বিষয় নং-০৭: ‘যখন সালেহীনদের যিকির করা হয় তখন রহমত বর্ষণ হয়:


উক্ত হাদিসটি সমাজে বহুল প্রচলিত রয়েছে। এটা হাদিস কিনা তা নিয়ে কয়েকটি মতামত পাওয়া যায়।


প্রথম মতামত: ইমাম খতিবে বাগদাদী (رحمة الله) ও আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله)সহ আরও অনেকের মতে-


حَدِيثُ عِنْدَ ذِكْرِ الصَّالِحِينَ تَنْزِلُ الرَّحْمَةُ مِنْ قَوْلِ سُفْيَانَ بْنِ عُيَيْنَةَ


-‘‘যখন সালেহীনদের যিকির করা হয় তখন রহমত বর্ষণ হয়’ এটি তাবেয়ী ইমাম সুফিয়ান বিন উয়াইনা (رحمة الله)-এর বাণী।’’ (ইমাম খতিবে বাগদাদী, তারিখে বাগদাদ, ৪/৪০৬ পৃ. ক্রমিক.১৬০৫, আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী,  আল-মাসনূ, ১২৫ পৃ. হা/২০১, আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/৬৫ পৃ. হা/১৭৭০) 

এটি মাকতু হিসেবে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত।


সনদসহ ইমাম সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা (رحمة الله) এর কওলটি ইমাম আহমদ (رحمة الله) এভাবে উল্লেখ করেছেন, 


وَقَالَ حَدَّثَنِي أَبِي قَالَ قَالَ سُفْيَانُ: كَانَ يُقَالُ عِنْدَ ذِكْرِ الصَّالِحِينَ تَنْزِلُ الرحمة


-“ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ  বলেন, আমার কাছে আমার পিতা ইমাম আহমদ (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন, তিনি, হযরত সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা (رحمة الله) বলেছেন, নেক বান্দাগণের আলোচনার সময় রহমত নাজিল হয়।”(ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল: আয যুহদ, ১ম খণ্ড, ২৬৪ পৃ:)


দ্বিতীয়ত: কোনো মুহাদ্দিসের অভিমত হলো এটি প্রিয় নবীজীর হাদিস। যেমন মুহাদ্দিসগণ বলেন-


قَالَ ابْنُ الصَّلَاحِ فِي عُلُومِ الْحَدِيثِ رَوَيْنَا عَنْ أَبِي عُمَرَو إِسْمَاعِيلَ بْنِ نُجَيْدٍ أَنَّهُ سَأَلَ أَبَا جَعْفَرٍ أَحْمَدَ ابْن حَمْدَانَ وَكَانَا عَبْدَيْنِ صَالِحَيْنِ فَقَالَ لَهُ بَأَيِّ نِيَّةٍ أَكْتُبُ الْحَدِيثَ قَالَ أَلَسْتُمْ تَرَوْنَ أَنَّ عِنْدَ ذِكْرِ الصَّالِحِينَ تَنْزِلُ الرَّحْمَةُ فَقَالَ نَعَمْ قَالَ فَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأْسُ الصَّالِحِينَ


-“আল্লামা ইবনে ছিলাহ তাঁর উলুমুল হাদিসে বলেন: আমাদেরকে এই হাদিস বর্ণনা করেছেন হযরত আবু আমর ইসমাইল ইবনে মাজিদ। নিশ্চয় তিনি আবু জাফর ইবনে হামদান (رحمة الله) এর কাছে সফর করেছিলেন, আর তাঁরা সকলেই ছিলেন নেক বান্দাহগণের অন্তর্ভূক্ত। তিনি ইবনে হামদান (رحمة الله) কে জিজ্ঞাসা করলেন, কোন নিয়তে আপনি ইহা হাদিস লিখেন? তখন তিনি বললেন, আপনারা কি দেখেন না যে নেক বান্দাহগণের যিকিরের সময় রহমত নাযিল হয়? তিনি বললেন: হ্যাঁ। ফলে তিনি বললেন: আল্লাহর রাসূল (ﷺ) হলেন সালেহীনগণের সরদার।” (ইমাম আজলুনী: কাশফুল খাফা, ২য় খণ্ড, ৬৫ পৃ:; ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: আসরারুল মারফুয়া, হাদিস নং ৩০৬; ইমাম সাখাবী: মাকাসিদুল হাসানাহ, হাদিস নং ৭২০)।


ইমাম শামছুদ্দিন সাখাবী (رحمة الله) উল্লেখ করেন,


قلت: وسأل أبو عمرو بن نجيد أبا جعفر بن حمدان وهما صالحان: بأي نية أكتب الحديث؟ فقال: ألستم ترون أن عند ذكر الصالحين تنزل الرحمة؟ قال: نعم، قال: فرسول اللَّه صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رأس الصالحين.


