সুগন্ধি প্রসঙ্গে প্রশ্নোত্তর
========
প্রশ্ন:  ইহরামকালীন আতরের   শিশি হাতে নিলে,  হাতে সুগন্ধি লেগে গেল তখন তার কাফ্‌ফারা কি?

উত্তর: যদি মানুষেরা দেখে বলেন যে, আপনার অনেক আতর  লেগে  গেছে    যদি  অঙ্গের  কোন  ছোট  অংশেও  লেগে থাকে দম আবশ্যক  হবে।   আর  সামান্য   আতর লেগে গেলে  সদ্‌কা আবশ্যক হবে। (বাহারে  শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১৬৩ পৃষ্ঠা)

প্রশ্ন:   মাথায় যদি সুগন্ধিময়  তৈল দিয়ে দেয় তখন  কি   করবে?

উত্তর:   যদি  কোন  বড়  অঙ্গে    যেমন:  রান,  মুখ,  হাত  কিংবা অন্য অঙ্গে আর সে সুগন্ধিতে ভরপুর হয়ে যায়।  সুগন্ধিময়   তৈল   দ্বারা  হোক  কিংবা   আতর   দ্বারা    তার  উপর দম ওয়াজিব হবে। (প্রাগুপ্ত)

প্রশ্ন:   বিছানা   কিংবা  ইহরামের  কাপড়ে  সুগন্ধি  লেগে গেল।    কিংবা    অন্য   কেউ   লাগিয়ে      দিল।   তখন    কি  করবেন?

উত্তর: সুগন্ধি কত পরিমাণ হয় দেখা হবে। অধিক হলে দম  ওয়াজিব  হবে,     আর   কম   হলে  সদকা  আবশ্যক  হবে।

প্রশ্ন:   যে রুম থাকার জন্য পাওয়া গেল  তাতে   কার্পেট, বিছানা,   বালিশ,   চাদর    ইত্যাদি    সুগন্ধিময়    হলে     কি করবে?

উত্তর:     মুহরিম    ঐ    জিনিসের     ব্যবহার    থেকে     বেঁচে থাকবে। যদি (মুহরিম) সর্তক না থাকে আর এই সুগন্ধি থেকে  সুগন্ধ  ছুটে  শরীর  এবং  ইহরামের  উপর    লেগে গেল তবে অধিক  হওয়া অবস্থায় দম দিতে  হবে। আর  কম  হলে  সদকা   ওয়াজিব   হবে।   আর  যদি    না  লাগে তবে কোন কাফ্‌ফারা নেই।   কিন্তু এরূপ অবস্থায়  বেঁচে থাকা উত্তম। মুহরিমের উচিত যে, ঘরের মালিককে রুম পরিবর্তনের জন্য বলে। এটাও হতে পারে যে, মেঝে ও বিছানার  উপর কোন সুগন্ধিবিহীন   চাদর বিছিয়ে নেয়,  বালিশের   ভিজা   কভার    পরিবর্তন    করে   নেয়   অথবা  এটাকে      কোন      সুগন্ধিবিহীন     চাদর     দিয়ে     জড়ায়ে নিবে।

প্রশ্ন:   যে  সুগন্ধি  ইহরামের  নিয়্যত  করার   পূর্বে    শরীর কিংবা   ইহরামের চাদরে লাগানো হয়েছিল।   ইহরামের নিয়্যত    করার   পর     সেই    সুগন্ধিকে   দূর    করে    নেয়া  আবশ্যক হবে কিনা?

উত্তর:  দূর  করতে হবে  না। সদরুশ শরীয়াহ رَحۡمَۃُ  اللہِ تَعَالٰی   عَلَیْہِ     বলেছেন:   ইহরামের   র্পূবে    শরীরে   খুশবু লাগিয়ে  ছিল,  ইহরামের  পর  তা  ছড়িয়ে  অন্য  অংঙ্গে  লেগে গেলেও কাফ্‌ফারা নেই।   (বাহারে শরীয়াত,  ১ম খন্ড, ১১৬৩ পৃষ্ঠা)

প্রশ্ন:  ইহরামের নিয়্যতের   পূর্বে  গলাতে যে  ব্যাগ   ছিল এর   মধ্যে    অথবা  বেল্টের  পকেটে  আতরের    বোতল  ছিল।      নিয়্যতের    পর    মনে    পড়লে    তা    বের     করা আবশ্যক  নাকি রাখা  যাবে? যদি এই  বোতলের সুগন্ধ হাতে লেগে গেল, তবুও কাফ্‌ফারা দিতে হবে?

উত্তর: ইহরামের নিয়্যতের পর ঐ আতরের শিশি ব্যাগ অথবা   বেল্ট   থেকে   বের   করা    আবশ্যক   নয়।    আর  পরবর্তীতে ঐ বোতলের  সুগন্ধ, হাত  ইত্যাদিতে  লেগে গেলে  তবে   কাফ্‌ফারা   আবশ্যক;  কেননা  এটা    এমন সুগন্ধি   নয়  যা  ইহরামের   নিয়্যতের   পূর্বে   কাপড়    বা শরীরে লাগানো হয়েছে।

প্রশ্ন: নিয়্যতের  পূর্বে   জানলাম,  যে ব্যাগ  পরিহিত ছিল তা  সুগন্ধীময় ছিল    আবার এর ভিতর সুগন্ধি রুমাল  বা সুগন্ধি তাসবীহ্‌ ইত্যাদি ছিল। এগুলো  মুহরিম ব্যবহার করতে পারবে কিনা?

