শবে বরাত অর্থ, পরিচয় ও নামকরণ
আরবী ‘শাবান’ (شعبان) শব্দটি একবচন, এর বহুবচন হল ‘শা’বানাত (شعبانات) ও শা’আ-বীন (شعابين), শা’বানিয়্যীন। আর শা’বানিয়্যীন অর্থ: বিক্ষিপ্ততা ছড়ানো ও শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট হওয়া। ইমাম রাফে (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হযরত আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর উক্তি উপস্থাপন করে বলেন, হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে, এ মাসের নাম ‘শাবান’ এ জন্য রাখা হয়েছে যে, এ মাসে রোযা পালনকারীর সাওয়াব, মঙ্গল ও সৌন্দর্য শাখা-প্রশাখার ন্যায় বিস্তার লাভ করে, যাতে রোযাদার জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে।

আরবী ১২ মাসের ৮ম মাস শাবান। শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্রটি পবিত্র কোরআনের ভাষায়- “লাইলাতুম মুবারাকা” বা বরকতময় রজনী, আর হাদীস শরীফের ভাষায়- “লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান” বা শাবানের মধ্য রজনী। তাফসীরের ভাষায়- “লাইলাতুছ্ ছাক” বা সনদপ্রাপ্তির রাত্রি, “লাইলাতুন নাজাহ” তথা মুক্তি রজনী। আর আমাদের উপমহাদেশে যাকে “শবে বরাত” বলে আমরা জানি যা ফারসী ভাষা থেকে উদ্ভূত। শব অর্থ: রাত এবং বরাত: অর্থ ভাগ্য, পবিত্রতা, নাজাত, মুক্তি, ত্রাণ ইত্যাদি। এছাড়াও এর আরো অনেক নাম রয়েছে।
পবিত্র কোরআন ও প্রসিদ্ধ তাফসীরের আলোকে শবে বরাত
আল্লাহ এরশাদ করেন,
حم-والكتاب المبين- إنا أنزلناه فى ليلة مباركةإنا كنا منذرين- فيها يفرق كل أمر حكيم–
অর্থ: হা-মীম, এ স্পষ্ট কিতাবের শপথ! নিশ্চয়ই আমি তা বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে বন্টন করে দেওয়া হয় প্রত্যেক হিকমতের কাজ। (সূরা দুখান, আয়াত নং ১-৪)

এ আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে বিশ্ব বরেণ্য মুফাস্সিরগণের মতামতঃ
১.মালেকী মাযহাবের আল্লামা শেখ আহমদ ছাভী বলেন,
(قوله ليلة النصف من شعبان) هو قول عكرمة وطائفة ووجه بامور منها ان ليلة النصف من شعبان لها اربعة اسماء اليلة المباركة وليلة البرأة وليلة الرحمة وليلة الصك ومنها فضل العبادة فيها –
অর্থ : ঐ বরকতময় রজনী হচ্ছে অর্ধ শাবানের রাত্রি (মোফাসসিরীনে কেরামের অন্যতম মোফাসসির) বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত ইকরামা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)ও অন্যান্য তাফসীরকারকদের একদলের অভিমত। তারা এর কয়েকটি কারণও উল্লেখ করেছেন। শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত্রির চারটি নামে নামকরণ করেছেন। যেমন- ১। লাইলাতুম মুবারাকাহ- বরকতময় রজনী। ২। লাইলাতুল বারাআত- মুক্তি বা নাজাতের রাত্রি। ৩। লাইলাতুর রহমাহ- রহমতের রাত্রি। ৪। লাইলাতুছ ছাক- সনদপ্রাপ্তির রাত্রি ইত্যাদি। (তাফসীরে ছাভী, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৪০) খণ্ড খণ্ড
২.তাফসীরে জালালাইন শরীফে রয়েছে,
ان انزلناه فى ليلة مباركة هى ليلة القدر او ليلة النصف من شعبان نزل فيها من ام الكتاب من السماء السابعة الى السماء الدنيا انا كنا منذرين-
অর্থ : নিশ্চয়ই আমি তা বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছি। আর বরকতময় রাত হল লাইলাতুল ক্বদর (ক্বদরের রাত) অথবা লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান (শাবানের মধ্য রাত তথা শবে বরাত)। কেননা এই রাতে উম্মুল কিতাব (কোরআন শরীফ) ৭ম আসমান থেকে দুনিয়ার আসমানে (১ম আসমান) নাযিল হয়েছে। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। (তাফসীরে জালালাইন শরীফে ৪১০ পৃষ্ঠায়)
৩.তাফসীরে তাবারী শরীফে রয়েছে,
عن عكرمة فى قول الله تبارك وتعالى (فيها يفرق كل أمر حكيم) قال: فى ليلة النصف من شعبان يبرم فيها أمر السنة وتنسخ الأحياء من الأموات ويكتب الحاج فلا يزاد فيهم أحد, ولا ينقص منهم أحد.
