জরুরি আমলিয়াত

তওবায়ে নাছুহার গুরুত্ব
=============
দঃ প্রত্যহ নিজে  নিজে একাধিকবার তাওবা করার অভ্যাস করে  নিবেন।  তবে মুর্শিদকর্তৃক তওবা করানোর ইজাজতনামাপ্রাপ্ত ব্যক্তি দ্বারা তাওবা করে নেওয়া ভাল। আর সুযোগ  হলে নিজ  পীর ও মুর্শিদকর্তৃক তওবা করে নেয়া আরো উত্তম।

তওবা করার পদ্ধতি

(ছালেকীন নিজে নিজে বলবে) আমি ঈমান আনলাম আল্লাহ ও রাসূলের উপর। আমি  ঈমান আনলাম কোরআন  ও হাদিসের উপর। আল্লাহপাক কালামে পাকের আয়াতে কারীমার যে ভাবার্থ নিয়েছেন সে  ভাবার্থের উপর ঈমান আনলাম। রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসশরীফের যে ভাবার্থ বা মুরাদ নিয়েছেন সেই মুরাদের উপর ঈমান আনলাম। আমি সকল বাতিল দ্বীনের উপর বেজার হলাম। আমি আমার ঈমান তাজা করলাম।

اشهد ان لااله الا الله وحده لاشريك له واشهد ان محمدا عبده ورسوله

উচ্চারণ: আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়ারাসূলুহু।

অর্থ:  আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া ইবাদত বন্দেগি পাওয়ার উপযুক্ত আর কোন মাবুদ নেই।  আল্লাহ এক তাঁর কোন শরিক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর  প্রেরিত, আল্লাহর উপাসক ও আল্লাহর রাসূল।

(তারপর বলবেন) হে আল্লাহ!  আমি তওবা করছি জীবনের সমস্ত গোনাহ হতে। হে  আল্লাহ! আমাদের জানা-অজানা, সগিরা-কবিরা, প্রকাশ্যে-গোপনে,  বুঝে-না বুঝে  যত গোনাহ করেছি, জীবনের সমস্ত গোনাহকে তোমার শাহানশাহী দরবারে হাজির করে তওবা করছি। আমাদের তওবাকে কবুল করে নিন। জীবনের সমস্ত গোনাহ-খাতাকে মাফ করে দিন।

অতঃপর ‘ছাইয়্যিদুল ইস্তেগফার’ পড়বেন,

اللهم انت ربى لا اله الا انت خلقتنى وانا عبدك وانا على عهدك ووعدك ما استطعت ابوء لك بنعمتك على وابوء لك بذنبى فاغفرلى فانه لا يغفر الذنوب الا انت- اعوذ بك من شر ما صنعت )بخارى شريف جلد ثانى ۹۳٦)

ভাবার্থ: আল্লাহ তুমি আমার প্রভু! তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার বান্দা। আমি আমার  সাধ্যনুযায়ী তোমার চুক্তি ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি স্বীকার করি আমার  প্রতি তোমার দানকে   এবং স্বীকার করি আমার অপরাধকে। সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা, তুমি ব্যতীত অপরাধরাশি ক্ষমা করার আর কেউ নেই। আমি আমার কৃতকার্যের মন্দ পরিণাম হতে তোমার নিকট আশ্রয় চাই। (বুখারিশরীফ ২/৯৩৬)

ফজিলত: বুখারীশরীফ  ২য় জিলদের ৯৩৬ পৃষ্ঠা ও মিশকাতশরীফের ২০৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে, নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি উপরোক্ত সায়্যিদুল ইস্তেগফারের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে রাতের বেলায় পাঠ  করে, অতঃপর ঐ রাতেই মৃত্যুবরণ করে সে ব্যক্তি জান্নাতি হবে। আর যদি সকাল বেলা পাঠ করে ঐ দিনেই মারা যায়  তাহলেও সে ব্যক্তি জান্নাতি হবে।

আবুদাউদশরীফে বর্ণিত আছে যে,  রাসূলেপাক  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি বেশি বেশি করে তওবা করবে আল্লাহতা’য়ালা তার সমস্ত অসুবিধা দূর করে দিবেন এবং তাকে এত বেশি পরিমাণ সম্পদ দান  করবেন যা সে কল্পনা করতেও পারে না।