উত্তর:   এ  বস্থসমূহের   সুগন্ধ  ইচ্ছাকৃতভাবে  ঘ্রাণ  নেয়া মাকরূহ।    আর     এমন      সর্তকতার    সাথে    ব্যবহারের  অনুমতি  আছে  যে,  যদি  এর   সিক্ততা   অবশিষ্ট  থাকে, তবে  তা    যেন  ইহরাম  এবং   শরীরে   না    লাগে।  তবে  তাসবিহ্‌   এর   ক্ষেত্রে   এরূপ     সর্তকতা   অবলম্বন   করা নিতান্ত কঠিন বরং রুমালের  ক্ষেত্রেও বেঁচে থাকা  কঠিন হয়ে থাকে। সুতরাং এসব  ব্যবহার থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই কল্যাণ।

প্রশ্ন: যদি দুই তিনটা  অতিরিক্ত সুগন্ধি চাদর  নিয়্যতের পূর্বে   কোলে   রেখে   নেয়  বা  পরিধান   করে  নেয়  পরে  ইহরামের নিয়্যত করে। নিয়্যতের পর  অতিরিক্ত চাদর সরিয়ে  দেয়,   আবার  একই  ইহরাম  অবস্থায়   ঐ  চাদর এর ব্যবহার এর হুকুম কি?

উত্তর: যদি সিক্ততা  অবশিষ্ট থাকে তবে তা ব্যবহারের  অনুমতি  নেই,  আর   যদি  সিক্ততা  শেষ   হয়ে  যায়   শুধু সুগন্ধি    থেকে    যায়     তবে    ব্যবহার    করা     যাবে    কিন্তু মাকরূহে   তানযিহী  হবে।  সদরুশ   শরীয়াহ  رَحۡمَۃُ  اللہِ   تَعَالٰی   عَلَیْہِ  বলেছেন:  যদি  ইহরামের   পূর্বে  সুগন্ধিযুক্ত করেছিল,     আর     তা     ইহরামে     পরিধান     করলে     তা  মাকরূহ। কিন্তু কাফ্‌ফারা নেয়।

প্রশ্ন:    স্বপ্নদোষ    হয়ে    গেল   কিংবা    যে     কোন   কারণে ইহরামের   একটি   চাদর   কিংবা   উভয়টি   নাপাক   হয়ে  গেল।  তবে  অন্য  দুটি  চাদর  বিদ্যমান  রয়েছে  কিনত্মু  তাতে     পূর্বেকার     সুগন্ধি     লেগে     আছে।     তখন     এই  চাদরদ্বয় পরিধান করতে পারবে কিনা?

উত্তর: যদি আদ্রতা  ও জড়তা এখনো অবশিষ্ট  আছে। চাদরগুলো পরিধানে কাফ্‌ফারা অবশ্য দিতে হবে, আর যদি জড়তা শেষ  হয়ে যায়    শুধু সুগন্ধি রয়ে যায় তবে মুহরিম ঐ চাদর ব্যবহার করতে  পারবে।   অবশ্য বিনা কারণে এরূপ চাদর ব্যবহার  করা   মাকরূহে তানযিহী। ফুকাহায়ে  কিরাম   رَحِمَہُمُ     اللہُ  تَعَالٰی  বর্ণনা  করেন:  যে কাপড়ে জড়তা থেকে যায়, তা ইহরামে পরিধান করা নাজায়েয। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, ২২২   পৃষ্ঠা) বাহারে শরীয়াতে রয়েছে: যদি ইহরামের পূর্বে সুগন্ধিযুক্ত ছিল, আর     ইহরাম     পরিধান      করল     তবে     মাকরূহ      কিন্তু কাফ্‌ফারা দিতে হবে না। (বাহারে শরীয়াত,  ১ম  খন্ড, ১১৬৫ পৃষ্ঠা)

প্রশ্ন: ইহরাম অবস্থায়  হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন দিতে গিয়ে বা রুকনে ইয়ামানি  থেকে আসতে বা মুলতাযিমে শু’তে গিয়ে যদি সুগন্ধি লেগে যায়। তখন কি করবে?

উত্তর: যদি অত্যাধিক লেগে যায় তখন দম দিতে হবে। আর  যদি   অল্প  লেগে  যায়  তখন   সদকা  দিতে  হবে। (প্রাগুক্ত,  ১১৬৪ পৃষ্ঠা) (যেখানে সুগন্ধি  লেগে  যাওয়ার কথা   রয়েছে,     সেখানে   সুগন্ধি   কম    নাকি    বেশী    তা  অন্যের  মাধ্যমে ফয়সালা করাতে  হবে।   যেহেতু বেশী খুশবু লাগার কারণে দম দিতে হবে, সেহেতু হতে পারে আপন নফস বেশী খুশবুকেও কম মনে করবে।

প্রশ্ন:  কোন মুহরিম   সুগন্ধিময়  ফুলের ঘ্রাণ নিতে   পারে কিনা?

উত্তর:  না, মুহরিম জেনে শুনে সুগন্ধি  অথবা  সুগন্ধিময় বস্থর   ঘ্রাণ   নেয়া   মাকরূহে   তানযিহি   তবে   কাফ্‌ফারা  দিতে হবে না। (প্রাগুক্ত, ১১৬৩ পৃষ্ঠা)

প্রশ্ন:   রান্না করা  হয়নি এমন  এলাচি  অথবা রূপার মত পাতা বিশিষ্ট এলাচিদানা খাওয়া কেমন?

উত্তর:    হারাম।     যদি     নিরেট    সুগন্ধি     যেমন:    মুশ্‌ক, জাফরান, লং,  এলাচি, দারুচিনি এত  পরিমাণ খেল  যে মুখের   অধিকাংশে   লেগে   গেল।    তবে    দম    ওয়াজিব হলো, আর কম হলে সদকা।

প্রশ্ন: সুগন্ধিময় জর্দা, বিরয়ানী, কোর্মা,  সুগন্ধিময়  সুপ, সুপারি,  ক্রিমযুক্ত  বিস্কিট,  টপি  ইত্যাদি  খেতে  পারবে  কিনা?