অর্থ : আল্লাহ তায়ালার বাণী এর তাফসীরে বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত ইকরামা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মধ্য শাবানের রাত্রিতে বছরের সকল ব্যাপার চূড়ান্ত করা হয়, জীবিত ও মৃতদের তালিকা লেখা হয় এবং হাজীদের তালিকা তৈরি করা হয়। এ তালিকা থেকে একজনও কমবেশি হয় না। (তাফসীরে তাবারী শরীফ, পৃষ্ঠা ২২, খন্ড ১০)
৪. প্রসিদ্ধ তাফসীরে কুরতুবী রয়েছে,
ولها أربعة أسماء: الليلة المباركة, وليلة البراءة, وليلة الصك, وليلة النصف من شعبان-
অর্থ: ইমাম কুরতুবী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)বলেন, এ রাতের ৪ টি নাম আছে- (ক). লাইলাতুম মুবারাকা, (খ). লাইলাতুল বারাআত, (গ). লাইলাতুছ্ ছাক (ঘ). লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান। (তাফসীরে কুরতুবী, খণ্ড-১৬ পৃষ্ঠা-১২৬)
৫.তাফসীরে বাগভী শরীফে বর্ণিত আছে,
عن ابن عباس رضى الله عنهما أن الله يقضى الأقضية فى ليلة النصف من شعبان, ويسلمها إلى أربابها فى ليلة القدر-
অর্থঃ নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ শবে বরাতের রাতে সকল বিষয়ের চূড়ান্ত ফয়সালা করেন এবং শবে ক্বদরের রাতে তা সংশ্লিষ্ট দায়িত্ববান ফেরেশতাদের কাছে ন্যস্ত করেন । (তাফসীরে বাগভী, খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা ২২৮)
এ রকম ৬৫ টি তাফসীর গ্রন্থে লাইলাতুম মোবারাকা বলতে শবে ক্বদরের পাশাপাশি মধ্য শাবান অর্থাৎ ১৪ শাবানের রাতের কথাও গুরুত্ব সহকারে বলা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য কিতাবসমূহের নাম-
(১).তাফসীরে ইবনু আবি হাতেম, খণ্ড-১২, পৃষ্ঠা-২১৪। (২).তাফসীরে রুহুল মায়ানী, খণ্ড-২৫, পৃষ্ঠা-১১০। (৩).তাফসীরে বাহরুল মুহীত, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-২৪। (৪).তাফসীরে ফাতহুল কাদীর, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৫৭০। (৫).তাফসীরে যাদুল মাছির, খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা-১২২। (৬).তাফসীরে নাসাফী, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩০২। (৭). তাফসীরে নিসাপুরী, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-৪৯০। (৮). তাফসীরে কাশ্শাফ, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-২৭২। (১০). তাফসীরে নুকুত ওয়াল উয়ূন, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-৪৯০। (১১). তাফসীরে দুররে মানসূর, খণ্ড-১২, পৃষ্ঠা-৬৯। (১২). তাফসীরে খাজেন, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-১৪৩। (১৩). তাফসীরে আল বোরহান, খণ্ড-২৩, পৃষ্ঠা-১১৬। (১৪). তাফসীরে রাযী, খণ্ড-১৭, পৃষ্ঠা-১৩৩। (১৫). তাফসীরে আলুসী, খণ্ড-১৮, পৃষ্ঠা-৪২৪। (১৬). তাফসীরে হাক্কী, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-৬। (১৭).তাফসীরে কুরতুবী, খণ্ড-১৬, পৃষ্ঠা-১২৭। (১৮). তাফসীরে সাভী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৩০২। (১৯). তাফসীরে ইবনে কাসীর, খণ্ড-৭, পৃষ্ঠা-২৪৬। (২০). তাফসীরে জামিউল বায়ান, খণ্ড-২০, পৃষ্ঠা-১৫১। (২১). তাফসীরে নুসূকী, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১২০। (২২). তাফসীরে কাদের, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১৬৬। (২৩). তাফসীরে মাযহারী, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-৩৬৮। (২৪). তাফসীরে কাসেমী, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-৩৬৮। (২৫). তাফসীরে