَحَادِيثِ الرَّافِعِيِّ فِي بَابِ أَدَبِ الْقَضَاءِ، وَأَطَالَ الْكَلَامَ عَلَيْهِ، وَذَكَرَ أَنَّهُ ضَعِيفٌ وَاهٍ،ৃ لَكِنْ ذُكِرَ عَنِ الْبَيْهَقِيِّ أَنَّهُ قَالَ: إِنَّ حَدِيثَ مُسْلِمٍ يُؤَدِّي بَعْضُ مَعْنَاهُ يَعْنِي قَوْلَهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ النُّجُومُ أَمَنَةٌ لِلسَّمَاءِ الْحَدِيثَ. قَالَ ابْنُ حَجَرٍ: صَدَقَ الْبَيْهَقِيُّ هُوَ يُؤَدِّي صِحَّةَ التَّشْبِيهِ لِلصَّحَابَةِ بِالنُّجُومِ   


-“হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) তাঁর ‘তাখরিজু আহাদিসুর রাফেয়ী’ গ্রন্থের ‘আদাবুল ক্বাদ্বা অধ্যায়ে ইহা উল্লেখ করেছেন এবং এর উপর অনেক লম্বা আলোচনা করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, এই হাদিস দুর্বল। কিন্তু তিনি ইমাম বায়হাক্বী (رحمة الله) থেকে উল্লেখ করেন যে, ইমাম বায়হাক্বী (رحمة الله) বলেছেন: নিশ্চয় মুসলীমের হাদিস ইহার অর্থকে সমর্থন করে, অর্থাৎ রাসূল (ﷺ) এর বাণী: তারকা সমূহ আকাশের আমানত। ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেন: ইমাম বায়হাক্বী (رحمة الله) সত্য বলেছে যে, সাহাবীরা আকাশের তারকার মত ইহার সত্যতা এই হাদিস আদায় করে।” (ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ১১তম খণ্ড, ১৬৩ পৃ.) 


২. বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর “ইযাহুল বয়ান ফী তাফসীরুল কুরআন” এর ৭/৩১৭ পৃ. উক্ত হাদিস প্রসঙ্গে বলা হয়েছে,


و يكفي ذلك الحديث المشهور-


-‘‘উক্ত হাদিসটির জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে,  হাদিসটি মাশহুর পর্যায়ের।’’


৩. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন-


قَالَ مِيرَكُ: الرِّوَايَةُ الْمَشْهُورَةُ


-‘‘এ বর্ণনাটি মাশহুর পর্যায়ের।’’ (জামেউল ওসায়েল শরহে শামায়েল, ২/১৪১ পৃ.)


৪. আল্লামা যায়লাঈ (رحمة الله) লিখেন-


قَالَ الْبَيْهَقِيّ هَذَا حَدِيث مَشْهُور


-‘‘ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) বলেন, এ হাদিসটি মশহুর পর্যায়ের।’’ (যায়লাঈ, তাখরীজু আহাদিসিল কাশ্শাফ, ২/২২৯ পৃ.) 


উপরের আলোচনা থেকে প্রমাণিত হল হাদিসটি মুতাওয়াতিরের নিকটবর্তী, তবে যদিও কেউ কেউ একে মশহুর বলেছেন, তাই এ পর্যায়ের হাদিসকে অস্বীকার করা গোমরাহী ছাড়া কিছু নয়।

 
Top