উত্তর: যে খুশবু খাবারের  মধ্যে পাকানো  হয়েছে। চাই তা থেকে এখনো  খুশবু  আসুক তা আহার করায় কোন অসুবিধা নেয়। অনুরূপভাবে  খাবার রান্নার সময়  ঢালা  হয়নি;  পরবর্তীতে   উপরে  ঢেলে   দেয়া     হয়েছিল  কিন্তু  এখন  এর   গন্ধ  চলে   গেল  তা  খাওয়াও  জায়েয।  যদি রান্না ছাড়া খুশবু খাবার অথবা মানজুন ইত্যাদি ঔষধে মিলিয়ে     দেয়া     হলে,      তবে     এখন     তার     (সুগন্ধির)  অংশবিশেষ    থেকে   বেশী,    তবে   এটা    নিখুঁত   খুশবুর হুকুমে।   আর   এতে   কাফ্‌ফারা   আদায়   করতে   হবে।  সুতরাং খুশবু মুখের অধিকাংশ স্থানে  লাগলে দম, আর কম  লাগলে সদ্‌কা। আর যদি খাদ্য ইত্যাদির পরিমাণ অধিক   অন্যদিকে   খুশবু   কম   হলে,   কোন   কাফ্‌ফারা  দিতে    হবে     না।    হ্যাঁ!    নিরেট    খুশবুর    ঘ্রাণ    আসলে  মাকরূহে তানযিহী হবে।

প্রশ্ন:    সুগন্ধিময়    শরবত,     ফ্রুট,    জুস,     ঠান্ডা     পানিয়  ইত্যাদি পান করা কেমন?

উত্তর: যদি  নিরেট খুশবু  যেমন:  চন্দন ইত্যাদি শরবত হয় তবে ঐ শরবত তো রান্না করেই তৈরী হয়, সুতরাং পান    করার   অনুমতি   আছে।   আর   যদি    এর   ভিতরে সুগন্ধি  সৃষ্টি  করার  জন্য  কোন   বস্থ   (ঊংংবহংব)   ঢালে তবে  আমার  জানা   মতে  এগুলো ঢালার পদ্ধতি  এরূপ যে, রান্নাকৃত শরবতে তা ঠান্ডা  হওয়ার  পর ঢালা হয়ে থাকে।    আর   অবশ্য   এটা   খুবই   অল্প    পরিমাণ   হয়ে থাকে।  এ শরবতের হুকুম  হলো। যদি তাতে তিন বার বা  এর  বেশী  পান  করলে  দম     দিতে    হবে    অন্যথায় সদ্‌কা। বাহারে শরীয়াতে রয়েছে: পান করার  জিনিসে যদি সুগন্ধি মিলানো হয়, যদি সুঘ্রাণ প্রাধান্য পায়, তবে দম  দিতে হবে।   আর  কম  হলে তা তিন  বা  এর চেয়ে বেশী    পান    করলে    দম     অন্যথায়    সদ্‌কা।     (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১৬৬ পৃষ্ঠা)

প্রশ্ন:    মুহরিম   ব্যক্তি   নারিকেল    তৈল   ইত্যাদি   মাথায় লাগাতে পারে কিনা?

উত্তর:  কোন   ক্ষতি   নেই।   তবে  জয়তুন   জাতীয়  তৈল খুশবুর   অন্তর্ভূক্ত।  যদিও  তাতে   খুশবু  না   থাকে।  ইহা শরীরে  লাগাতে  পারবে  না।  হ্যাঁ!  ইহা  খাদ্যে,    নাকে   দেওয়া,     আঘাতে     লাগানো     আর     কানে     দেওয়াতে  কাফ্‌ফারা দিতে হবে না। (প্রাগুক্ত, ১১৬৬ পৃষ্ঠা)

প্রশ্ন: ইহরাম অবস্থায় চোখে সুরমা লাগানো কেমন?

উত্তর: ইহা  হারাম  হবে। সদরুশ শরীয়া বদরুত তরিকা হযরত   আল্লামা    মাওলানা   মুফতি    মুহাম্মদ    আমজাদ আলী আযমী رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেছেন:  খুশবুযুক্ত সুরমা  এক  বা  দু’বার  লাগালে  সদ্‌কা দেবে  এর বেশী হলে দম,   আর  যে  সুরমাতে   খুশবু নেই, তা ব্যবহারে  ক্ষতি  নেয়।   তবে  তা  যেন     প্রয়োজনীয়  অবস্থায়  হয়।  বিনা   কারণে    মাকরূহ   (খেলাফে   আওলা)।   (প্রাগুক্ত,  ১১৬৪ পৃষ্ঠা)

প্রশ্ন:  খুশবু  লাগালেন  আর  কাফ্‌ফারাও    দিয়ে   দিলেন তখন ঐ খুশবু লাগিয়ে রাখবেন কিনা?

উত্তর: খুশবু লাগানো যখন অপরাধ হল। ইহাকে শরীর কিংবা  কাপড় থেকে দূর   করে দেয়াও ওয়াজিব হবে। আর কাফ্‌ফারা  আদায়  করার    পরে   যদি  তা দূর করে দেয়া না হয়, তখন  পূনরায়  দম ইত্যাদি ওয়াজিব  হয়ে যাবে। (প্রাগুক্ত, ১১৬৬ পৃষ্ঠা)

ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধি সাবানের ব্যবহার
========
প্রশ্ন:   বড়    বড়   হোটেলে   সুগন্ধিময়    সাবান,    সেম্পু, পাউডার হাত ধৌত করার জন্য রাখা হয়, আর মুহরিম নির্ভয়ে  তা ব্যবহার  করে।  বিমানে এবং ইয়ারপোর্টেও মুহরিমদের এরূপ  অবস্থায়ই দেখা যায়।  কাপড় এবং হাতে পায়ে  পাউডারও হুজ্জাযে মুকাদ্দাসে সুগন্ধিযুক্তই হয়ে   থাকে।   এ  জিনিসগুলোর   ব্যাপারে    শরয়ী  হুকুম  কি?

