ঈদের নামাযে অতিরিক্ত ছয় তাকবীর হবে

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একাধিক সহীহ হাদীসে এবং বহু সাহাবী ও তাবিয়ীর ফতোয়া ও আমল দ্বারা একথা প্রমাণিত হয় যে, ঈদের নামাযে অতিরিক্ত ছয় তাকবীর হবে। হানাফী ফেকাহ অনুসারে এই ছয় তাকবীর বলা ওয়াজিব। কিন্তু আমাদের লা-মাযহাবী ভাইয়েরা দেশের বিভিন্ন স্থানে ছয় তাকবীরের বিরোধিতা করে মানুষকে এই ধারণা দেওয়ার প্রয়াস চালাচ্ছে যে, ১২ তাকবীর দেওয়াই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত, ছয় তাকবীর প্রমাণিত নয়। এখানে আমরা প্রথমে ছয় তাকবীরের হাদীসগুলো পেশ করবো। পরে বার তাকবীরের হাদীসগুলোর অবস্থা সম্পর্কে কিছু পর্যালোচনা তুলে ধরবো।

উল্লেখ্য, দাঁড়ানো অবস্থায় উভয় রাকাতে মোট তাকবীর হলো নয়টি। প্রথম রাকাতে পাঁচটি ও দ্বিতীয় রাকাতে চারটি। প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরীমা, তিনটি অতিরিক্ত তাকবীর ও রুকুর তাকবীর: এই মোট পাঁচ তাকবীর। দ্বিতীয় রাকাতে তিনটি অতিরিক্ত তাকবীর ও রুকুর তাকবীর: এই মোট চার তাকবীর। সামনের হাদীসগুলোর কোনটিতে মোট সংখ্যা ধরে নয়টি তাকবীরের কথা বলা হয়েছে। আবার কোনটিতে পাশাপাশি তাকবীর হিসেবে চারটি করে আটটি তাকবীরের কথা বলা হয়েছে। এসবের মধ্যে কোন বৈপরিত্ব নেই। সর্বাবস্থায় অতিরিক্ত তাকবীর তিনটি করে ছয়টিই থাকছে। এসব বিষয় সামনে রেখেই হাদীসগুলো বুঝতে হবে।

ছয় তাকবীর সম্পর্কিত মারফূ হাদীস:

১. কাসেম আবূ আব্দির রহমান র. বলেন,

حدثني بعض اصحاب رسول الله صلى الله عليه و سلم قال صلى بنا النبي صلى الله عليه و سلم يوم عيد فكبر اربعا واربعا ثم اقبل علينا بوجهه حين انصرف قال لا تنسوا كتكبير الجنائز وأشار بأصابعه وقبض إبهامه. أخرجه الطحاوي في شرح معاني الآثار ٢/٤٠٠ من طريق عبد الله بن يوسف عن يحيى بن حمزة عن الوضين بن عطاء عنه. قال الطحاوي: فهذا حديث حسن الإسناد وعبد الله بن يوسف ويحيى بن حمزة والوضين والقاسم كلهم أهل رواية معروفون بصحة الرواية ليس كمن روينا عنه الآثار الأول فان كان هذا الباب من طريق صحة الإسناد يؤخذ فان هذا أولى ان يؤخذ به مما خالفه غيره.

অর্থ: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জনৈক সাহাবী আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে ঈদের দিন নামায পড়লেন এবং চারটি করে তাকবীর দিলেন। নামায শেষ করে আমাদের মুখোমুখি হয়ে বললেন, ভুলে যেয়ো না, জানাযার তাকবীরের মতো। এই বলে তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি গুটিয়ে বাকী চার আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করলেন। (তাহাবী শরীফ, ২খ, ৪০০ পৃ)

তহাবী র. বলেন, এই হাদীসটির সনদ চমৎকার। এর বর্ণনাকারী আব্দুল্লাহ ইবনে ইউসুফ, ইয়াহইয়া ইবনে হামযা, ওয়াদীন (وضين) ও কাসেম সকলেই হাদীস বর্ণনাকারী, সহীহ বর্ণনা পেশ করার ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ। পূর্ববর্তী হাদীসগুলো (১২তাকবীরের হাদীস) যাদের সূত্রে বর্ণিত, এরা তাদের মতো সমালোচিত নয়। সুতরাং এর সমাধান যদি সনদের বিশুদ্ধতা দিয়ে করতে হয়, তবে এই হাদীসটি তার বিপরীত হাদীস থেকে আমলের অধিক হক রাখে।

২ . মাকহুল র. বলেন,

أخبرنى أبو عائشة جليس لأبى هريرة ان سعيد بن العاص سال أبا موسى الأشعرى وحذيفة بن اليمان كيف كان رسول الله -صلى الله عليه وسلم- يكبر فى الأضحى والفطر فقال أبو موسى كان يكبر اربعا تكبيره على الجنائز. فقال حذيفة صدق. فقال أبو موسى كذلك كنت أكبر فى البصرة حيث كنت عليهم. وقال أبو عائشة وأنا حاضر سعيد بن العاص. أخرجه أبو داود (١١٥٣) وسكت عنه هو والمنذري ورواه أحمد في مسنده ٤/٤١٦ وابن أبي شيبة (٥٧٤٤)

অর্থ: আবূ হুরায়রা রা. এর একজন সঙ্গী আবূ আয়েশা র. আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, সাঈদ ইবনুল আস রা. (কুফার গভর্নর) এসে আবূ মূসা আশআরী রা. ও হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান রা.কে জিজ্ঞেস করলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় কিভাবে তাকবীর দিতেন? আবূ মূসা রা. বললেন, তিনি জানাযার মতো চার তাকবীর দিতেন। তখন হুযায়ফা রা. বললেন, আবূ মূসা সঠিক বলেছেন। আবূ মূসা রা. বললেন, আমি যখন বসরার গভর্নর ছিলাম তখন এভাবেই তাকবীর দিতাম। আবূ আয়েশা র. বলেন, এসময় আমি সাঈদ ইবনুল আসের কাছে উপস্থিত ছিলাম। আবূ দাউদ শরীফ (১১৫৩), মুসনাদে আহমাদ ৪খ, ৪১৬পৃ, মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং (৫৭৪৪)

ইমাম আবূ দাউদ ও মুনযিরী দুজনই এই হাদীসের উপর নীরবতা অবলম্বন করেছেন। এতে প্রতীয়মান হয় যে হাদীসটি তাদের নিকট আমলযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য। নীমাবী বলেছেন, এর সনদ হাসান । (দ্র. আসারুস সুনান, ৩১৪ পৃ)

উল্লেখ্য, এই দুটি হাদীসে প্রথম রাকাতের তাকবীরে তাহরীমাসহ এবং ২য় রাকাতের রুকুর তাকবীর সহ চার তাকবীর উল্লেখ করা হয়েছে।

পরবর্তী হাদীসগুলো থেকেও একথা পরিস্কার বোঝা যায়।

 
Top