কোশাইরী, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-১৯০, (২৬). তাফসীরে আবু সাউদ, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-১৩০। (২৭). তাফসীরে আয়াতুল আহকাম, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১৬৬। (২৮). তাফসীরে রুহুল বয়ান, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৫৯৮। (২৯). তাফসীরে কাশেফুল আসরার, খণ্ড-৯, পৃষ্ঠা-৯৪-৯৮ পৃষ্ঠা। (৩০). তাফসীরে মাওয়ারদী, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১০২। (৩১). তাফসীরে সিরাজুম মুনির, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৪৫৮। (৩২). কানজুল ঈমান শরীফ।
হাদীসের আলোকে লাইলাতুল বরাতের দলীল
দলীল নং : ১
عن ابى موسى الاشعارى عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الله تعالى ليطلع فى ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه الا لمشرك او مشاحن )رواه ابن ماجه (
অর্থ : হযরত আবূ মূসা আশয়ারী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) রাসূলে কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন। রাসূলে পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ ফরমান- মধ্য শাবানের রাত্রিতে আল্লাহ পাক রহমতের তাজাল্লী ফরমান এবং তার সমস্ত বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু মুশরিক বা শত্রুতাপোষণকারী ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না।
{তথ্য সূত্র: (১).ইবনে মাজাহ শরীফ, পৃষ্ঠা-১০০, হাদীস নং-১৩৮৯, মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-১১৫। (২). ইমাম বায়হাকী,শুয়াবুল ঈমান, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা- ৩৮২। (৩).ফাজায়েলুল আওকাত, পৃষ্ঠা-১৩৩, হাদীস নং-২৯। (৪).মিসবাহুজ জুজাযাহ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৪৪২, হাদীস নং-৪৮৭। (৫).আত তারগীব ওয়াত তারহীব, খণ্ড-৩য়, হাদীস নং-২৭১৮। (৬).আহলে হাদীস তথা লা-মাযহাবীদের নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি নাসির উদ্দীন আলবানীর “সিলসিলাতুল আহাদিছে ছহিহা” এর খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-১৩১ আরো ৫ টি হাদীস রয়েছে।}
দলীল: ২
عن معاذ رضى الله عنه : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: يطلع الله فى ليلة النصف من شعبان الى السماء الدنيا فيغفر لجميع خلقه الا لمشرك او مشاحن
অর্থ : হযরত মুয়াজ বিন জাবাল (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মধ্য শাবানের রাত্রিতে মহান আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে জালওয়া রাখেন, অত:পর তাঁর সকল বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু মুশরিক বা শত্রুতাপোষণকারী ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না।
{তথ্য সূত্র: (১). ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৮৩৩। (২).সহীহ ইবন হিব্বান, খণ্ড-১৩, পৃষ্ঠা-৩৫৫, হাদীস নং ১৯৮০। (৩).আহলে হাদীস তথা লা-মাযহাবীদের নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি নাসির উদ্দিন আলবানীর “সিলসিলাতুল আহাদিস আসসাহীহা”এর খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-১৩৫, হাদীস নং-১১৪৪। (৪).মুজামুল কাবীর, খণ্ড-১৫, পৃষ্ঠা-২২১। (৫).ফাজায়েলুল আওকাত, পৃষ্ঠা-১১৯, হাদীস নং-২২। (৬).আত তারগীব ওয়াত তারহীব, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৪১। (৭).মাজমাউয যাওয়ায়েদ, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-৬৫। (৮).আল হিলয়াহ, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-১৯১। (৯).আসসুন্নাহ, হাদীস নং-৫১২।}