উত্তর:  মুহরিম   এ   জিনিসগুলো  ব্যবহার   করলে  কোন  কাফ্‌ফারা আবশ্যক হবে না। (অবশ্যই খুশবুর নিয়্যতে এ জিনিসগুলোর ব্যবহার মাকরূহ)

(গৃহিত: ইহরাম আওর খুশবুদার সাবুন)

মুহরিম এবং গোলাপ ফুলের মালা
========
প্রশ্ন:     ইহরাম     এর     নিয়্যত     করার     পর     ইয়ারপোর্ট  ইত্যাদিতে   গোলাপ  ফুলের  মালা  পরিধান  করা    যাবে কিনা?

উত্তর:     ইহরামের    নিয়্যতের    পরে    গোলাপের     মালা  পরবেন না। কেননা গোলাপ ফুল নিজে খুবই সুগন্ধিময় আর  এর  ঘ্রাণ শরীর এবং কাপড়েও মিশে   যায়   আর যদি তার  ঘ্রাণ কাপড়ে  মিশে   গেল এবং  বেশী  হয় ও চার     প্রহর    তথা   ১২  ঘন্টা  পর্যন্ত  ঐ  কাপড়  পরিহিত থাকে তবে দম দিতে হবে, অন্যথায় সদকা। আর যদি খুশবু  কম  হয়   আর কাপড়ে  এক  বিগত  বা এর  কম  অংশে লাগল  আর চার প্রহর  পর্যন্ত তা  পরিহিত থাকে, তবে সদকা দিতে হবে। আর  এর কম পরিধান  করলে এক মুষ্টি  গম দেওয়া ওয়াজিব। আর যদি সুগন্ধি অল্প  কিন্তু    এক  বিগতের   চেয়ে  বেশী  অংশে    ছড়িয়ে  যায়  তবে   বেশীর      হুকুমেই    পরিগণিত   হবে।    অর্থাৎ   চার প্রহরে    দম    আর     কম   হলে   সদ্‌কা।   আর     এ    মালা  পরিধান   সত্বেও   ঘ্রাণ   কাপড়ে   মিশে    গেল    না   তবে কোন কাফ্‌ফারা নেয়। (ইহরাম আওর খুশবুদার সাবুন, ৩৫-৩৬ পৃষ্ঠা)

প্রশ্ন:  কারো  সাথে    মুসাফাহা   করলো   আর   তার   হাত থেকে মুহরিমের হাত খুশবু লেগে গেলে তবে?

উত্তর:  যদি  প্রকৃত  খুশবু   লাগে   তবে  কাফ্‌ফারা  দিতে হবে।   আর    যদি   প্রকৃত   খুশবু    লাগল   না   বরং   হাতে শুধুমাত্র   ঘ্রাণ    এসেছে   তবে   কোন      কাফ্‌ফারা    নেই। কেননা   ঐ    মুহরিম   শুধু   খুশবু    থেকে   উপকার     গ্রহণ করেনি। অবশ্যই  উচিত হলো  যে, হাত ধুয়ে ঐ সুগন্ধি  দূর করে দেয়া। (প্রাগুক্ত, ৩৫ পৃষ্ঠা)

প্রশ্ন:    সুগন্ধিময়   সেম্পু   দিয়ে   মাথা   বা      দাঁড়ি    ধৌত করতে পারবে কিনা?