তওবা ব্যতিরেকে ইবাদত বন্দেগি সহিহ-শুদ্ধ হয় না। পীরে  কামেল মাখদুম সৈয়দ আলী হুজুবিরী উরফে হযরত দাতাগঞ্জ বখ্শ  রাদিয়াল্লাহু আনহু তদীয় ‘কাশহুল  মাহজুব’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন, ইমাম জাফর বিন মোহাম্মদ ছাদেক রাদিয়াল্লাহু আনহু এরশাদ করেছেন,

لاتصح العبادة الا بالتوبة لان الله تعالى قدم التوبة على العبادة قال الله تعالى التائبون العابدون الاية (سورة توبه- ۱۱۲)

অর্থাৎ তওবা ব্যতীত ইবাদত বন্দেগি সহিহ-শুদ্ধ হয় না। কেননা আল্লাহতা’য়ালা কালামেপাকে ইবাদতের পূর্বেই তওবার উল্লেখ করেছেন। যেমন আল্লাহতা’য়ালা এরশাদ  করেন,  আল্লাহর শাহানশাহী দরবারে তওবাকারীরাই ইবাদতকারীরূপে গণ্য হয়ে থাকে। কেননা তওবা  হল সর্বস্তরের ইবতেদা  বা প্রথম উবুদিয়ত বা বন্দেগি হল তারই সর্বশেষ স্তর।

আল্লাহতা’য়ালা যখনই গোনাহগার বান্দাদের উল্লেখ করেছেন  তখনই তওবার নির্দেশের মাধ্যমে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহতা’য়ালা নিজেই এরশাদ করেছেন,
توبوا الى الله جميعا ايها المؤمنون

অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ আল্লাহতা’য়ালার শাহানশাহী দরবারে সমস্ত গোনাহ থেকে তওবা কর।

অপরদিকে যখনই আল্লাহতা’য়ালা তাঁর হাবীব সায়্যেদে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়াসল্লামের  উল্লেখ করেছেন তখন উবুদিয়ত ও  বন্দেগির দ্বারা তাঁর হাবিবের উল্লেখ করেছেন।

আল্লাহতা’য়ালার বাণী,
فاوحى الى عبده ما اوحى

অর্থাৎ ‘আমি আমার প্রিয় খাস বান্দার উপর যে ওহী নাজিল করতে পছন্দ করি তাই নাজিল করে থাকি।’

উপরের দলিলভিত্তিক  আলোচনার দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল, আল্লাহর শাহানশাহী  দরবারে তওবা করা ইবাদতের প্রথম স্তরের মধ্যে গণ্য। কারণ তওবা করলেই ইবাদতের প্রেরণা জন্মে  এবং  একজন ঈমানদার উবুদিয়ত  ও বন্দেগির মাধ্যমে একজন কামেল ওলীর দর্শন লাভ করতে সক্ষম হয়। এজন্যই সদাসর্বদা তওবা করার অভ্যাস করে নিতে হবে।

আজ  থেকে প্রায় পাঁচশত বৎসর পূর্বে মীর আব্দুল ওয়াহিদ বুলগেরামী রাদিয়াল্লাহু  আনহু তদীয় سبع سنابل شريف নামক কিতাবে উল্লেখ করেন,

অর্থাৎ ‘ক) হক্বানী পীর ও মুর্শিদের মাধ্যমে জীবনের সমস্ত গোনাহ থেকে তওবা করা এবং স্বীয় অপরাধের ওজরখাহী আল্লাহ তা’য়ালার শাহানশাহী দরবারে পেশ করে  আল্লাহ তা’য়ালার সন্তুষ্টি লাভ করার এরাদা করাকে মুরিদ বলা হয়ে থাকে।

খ) মুরিদী অর্থাৎ গোনাহ থেকে তওবা করা এবং  শরিয়তের বিপরীত  কথাবার্তা থেকে বিরত থাকার ক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা  করাকেই মুরিদ বলা হয়ে থাকে।

গ) কেননা ঈমানদারগণ অবশ্যই সদাসর্বদা তওবা করার অভ্যাস  করতে হবে। এজন্য যে,  তওবা ব্যতিরেকে দ্বীন ইসলাম ত্রুটিপূর্ণ অবস্থায় অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে। সুতরাং একান্তই প্রয়োজন, এমনকি ঈমানদারের জন্য ফরজে আইন বা অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত।’

উপরোক্ত দলিলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা  স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল, প্রত্যেক ঈমানদার  মুসলমানের জন্য হক্বানী পীর ও মুর্শিদের মাধ্যমে তওবা করা একান্ত প্রয়োজন।

অপরদিকে হক্বানী পীর ও মুর্শিদের উসিলার মাধ্যমে আল্লাহর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বায়আতে রাসূল গ্রহণ করা সুন্নত।

 
Top