দলীল নং : ৩
عن عائشة رضى الله عنها عن النبى صلى الله عليه وسلم قال هل تدرين ما فى هذه الليلة يعنى ليلة النصف من شعبان قالت ما فيها يا رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال فيها ان يكتب كل مولود بنى ادم فى هذه السنة وفيها ان يكتب كل هالك من بنى ادم فى هذه السنة وفيها ترفع اعمالهم وفيها تنزل ارزاقهم- فقالت : يا رسول الله ما من أحد يدخل الجنة إلا برحمة الله تعالى؟ فقال : ما من أحد يدخل الجنة إلا برحمة الله تعالى -ثلاثا
অর্থ : উম্মুল মোমেনীন মাহবুবায়ে মাহবুবে রাব্বিল আলামিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- রহমতে আলম নূরে মুজাচ্ছম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন হুজুর পাক রাউফুর রাহীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হযরত আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কে জিজ্ঞেস করলেন- হে আয়েশা! শাবান মাসের মধ্য রাতের মর্যাদা ও বুযুর্গী সম্পর্কে তুমি কি জান? তিনি আরজ করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতের কি মর্যাদা রয়েছে? আল্লাহ হাবিব (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উত্তরে বললেন- আগামী এক বছরে কতজন আদম সন্তান ভূমিষ্ট হবে এবং কতজন আদম সন্তান মৃত্যুবরণ করবে তা এ রাত্রে লিপিবদ্ধ করা হয়। আর এ রাত্রিতে তাদের আমল মহান আল্লাহ দরবারে উপস্থাপন করা হয় এবং তাদের রিযিক অবতীর্ণ কিংবা নির্ধারণ করা হয়। অত:পর হযরত আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “আল্লাহ রহমত ছাড়া কারো পক্ষে কি জান্নাতে যাওয়া সম্ভব নয়? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, মহান আল্লাহ বিশেষ রহমত ও একান্ত অনুগ্রহ ছাড়া কারো পক্ষে জান্নাতে যাওয়া সম্ভব নয়। এ কথাটি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনবার বললেন।
{তথ্য সূত্র: (১).মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-১১৫। (২).ফাজায়েলুল আওকাত, হাদীস নং ২৬।}
দলীল নং : ৪
সিহাহ্ সিত্তার অন্যতম হাদীসগ্রন্থ জামে তিরমিজি শরীফ ১ম খণ্ড, ৯২ পৃষ্ঠায় একটি অধ্যায় রয়েছে, যার নাম “বাবু মাযা ফি লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান” সেখানে হযরত উম্মুল মোমেনীন হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা (রাঃ) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন- এক রজনীতে আমি দয়াল নবী রাসূলে পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বিছানায় পেলাম না। এই জন্য তাঁর সন্ধানে বেরিয়ে পড়লাম। তারপর আমি জান্নাতুল বাকীতে গিয়ে নবীজিকে আকাশের দিকে মাথা উঠানো অবস্থায় দেখতে পেলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, হে আয়েশা! তুমি কি এ ধারণা করছ যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমার উপর অবিচার করেছেন? হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহ আনহা বললেন; আমি এমন ধারণা করিনি, ভেবেছিলাম আপনি আপনার অন্য কোন বিবির নিকট গমন করেছেন। তখন নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরমালেন নিশ্চয় আল্লাহ পাক শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত্রে প্রথম আকাশে তাজাল্লী ফরমান- অত:পর তিনি (আল্লাহ) বনী কালব গোত্রের:মেষের পশম সমূহের চেয়েও বেশী লোকের গুনাহ ক্ষমা করেন।” উল্লেখ্য যে, এই বনী কালব এর মেষের সংখ্যা ছিল ৩০,০০০।