উত্তর:  রিসালা    “ইহরাম  আওর  খুশবুদার  সাবুন”  এর  ২৫-২৮ পৃষ্ঠা   থেকে সংকলিত কিছু  মাদানী ফুল  লক্ষ্য করুন সেম্পু  যদি   মাথা  বা  দাঁড়িতে  ব্যবহার  করা হয় তবে    সুগন্ধি    নিষেধ    ও     তার     কারণের     উপর      এর নিষেধাজ্ঞা।   নিষিদ্ধ  হওয়ার   হুকুমেই   বুঝে  এসে   যায় বরং      কাফ্‌ফারাও      হাওয়া      উচিত।      যেমন      খিতমী  (সুগন্ধিযুক্ত ঔষধ)  দ্বারা মাথা এবং দাঁড়ি  ধৌত করার হুকুম   রয়েছে  যে,  এটা  চুলকে   নরম   করে  দেয়  এবং  উকুনকে মেরে ফেলে আর মুহরিমের জন্য এটা জায়েয নয়।   “দুররে    মুখতার”    কিতাবে   রয়েছে:   মাথা    এবং দাঁড়িকে  খিতমী  (এক  প্রকার  সুগন্ধিযুক্ত   ঔষধ) দ্বারা ধৌত করা হারাম। কেননা     এটা  খুশবু,  আর  উকুনকে মেরে   ফেলে।(দুররে  মুখতার,  ৩য়  খন্ড,  ৫৭০    পৃষ্ঠা) সাহেবাইন     (অর্থাৎ    ইমাম     আবু     ইউসুফ    ও    ইমাম  মুহাম্মদ رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَنۡہُمَا এর নিকট যেহেতু এটা সুগন্ধি  নয়, তাই ইহা “জিনায়েতে  ক্বাসিরাহ” (অসম্পূর্ণ অপরাধ)    এর    প্রমাণিত      হবে    আর    সেটার    উদ্দেশ্য ‘সদ্‌কা’ হবে। শ্যাম্পু দ্বারা মাথা ধৌত করা অবস্থাতেও প্রকাশ্য  ভাবে  ‘জিনায়াতে  ক্বাসিরাহ’  (অর্থাৎ  অসম্পুর্ণ  অপরাধ)  এর  অসিন্তত্বই    বুঝা  যায়  যেন  তার  মধ্যেও আগুনের তৈরীকৃত   কার্যাদী হয়ে   থাকে। তাই   সুগন্ধির হুকুম তো রহিত হয়ে গেল কিন্তু চুল গুলোকে নরম করা এবং    উকুন    মারার    ত্রুটি    (অর্থাৎ    কারণ)    বিদ্যমান  রয়েছে।  এ   জন্য   সদ্‌কা  ওয়াজিব  হওয়া  উচিত।  এই বিষয়টাও মনোযোগের প্রয়োজন যে, যদি করো মাথার চুল  এবং   মুখে  দাঁড়ি  না   থাকে  তাহলে  কি  এখনোও পূর্বের    হুকুমই     প্রযোজ্য     হবে?    প্রকাশ্য    ভাবে    এই অবস্থাতে  কাফ্‌ফারার     হুকুম  না   হওয়া  উচিত  কেননা নিষিদ্ধ   হুকুমের   কারণ   চুলগুলোর     নরম   হওয়া   এবং উকুনের       ধ্বংস       হওয়ার       ছিল,       আর       উলেস্নখিত  অবস্থায়তে এটা ইলস্নতে  মাফকুদ (অর্থাৎ অনুপস্থিতির কারণ) রয়েছে এবং ইনতিফা ইলস্নত  অর্থাৎ কারণ   না হওয়াটাই      নিষেধাজ্ঞার     কারণগুলোকে       মুসতালযিম (আবশ্যক কারী) কিন্তু  তার দ্বারা  যদি  শরীরের   ময়লা   পরিষ্কার  হয়, তা হলে   এটা মাকরূহ  যেমন  মুহরিমের  জন্য   ময়লা  পরিষ্কার  করা  মাকরূহ।  আর   হাত  ধৌত করার  মধ্যে  তার  অবস্থা  সাবানের  মত।  কেননা  এটা  তরল (ষরয়ঁরফ) অবস্থায় সাবান ধরে নেওয়া হবে এবং এর মধ্যেও আগুনের কার্যাদী করা হয়ে থাকে।

প্রশ্ন:  সম্মানীত মসজিদদ্বয়ের  কার্পেটকে  ধৌত করাতে যে সুগন্ধিযুক্ত স্প্রে (ঝঙখটঞওঙঘ) ব্যবহার করা হয়ে থাকে সেটাতে লক্ষ মুহরিমের  পাদ্বয়ের   মলিনতো হয়ে থাকে সেটার হুকুম কি?

উত্তর:  কোন  কাফ্‌ফারা  দিতে হবে না।  কেননা   এটার সুগন্ধি নেই। আর যদিও এই বিশুদ্ধ সুগন্ধিও হয়ে থাকে তারপরেও  কাফ্‌ফারা  ওয়াজিব  হবে  না। কেননা   এটা প্রকাশ্য  যে,    এই   স্প্রে  প্রথমে  পানিতে  মিশানো  হয়ে থাকে  আর  পানি সেই স্প্রে   থেকে বেশী হয় এবং এই স্প্রে প্রভাব কম হয়ে থাকে   আর যদি তরল  সুগন্ধিকে কোন  তরল    পদার্থের  মধ্যে  মিশানো  হয়  আর   তরল  পদার্থ     প্রাধান্য     পায়     তবে     কোন     প্রতিফল     নেই।  ফিকহের      কিতাবের     মধ্যে      পান     করার     যে     হুকুম সাধারণত     লিখা    হয়েছে     সেটার    দ্বারা    উদ্দেশ্য    পূর্ণ সুগন্ধির তরল পদার্থে মিশে যাওয়া। আল্লামা হোসাইন বিন মুহাম্মদ  আবদুল  গনী মক্কী   رَحۡمَۃُ   اللہِ  تَعَالٰی عَلَیْہِ “ইরশাদুস      সারী”৩১৬   পৃষ্ঠায়   লিখেছেন:   তাই    এটা  থেকে জানা গেল যে, গলিত চিনি (অর্থাৎ মিষ্টি শরবত) এবং তার মত গোলাপের পানির  সাথে   মিশানো   হয়,   তবে     যদি     গোলাপের     রস       প্রাধান্য     পায়       যেমন: স্বভাবগতভাবে এমনিই  সাধারণত হয়ে     থাকে তাহলে এতে কোন কাফ্‌ফারা দিতে হবে না।

আর হযরত আল্লামা  ক্বারী  رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ এটার উদাহরণ “ত্বরা বুলুসী”থেকে নকল করেন আর এটাকে স্থায়ী রাখলেন এবং সেটাকে সমর্থন করেন আর সেটার মূল বেষ্টনকারী  তে রয়েছে। (ইহরাম আওর   খুশবুদার  সাবুন, ২৮-২৯ পৃষ্ঠা)

প্রশ্ন:  মুহরিম যদি টুথ পেষ্ট ব্যবহার করে নেয় তবে কি কাফ্‌ফারা দিতে হবে?