-“আমি (সাখাবী) বলি, আবু আমর ইবনে নাজিদ ও আবা জাফর ইবনে হামদান (رحمة الله) কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তারা দুই জনেই নেক বান্দাহ ছিলেন। আপনারা কোন নিয়তে ইহাকে হাদিস লিখেন ? তারা বললেন, আপনারা কি দেখেন না যে নেক বান্দাহগণের যিকিরের সময় রহমত নাযিল হয়? তিনি বললেন: হ্যাঁ। ফলে তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) হলেন সালেহীনগণের সরদার।” 

(ইমাম সাখাবী, মাকাসিদুল হাসানাহ, হা/৭২০, মোল্লা আলী ক্বারী, আসরারুল মারফুআ, ২৪৯ পৃ. হা/৩০৬) 


আল্লামা আজলূনী (رحمة الله) আরও বলেন-


وقال الزمخشري في خطبه رسالة في فضائل العشرة: ورد في صحيح الآثار المسندة عن العلماء الكبار أن رسول الله ﷺ قال: عِنْدَ ذِكْرِ الصَّالِحِينَ تَنْزِلُ الرَّحْمَةُ. انتهى، والله أعلم.


আল্লামা যামাখশারী  তার খুতবাতে “রেসালায়ে ফাযাইলি আশারা” নামক গ্রন্থে লিখেন, বড় বড় আলিম থেকে সহীহ্ সূত্রে আছার বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, নেক বান্দাগণের আলোচনার সময় রহমত নাযিল হয়।’’ ৩৬

৩৬. আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/৬৫ পৃ. হা/১৭৭০


দেখুন, আল্লামা যামাখশারী তিনি অধিকাংশ আলেমের নিকটই গ্রহণযোগ্য তাফসীরকারক ও মুহাদ্দিস ছিলেন এমনকি আল্লামা আজলূনী ও তার রায় বা মতামত গ্রহণ করেছেন আমাদের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। তাই প্রমাণিত হয়ে গেল এটি রাসূল (ﷺ) এর হাদিসও।


আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله), আল্লামা আজলূনী (رحمة الله) ও ইমাম সাখাবী (رحمة الله) তদীয় কিতাবে লিখেন, আল্লামা জামাখশারী  বলেন:

أَنَّهُ حَدِيثٌ وَلَهُ أَصْلٌ 

-“নিশ্চয় ইহা হাদিস এবং এর ভিত্তি রয়েছে।” 

(ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী, আসরারুল মারফুআ, ২৪৯ পৃ., হা/৩০৬; আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/৬৫ পৃ. হা/১৭৭০)


তৃতীয় বর্ণনা: ইহা আরেকটি সূত্রে মুহাম্মদ ইবনে নাদ্বর আল হারেসী (رحمة الله) থেকেও বর্ণিত আছে,


أخبرنا عبيد الله بن محمد بن أحمد ، قال : ثنا جعفر بن محمد بن نصير ، قال : ثنا أحمد بن محمد بن مسروق ، قال : ثنا محمد بن الحسين البرجلاني ، قال : سمعت الحسن بن الربيع ، قال : سمعت ابن المبارك ، بالمصيصة وذكر علي بن الفضيل ، فجعل يذكر مناقبه ، قال : فسأله رجل عن حديث ، فقال : دعنا فإن محمد بن النضر الحارثي كان يقول : عند ذكر الصالحين تنزل الرحمة


-“নিশ্চয় হযরত মুহাম্মদ ইবনে নাদ্বর আল হারেছী (رحمة الله) বলেছেন: নেক বান্দাহগণের আলোচনার সময় রহমত নাযিল হয়।” (শরহে উসুল এ’তেকাদ আহলু সুন্নাহ ওয়াল জামাত, রেওয়াত নং ২৩৭৩)


মুহাম্মদ ইবনে নাদ্বর আল হারেছী (رحمة الله) {ওফাত ১৪১-১৫০ হি.} সম্পর্কে ইমাম যাহাবী (رحمة الله) বলেছেন:- مِنْ أَوْلِيَاءِ اللَّهِ تَعَالَى إِنْ شَاءَ اللَّهُ، 

-“আল্লাহ চাহেতু তিনি আল্লাহর একজন ওলী।” (ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, ৩য় খণ্ড, ৯৭৫ পৃ:)

 
Top