{তথ্য সূত্র: (১).মুসনাদে আহমদ, খণ্ড-১৮, পৃষ্ঠা-১১৪, হাদীস নং-২৫৯৬, মোট ২১ টি হাদীস রয়েছে।(২).মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড-১০, পৃষ্ঠা-৪৩৮, হাদীস নং-৯৯০৭। (৩).শরহুস্সুন্নাহ, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১২৬, হাদীস নং-৯৯২। (৪).আত তারগীব ওয়াত তারহীব, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-২৪০, হাদীস নং-২৪। (৫).আল মুনতাখাব মিনাল মুসনাদ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৯৪।}
দলীল নং : ৫
শেরে খোদা হযরত আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে মারফু মুত্তাছিল সনদে রেওয়ায়েত করা হয় যে, আল্লাহ হাবীব নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ ফরমান-
اذا كانت ليلة النصف من شعبان- فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا- فيقول الا من مستغفرلى فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا كذا حتى يطلع الفجر-
অর্থ : যখন শাবানের ১৫ তারিখের রাত্র আগমন করে তখন তোমরা রাত্র জাগরণ করতঃ মহান আল্লাহ তায়ালার এবাদত বন্দেগী কর এবং এর পূর্ববর্তী দিনে (১৫ তারিখে) রোজা পালন কর। কেননা চৌদ্দ তারিখের সূর্য অস্থ যাওয়া তথা ১৫ তারিখের রাত্র আরম্ভ হওয়ায় সাথে সাথে মহান আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আসমানে স্বীয় তাজাল্লী প্রকাশ ফরমান। অর্থাৎ দুনিয়া বাসীর প্রতি বিশেষ রহমতের দৃষ্টি দান করতঃ দয়াপূর্ণ কুদরতী আওয়াজে আহ্বান করে থাকেন। আমার বান্দাদের মধ্যে কেউ আজকের এ পবিত্র রাত্রে আমি আল্লাহ দরবারে নিজের কৃত পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তোমাদের ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছি। রুজি-রিজিক চাওয়ার আছ কি? আমি তোমাদের চাহিদা অনুপাতে রিজিক দানের ফয়সালা করে দিব। কোন বিপদগ্রস্থ লোক বিপদ মুক্তির জন্য প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তোমাদের বিপদ দূরীভূত করে দিব। এমন আরো বিষয়ে কেউ প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তা সবই তোমাদেরকে দান করব। মহান আল্লাহ তায়ালার এরূপ করুনাপূর্ণ ঘোষনা সুবহে সাদিক পর্যন্ত চলতে থাকে।
{তথ্য সূত্র: (১). ইবনে মাজাহ শরীফ, পৃষ্ঠা-১০০। (২),মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-১১৫।(৩).শুয়াবুল ঈমান, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩৭৯, হাদীস নং-৩৮২২। (৪).মিসবাহুয যুযায, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৪৪, হাদীস নং-৪৮৬। (৫).মুসনাদে আহমদ, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-২৩৮।}
দলীল নং :৬
হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, শাবানের মধ্যবর্তী রাত তথা শবে বরাত যখন আগমন করে তখন মহান আল্লাহ তায়ালা রহমতের তাজাল্লী ফরমান এবং তিনি তার সমস্ত বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু মুশরিক বা মুসলমান ভাইয়ের প্রতি বিদ্বেষপোষণকারীকে ক্ষমা করেন না।
{তথ্য সূত্র: (১).বাজ্জার, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৯৩।(২).বায়হাকী শরীফ, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩৭৮।(৩).শুয়াবুল ঈমান, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩৮০, হাদীস নং-৩৮২৭। (৪).আহলে হাদীস তথা লা-মাযহাবীদের নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি নাসির উদ্দিন আলবানীর “সহিহ্ আত তারগীব ওয়াত তারহীব”, খণ্ড-৩, হাদীস নং-২৭৬৯। (৫).মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-৬৫।}