উত্তর:   টুথ    পেষ্টের   স্থলে  যদি  আগুনের  কয়লার    ছাই ব্যবহার   করে   যেমন  ধরুন  ইহাই   প্রকাশ্য,  তখন  তো কাফ্‌ফারা  ওয়াজিব  হবেনা।  যেরকম    পূর্বের  বর্ণনাতে অতিবাহিত হয়ে গেছে। (প্রাগুক্ত, ৩৩ পৃষ্ঠা) অবশ্য যদি মুখ  থেকে দূর্গন্ধ দূর করার  জন্য  এবং সুগন্ধি অর্জনের নিয়্যতে  হয়,  তখন  মাকরূহ হবে। আমার আক্বা আ’লা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত মাওলানা  শাহ্‌ আহমদ  রযা খাঁন رَحۡمَۃُ  اللہِ  تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন:   তামাকের  উপাদানে   সুগন্ধি   ঢেলে  রান্না   করা  হয়েছে, তখন সেটা খাওয়া  সাধারণত জায়েয যদিওবা সুগন্ধি   বের   হয়।  হ্যাঁ!  শুধু   সুগন্ধির   উদ্দেশ্য   সেটাকে গ্রহণ   করা  অপছন্দ  থেকে   খালি   নয়।  (ফাতোওয়ায়ে রযবীয়াহ, ১০ম খন্ড, ৭১৬ পৃষ্ঠা)

সেলাইযুক্ত কাপড় ইত্যাদি প্রসঙ্গে প্রশ্নোত্তর
========
প্রশ্ন:  মুহরিম    ব্যক্তি  যদি   ভুলে  সেলাই  করা,   কাপড় পরিধান     করে    নেয়।       আর    দশ     মিনিট    পর    স্মরণ আসতেই   খুলে    ফেলে।  তখন  কোন   কাফ্‌ফারা  দিতে হবে কিনা?

উত্তর:   হ্যাঁ!     দিতে   হবে।   যদিও   এক    মূহুর্তের    জন্য পরিধান  করে। জেনে বুঝে কিংবা ভুলে পরিধান  করুক তবে  সদ্‌কা   ওয়াজিব  হবে,  আর যদি চার   প্রহর  তথা একদিন    একরাত    তার    চেয়ে    বেশী    চাই    লাগাতার  কয়েকদিন পরিধান  করল তখন অবশ্যই দম ওয়াজিব হবে।    (ফাতোওয়ায়ে    রযবীয়াহ,     ১০ম    খন্ড,     ৭৫৭ পৃষ্ঠা)

প্রশ্ন:       যদি      টুপি      অথবা      পাগড়ি       পড়ল      অথবা ইহরামেরই  চাদর মুহরিম  মাথা অথবা মুখে  তুলে নিল অথবা ইহরামের নিয়্যত করার  সময়  পুরুষ সেলাইযুক্ত কাপড় অথবা টুপি  খুলতে ভুলে  গেল  অথবা  ভিড়ের মধ্যে  অন্যের   চাদর  দ্বারা  মুহরিমের  মাথা   অথবা  মুখ ঢেকে গেল তাহলে কি শাসিন্ত হবে?

উত্তর:  জেনে  বুঝে   হোক বা ভুল করে  অথবা   অন্যের  অলসতার  ভিত্তিতে     হোক  না  কেন,    কাফ্‌ফারা  দিতে হবে।   হ্যাঁ!   জেনে   বুঝে   ভুল   করলে  গুনাহ  হবে  এবং তাওবা  করাও    ওয়াজিব  হবে।   এখন  কাফ্‌ফারা  বুঝে নিন:    পুরুষ  পূর্ণ   মাথা   অথবা  মাথার  চর্তুথাংশ   অথবা পুরুষ  বা   মহিলা  বহিরাংশ   পূর্ণ  অর্থাৎ   সম্পূর্ণ    চেহারা অথবা   চুর্তুথাংশ   চার   প্রহর   তথা   একদিন   এক   রাত  কিংবা তার বেশী সময় ধারাবাহিক ঢেকে রাখে তখনও “দম” ওয়াজিব হবে, আর এক চতুর্থাংশ থেকে কম চার প্রহর তথা একদিন একরাত পর্যন্ত বা  চার প্রহরের কম সময়  যদিও  সমস্ত মুখ  অথবা মাথা ঢেকে রাখে,  তখন সদ্‌কা দিতে   হবে।    এক চতুর্থাংশের  কম  অঙ্গকে চার প্রহরের কম সময়ে  ডেকে  রাখল তখন কাফ্‌ফারা নেই তবে গুনাহ হবে।(প্রাগুক্ত, ৭৫৮ পৃষ্ঠা)

প্রশ্ন: সর্দিতে কাপড় দ্বারা নাক পরিস্কার করতে পারবে কিনা?

উত্তর:     কাপড়    দ্বারা    পরিস্কার    করতে    পারবে     না। কাপড় বা  তোয়েলে  দূরে রেখে   তাতে নাকের   ময়লা  পরিস্কার অর্থাৎ  ঝেড়ে নিন। সদরুশ শরীয়াহ, বদরুত   তরিকাহ   হযরত   আল্লামা   মাওলানা   মুফতি   আমজাদ  আলী  আযমী   رَحۡمَۃُ  اللہِ تَعَالٰی   عَلَیْہِ বলেন: কান  এবং কাধ   ঢেকে    রাখাতে  অসুবিধা   নেই।   অনুরূপ  নাকের  উপর খালি হাত রাখতে এবং যদি হাতে কাপড় থাকে আর  কাপড়  সহ নাকের  উপর  হাত রাখল, কাফ্‌ফারা (ওয়াজিব) হবেনা কিন্তু মাকরূহ এবং গুনাহ হবে।

(বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১৬৯ পৃষ্ঠা)

ইহরাম পরিহিত অবস্থায় টিসু পেপারের ব্যবহার
========
প্রশ্ন:  টিসু  পেপার   দিয়ে মুখের ঘাম  অথবা ওযুর পানি কিংবা সর্দিতে নাক পরিস্কার করতে পারবে কিনা?

উত্তর: পরিস্কার করতে পারবে না।

প্রশ্ন: মুখের মধ্যে কাপড় অথবা টিসু পেপারের মুখোশ লাগানো কেমন?