দলীল নং : ৭
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)থেকে বণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন, শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতে মহান আল্লাহ রহমতের ভান্ডার নিয়ে তার সকল সৃষ্টির প্রতি এক বিশেষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এবং এ রাতে হিংসুক ও হত্যাকারী ব্যাক্তি ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেয়া হয়।
{তথ্য সূত্র: (১). মুসনাদে আহমদ, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-২৩৮, হাদীস নং-১৬৪২।}

ইসলামী মণীষাতের বক্তব্য
বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,
قال الله عز وجل حم والكتاب المبين انا انزلناه فى ليلة مباركة قال ابن عباس رضى الله عنهما حم قضى الله ما هو كائن الى يوم القيمة والكتاب المبين يعنى القران- انا انزلناه يعنى القران فى ليلة مباركة هى ليلة النصف من شعبان وهى ليلة البرأة وقال ذالك اكثر المفسرين-
অর্থ : আল্লাহ পাক এরশাদ করেন- হা-মী-ম প্রকাশ্য মহাগ্রন্থ আল কোরআনের শপথ- যে কোরআনকে আমি মুবারক (বরকতময়) রাতে নাযিল করেছি। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)এর তাফসীর প্রসংগে বলেন- কিয়ামত পর্যন্ত যা হওয়ার আছে- তা আল্লাহ পাক ফয়সালা করে দিয়েছেন। শপথ উজ্জল প্রকাশ্য গ্রন্থ তথা কোরআনের যাকে আমি বরকতময় রাতে অর্থাৎ শাবান মাসের মধ্যবর্তী রজনীতে নাযিল করেছি- ঐ ১৫ শাবানের রাতটি হচ্ছে লাইলাতুল বরাআত- এবং অধিকাংশ মোফাসসিরীনে কেরাম এ মত পোষণ করেছেন। (গুনিয়াতুত্ত্বালেবীন, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৬৮৪। আরো আলোচনা ১৮৭ পৃষ্টায় রয়েছে।)

হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী, ইমাম সবুকীর (রঃ) থেকে নকল করে বলেন,
উক্ত শবে বরাতের রাত্রে বান্দার সারা বৎসরের গুনাহ মাফের বদলা হয়ে যায়। শুক্রবার রাত্রের ইবাদত সাপ্তাহিক গুনাহ মাফের বদলা এবং শবে ক্বদরের রাত্রের ইবাদত সারা জিন্দেগীর গুনাহ মাফের বদলা হয়ে যায়। এই জন্যই এ রাত্রসমূহে আল্লাহ নৈকট্য লাভের আশায় জাগ্রত থেকে ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে গুনাহ মাফের উছিলা হয়ে যায়। তাই এ রাত্র সমূহকে গুনাহ মাফের উছিলা বলা হয়। (মুকাশাফাতুল কুলুব, পৃষ্ঠা-৬৪০)

ফিকহে হানাফীঃ আল্লামা শামী, ইবনে নুজাইম, আল্লামা শরমবুলালী, শাইখ আব্দুল হক দেহলভী, মাওলানা আব্দুল হক লাখনভী, মুফতী মুহাম্মদ শফী, মুফতী তাকী উসমানীসহ উলামায়ে হানাফীয়া মতামত হল, শবে বরাতে শক্তি সামর্থ্য অনুযায়ী জাগ্রত থেকে একাকীভাবে ইবাদত করা মুস্তাহাব। তবে এর জন্য জামাআত বদ্ধ হওয়া যাবে না। ( আদ-দুররুল মুখাতার, খণ্ড-২ খন্ড, পৃষ্ঠা-২৫। আল বাহরুর রায়িক, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৫২। মা সাবাতা বিসসুন্নাহ, পৃষ্ঠ-৩৬। মারাকিল ফালাহ, পৃষ্ঠা-২১৯।)
ফিকহে শাফেয়ীঃ ইমাম শাফেয়ী ( রহমতুল্লাহি আলাইহি )-এর মতে, শাবানের ১৫তম রাতে অধিক অধিক দুআ কবুল হয়ে থাকে। ( কিতাবুল উম্ম, খণ্ড-১ম, পৃষ্ঠা-২৩১)
ফিকহে হাম্বলীঃ শাইখ ইবনে মুফলী হাম্বলী ( রহমতুল্লাহি আলাইহি ), আল্লামা মনসুর আল বাহুতী, ইবনে রজর হাম্বলী প্রমুখ হাম্বলী উলামায়ে কেরামের মতে শবে বরাতে ইবাদত করা মুস্তাহাব। ( আল মাবদা, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৭, কাশফুল কিনা, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৪৪৫, লাত্তায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠ-১৫১)
ফিকহে মালেকীঃ ইবনে হাজ্ব মালেকী ( রহমতুল্লাহি আলাইহি ) বলেন, সালফে সালেহীনগণ এ রাতকে যথেষ্ট সম্মান করতেন এবং এর জন্য পূর্ব থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। ( আল মাদখাল, খণ্ড-১ম, পৃষ্ঠা-২৯২)
ইবনে তাইমিয়ার অভিমতঃ লা-মাজহাবী ও খালাফী সম্প্রদায়ের অন্যতম ইমাম, আব্দুল আব্বাস আহমেদ ইবনে তাইমিয়া বলে, পনেরো শাবানের রাতের ফজীলত সম্পর্কে একাধিক মারফু হাদীস ও আসারে সাহাবা বর্ণিত রয়েছে। এগুলো দ্বারা এ রাতের ফজীলত ও মর্যাদা প্রমাণিত হয়। সালফে সালেহীনদের কেউ কেউ এ রাতে নফল নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হতেন। আর শাবানের রোযার ব্যাপারে তো সহীহ হাদীসসমূহই রয়েছে।(ইকতিযাউস সিরাতুল মুস্তাকিম, খণ্ড-২য়, পৃষ্ঠা-৬৩১)
আশরাফ আলী থানবীঃ কাওমী ও তাবলীগ সম্প্রদায়ের অন্যতম মুরুব্বী আশরাফ আলী থানবী বলে, ‘লাইলাতুল মুবারাকাহ’ বলতে গিয়ে বলেন, কেউ কেউ লাইলাতুল মুবারাকাহ এর ব্যাখ্যা লাইলাতুল বরাত করেছেন। এর কারণ এই যে, বিভিন্ন বর্ণনায় এ সম্পর্কেও বার্ষিক ঘটনাবলীর সিদ্ধান্তের বিষয় এসেছে। ( তাফসীর বয়ানুল কুরআনে, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৯৯।)

কবর যিয়ারত ও হালুয়া-রুটি
এ রাত্রে আপনজন যারা কবরে তাদের কবর যিয়ারত করবেন। স্ব স্ব এলাকার আওলিয়ায়ে কেরাম, বুজুর্গানে দ্বীনদের মাজার যিয়ারত করা অতি উত্তম। এতে ফয়েজ ও বরকত হাসেল হয়। তবে হ্যাঁ কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সারা রাত্র ব্যয় করে দেওয়াটা বোকামী। যেহেতু সুন্নত আদায়ের লক্ষ্যে আয়ত্বের ভিতরে নিকটতম মাজার শরীফ ও কবর জিয়ারত করলে আদায় হয়ে যায়। কেনান, প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে মা আয়েশা সিদ্দিকা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)শা’বানের ১৫ তারিখের রাতে জান্নাতুল বাকীতে মোনাজাতরত অবস্থায় পেয়েছেন। (“জামে তিরমিজি” ১ম খন্ড ৯২ পৃষ্ঠা, “মুসনাদে আহমদ” ১৮তম খন্ড, পৃ.-১১৪, হাদীস নং-২৫৯৬। “মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা” ১০ম খন্ড, পৃ.-৪৩৮, হাদীস নং-৯৯০৭। “শরহুস্সুন্নাহ” ৪র্থ খন্ড, পৃ.-১২৬, হাদীস নং-৯৯২। “আত তারগীব ওয়াত তারহীব” ৪র্থ খন্ড, পৃ.-২৪০, হাদীস নং-২৪। “আল মুনতাখাব মিনাল মুসনাদ” ১ম খন্ড, ১৯৪ পৃষ্ঠা।)

শবে বরাতে হালুয়া-রুটি ও অন্যান্য উন্নত খাবার তৈরী করা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ। কারণ ইহা এক ধরণের উন্নত হালাল খাবার। আর প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিষ্টি অধিক ভালবাসতেন। (বুখারী শরীফ ২য় খন্ড ৮১৭ পৃষ্ঠা সহ আরো বিভিন্ন পৃষ্ঠায় ১১টি হাদীস রয়েছে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, মিশকাত শরীফ ৩৬৪পৃষ্ঠা )
এছাড়া তিরমিযী শরীফে উল্লেখ আছে নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেছেন- “হে লোক সকল, তোমরা সালামের প্রচলন কর, মানুষকে অন্য দাও, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করো এবং লোকজন যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন নামাজে দন্ডায়মান হও, তবেই তো শান্তিতে বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে।
আল্লাহ তা’আলা সকলকে সঠিক বিষয়টি বুঝার তাওফিক দান কর ও আমলে জিন্দেগি নসিব কর, আমিন।
 
Top