উত্তর:    নাজায়িয    ও      গুনাহ।       শর্ত    পাওয়া     অবস্থায় কাফ্‌ফারাও আবশ্যক হবে।

প্রশ্ন: মুহরিম সুগন্ধিযুক্ত টিসু পেপার ব্যবহার করে নিল, তাহলে?

উত্তর:  সুগন্ধিমুক্ত   টিসু   পেপারে  যদি  সুগন্ধির  যথাযথ প্রভাব  থাকে  অর্থাৎ  সেই   পেপার   সুগন্ধি   দ্বারা    স্যাত স্যাতে হয়ে  যায়। তাহলে  সেই ভিজাটা শরীরের উপর লাগাবশতায় যেই হুকুম সুগন্ধির হয়ে থাকে, সেই হুকুম তারও   হবে  অর্থাৎ   যদি  অল্প   (অর্থাৎ   কম  হয়   এবং সম্পূর্ণ অঙ্গ প্রতঙ্গে না লাগে তাহলে সদকা করতে হবে, তা  নাহলে  যদি  অধিক  হয় অথবা সম্পূর্ণ   অঙ্গে   লেগে যায়, তাহলে ‘দম’   ওয়াজিব হবে। আর  যদি  প্রভাব না থাকে বরং  শুধু  সুগন্ধ  আসে  তবে যদি এটার  মাধ্যমে   চেহারা    ইত্যাদি  পরিস্কার    করল  এবং    চেহারা  অথবা হাতে     সুগন্ধির     প্রভাব     এসে     যায়।     তাহলে      কোন  কাফ্‌ফারা  দিতে   হবে  না।  এ  জন্য  যে  এতে   সুগন্ধির আসল     প্রভাব     পাওয়া     যায়নি     এবং      টিসু     পেপার  ব্যবহারের  মূল   উদ্দেশ্য  সুগন্ধি    থেকে    উপকার  নেয়া নয়।   (ইহরাম আওর  খুশবুদার   সাবুন, ৩১ পৃষ্ঠা) যদি  কেউ   এমন রুমে প্রবেশ  করল,  যাকে  সুগন্ধ ধূয়া দেয়া হল   এবং  তার কাপড়ে সুগন্ধ লেগে গেল,  তবে কোন কাফ্‌ফারা   দিতে  হবে  না,  কেননা   সে   সুগন্ধির  প্রভাব থেকে উপকার গ্রহণ    করেনি। (আলমগিরী,  ১ম  খন্ড,  ২৪১ পৃষ্ঠা)

প্রশ্ন:   শোয়ার   সময়       সেলাই   করা   কাপড়    শরীরের  উপরে দিতে পারবে কিনা?

উত্তর:   চেহারা   ব্যতিরেখে   এক   বা   তার   চেয়ে   বেশী  চাদরও শরীরের  উপর দিতে পারবে, যদিওবা   পূর্ণ পা ঢেকে যায়।

প্রশ্ন: উড়ো জাহাজ অথবা বাস ইত্যাদির প্রথম সিটের পিছনে কিংবা বালিশের উপর মুখ রেখে মুহরিম ঘুমিয়ে পড়ে, তবে তার কি হুকুম?

উত্তর:  বালিশের  উপর   মুখ    রেখে   শুয়ে  পড়লে  তার কোন   কাফ্‌ফারা   দিতে   হবে   না,   কিন্তু   এটা   মাকরূহ  তাহরিমী   অথবা   বাস    ইত্যাদির   প্রথম    সিটের    পিছে চেহারা     রেখে     ঘুমানো      জায়েয।    কেননা    সাধারণত বাসের সিট  দরজার কাঠের  মত শক্ত থাকে, বালিশের মত নরম হয়না।

প্রশ্ন:     হাঁটুর      উপর     চেহারা      রেখে     শোয়া     কেমন?  বালিশের  উপর  চেহারা রেখে শুয়াতে  কাফ্‌ফারা দিতে হয় না কিন্তু সেটা মাকরূহ কেন?

উত্তর: যদি শুধু হাঁটুর উপর চেহারা থাকে (অর্থাৎ হাঁটুর শক্ত জায়গার উপর) জায়েয। কেননা কাপড়ের ভিতর যদি শক্ত জাতীয় কোন জিনিস থাকে,  তবে  সেই  শক্ত  জিনিসের হুকুম গন্য হবে। কাপড়ের নয়, যেমন ভাবে উলামায়ে  কেরাম  ছোট  বশতা  এবং   পুটলির   কাপড়  ব্যতিত হুকুম লিখেছেন। কিন্তু হাঁটুর উপর চেহারা রেখে শোয়াতে এই অবস্থা অনেক কষ্টকর বরং ঘুমন্তাবশতায় হাঁটুর শক্ততার উপর এবং শুধু কাপড়ের উপর চেহারা চলে আসবে তাই এটা থেকে বিরত থাকা (অর্থাৎ বাঁচা) উচিৎ। তা নাহলে কাফ্‌ফারার অবস্থাদি সৃষ্টি হতে পারে এবং যতটুকু পর্যন্ত বালিশের সম্পর্ক রয়েছে, তবে সেটা নরম  কাপড়ের  মত  (এ  জন্যই  নিষেধ  করা  হয়েছে)  কিন্তু مِن ڪُلِّ  الْوُجُوه (অর্থাৎ প্রত্যেক  প্রকার) কাপড়   নয় (এজন্য কাফ্‌ফারা ওয়াজিব নয়)।

প্রশ্ন:   মুহরিম    সর্দি      থেকে   বাঁচার   জন্য   যিফ   (ুরঢ়) ওয়ালা বিছানাতে চেহেরা এবং মাথা ছাড়া বাকী শরীর ঢেকে ঘুমাতে পারবে কিনা?

উত্তর:     ঘুমাতে     পারবে।     কেননা    অভ্যাসগত    ভাবে  এটাকে পোশাক পরিধান করা বলা যাবে না।

প্রশ্ন:   যদি মুহরিমের প্রস্রাবের ফোঁটা পড়ে  তাহলে কি করবে?

উত্তর:  সেলাই  ছাড়া  নেংটি     বেঁধে   নিবে।  সাধারাণত ইহরাম     অবস্থায়     নেংটি     বাঁধা     জায়েয,     যদি     সেটা  সেলানো  না   হয়।  (ফাতোওয়ায়ে রযবীয়া, ১০ম  খন্ড, ৬৬৪ পৃষ্ঠা)

প্রশ্ন:     রোগ      ইত্যাদির    বাধ্যবাধকতায়    সেলাই    করা কাপড় পরিধানে কোন কাফ্‌ফারা আছে কি?

উত্তর: জ্বি হ্যাঁ। রোগ ইত্যাদির কারণে যদি মাথা থেকে পা পর্যন্ত সকল কাপড় পরিধান করার  প্রয়োজন হয়।   তখন একই অনিচ্ছাকৃত অপরাধ ধরে নেয়া হবে।  যদি চার  প্রহর  কিংবা তার   অধিককাল পরিধান করে তখন দম  ওয়াজিব  হবে,  আর  তার   চেয়ে    কম  হলে  সদকা দিতে হবে।  আর যদি ঐ রোগে মাত্র  একটি কাপড়ের প্রয়োজন ছিল। সে ইচ্ছাকৃত দুটি পরিধান করে।

সে তার সাথে  সেলাই করা  গেঞ্জি পরে নিল। তখন সে পদ্ধতিতে একটি  মাত্র কাফ্‌ফারা  আবশ্যক হবে।  তবে গুনাহগার   হবে, আর যদি   দ্বিতীয় কাপড় দ্বিতীয় স্থানে পড়ে নেয়। যেমন: পায়জামার প্রয়োজন ছিল, সে তার সাথে কাপড়ও পরে নিল। তখন ইহাকে একটি জুরমে গাইরে ইখতিয়ারী হিসেবে গণ্য করা হবে, আর অপরটি হল   জুরমে  ইখতিয়ারী।  (বাহারে   শরীয়াত,   ১ম  খন্ড, ১১৬৮ পৃষ্ঠা। আলমগিরী, ১ম খন্ড, ২৪২ পৃষ্ঠা)

প্রশ্ন: যদি প্রয়োজন ছাড়া সকল কাপড় পরিধান করে নেয়, তখন কতটুকু কাফ্‌ফারা দিতে হবে?

উত্তর:  যদি  প্রয়োজন ছাড়া  সকল    কাপড় এক সঙ্গে  পরিধান  করে নেয়  তখন ইহাকে একটি  গুনাহ হিসেবে গণ্য করা হবে, আর দুইটি  জুরম হবে  ঐ সময়ে,  যখন একটি প্রয়োজন বশতঃ আর  অপরটি প্রয়োজন   ছাড়া  হবে। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১৬৮ পৃষ্ঠা)

প্রশ্ন: যদি মুখ উভয় হাত দ্বারা ঢেকে নেয় কিংবা মাথায় অথবা  চেহেরাতে    কেউ   হাত  রেখে   দিল,  তখন   তার হুকুম কি?

উত্তর: মাথা  অথবা   নাকের   উপর  নিজের কিংবা  অন্য কারো  হাত রাখা  জায়েয।  হযরত আল্লামা  আলী ক্বারী رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: নিজের কিংবা অন্য কারো হাত       নিজের       মাথা      অথবা       নাকের      উপর      রাখা  সর্বসম্মতিক্রমে   মুবাহ    (অর্থাৎ   জায়েয)।    কেননা    যে ব্যক্তি এ রকম করে, তাকে গোপনকারী বলা  যায় না।  (লুবাবুল   মানাসিক   ওয়াল   মাসলাকুল   মুতাকাস্‌সিত,  ১২৩ পৃষ্ঠা)

প্রশ্ন:  তাহলে কি মুহরিম দোআ করার  পর নিজের হাত মুখে বুলাতে পারবে না?

উত্তর:   বুলাতে     পারবে।  মুখে  হাত  রাখার   সাধারণত  অনুমতি  রয়েছে। দাঁড়ি  বিশিষ্ট ইসলামী ভাই দোআর  পরে  মুখের  উপর  বরং  ওযুর  মধ্যেও  এই  ভাবে  হাত  বুলানো   থেকে   বাঁচা   উচিত,    যার    দ্বারা    চুল     পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রশ্ন: যদি কাঁধে  সেলাই    করা কাপড় নিল তখন তার   কাফ্‌ফারা কি?

উত্তর: কোন কাফ্‌ফারা দিতে হবে না। সদরুশ শরীয়াহ                  رَحۡمَۃُ  اللہِ  تَعَالٰی  عَلَیْہِ   বলেন:  পরিধান  করার উদ্দেশ্য    এটা    যে,     সে   কাপড়কে     এভাবে   পরিধান করবে  যেমন: স্বভাবগত পরিধান করা হয়, তা না হলে যদি জামায় লুঙ্গি বেঁধে নিল অথবা  পায়জামাকে লুঙ্গির মত ভাঁজ   করে   পায়ের পিছনে না রাখে, তাহলে কোন অসুবিধা নেই।  এমনিতেই আচকানকে  জড়িয়ে  উভয় কাঁধের উপর রেখে দিল। কাফ্‌ফারাদিতে হবে না, কিন্তু এটা   মাকরূহ   এবং   মোড়ার   (অর্থাৎ   কাঁধের   উপর)  সেলাইকৃত  কাপড়  রেখে  দিলে   কোন  সমস্যা    নেই। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১৬৯ পৃষ্ঠা)

 
Top