▪ কিতাবঃ নূরে মুজাচ্ছাম (ﷺ)
▪ লেখক, সংকলকঃ মুফতি মােহাম্মদ আলাউদ্দিন জেহাদী
▪ Text Ready : Masum Billah Sunny



ময়ুরের সুরতে রাসূল (ﷺ)


▓█► হজরত সাইব ইবনে ইয়াজিদ (রাঃ) বর্ণনা করেন, 
নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা একটি গাছ সৃষ্টি করলেন যার ৪টি শাখা বা ঢাল ছিল। অতঃপর নূরে মুহাম্মদী (ﷺ) সৃষ্টি করে ঐ গাছের ডালের মাঝে ময়ূরের সূরতে রাখলেন।"

★ জুযউল মাফকূদ মিন মুছান্নাফে আন্দির রাজ্জাক, ৫১-৫২ প
★ ইমাম গাজ্জালী: দাকায়েকুল অখবার

সনদ ছহীহু। এই হাদিসটিও সনদের দিকে ছহীহ।

▓█► হজরত সাইব ইবনে ইয়াজিদ (রাঃ) এর রেওয়াত দ্বারা প্রমাণ হয়ে যায়, "আল্লাহর রাসূল (ﷺ) সৃষ্টি জগৎ সৃষ্টি হওয়ার পূর্বে আল্লাহর দরবারে ময়ূরের সূরতে ছিলেন।"

তখন মাটি কিংবা মাটির এই পৃথিবীর কোন অস্তিত্বই ছিলনা।

ছহীহ সনদে হজরত জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
♣ “হজরত জাবের আল আনছারী (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলে পাক (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করলাম,
ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমার পিতা-মাতা আপনার কদমে কুরবান হউক (ইহা তাজিমার্থে) ! আপনি আমাকে সংবাদ দিন আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম কি সৃষ্টি করেছেন? প্রিয় নবীজি (ﷺ) বললেন: হে জাবের। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছর পূর্বে তার স্বীয় নূর থেকে তােমার নবীর নুর মুবারক সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর সেই নূর আল্লাহর কুদরতে পরিক্রমন করতে থাকল যেভাবে আল্লাহ চেয়েছেন। তখন কোন ওয়াক্ত, লওহ-কলম, জান্নাত-জাহান্নাম, ফেরেস্থা, আসমান-জমীন, চন্দ্র-সূর্য, জ্বীন-ইনছান কোন কিছুই ছিলনা।.....।”

Reference :

★ মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক এর যুযউল মাফকুদ, ৬৩ পৃ:।
★ আল মাদখাল, ১ম খন্ড, ৩২ পৃ: কৃত: আল্লামা ইবনুল হাজরঃ]; -
★ মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ১ম খন্ড, ৭১ পৃ:
★ শারিহে বুখারী ইমাম কাস্তালানী রহঃ
★ শরহে মাওয়াহেব লিয যুরকানী, ১ম খন্ড, ৮৯ পৃ: আল্লামা ইমাম যুরকানী।
★ তাফহিমাতে ইলাহিয়্যা, ১৯ কৃতঃ শাহ ওয়ালী উল্লাহ মােহাদ্দিসে দেহলবী (রহঃ)
★ নশরুত্তিব, ৫ পৃ: কৃত: মাওলানা আশরাফ আলী থানভী);
★ ছিরাতে হালভিয়া, ১ম খন্ড, ৪৭ পৃ: কৃত: আল্লামা নুরউদ্দিন আলভী রঃ;
★ তাফছিরে রুহুল মায়ানী, ১ম জিঃ ৯০ পৃ: কৃত: আল্লামা মাহমুদ আলুসী আগদাদী (রহঃ)
★ কাশফুল খাফা, ১ম খন্ড, ২৩৭ পৃ: [কৃত: ইমাম আলুনী রঃ;
★ আছারুল মরফুয়া, ৪২-৪৩ পৃ: কৃত: আব্দুল হাই লাখনভী
★ আল মাউরিদুর রাভী, ২২ পৃ: কৃত: মােল্লা আলী কারী র;
★ ফাওয়ায়ে হাদিছিয়া, ৪৪ কৃত: ইবনে হাজার হায়তামী মক্কী রঃ;
★ আলহাবী লিল যাওয়া, ১ম খন্ড, ৩৮৪ পৃ: কৃত: ইমাম ছিয়তী (রঃ);
★ আদ দুরারুল বাহিয়্যাহ, ৪-৮ : কৃতঃ আল্লামা নববী রঃ

♣ এই হাদিসের সনদ হল:
عن عبد الرزاق عن معمر عن ابن منکدر عن جابر بن عبد الله قال قلت...
“ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (রহঃ),

তিনি মামার (রহঃ) হতে,

তিনি ইবনে মুনকাদির (রহঃ) হতে,

তিনি হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম......।”

উল্লেখিত সনদখানা পুরােটাই বিশুদ্ধ বা ছহীহ।

কিন্তু আফছুছের বিষয় হল, ওহাবীরা নতুন ছাপা মুছান্নাফের কিতাব থেকে এই হাদিসটি পুরােটাই বাদ করে দিয়েছে। পুরাতন কিতাবে এই হাদিস খানা সনদসহ মওজুদ আছে। আর সেই পুরাতন আসল নকশাটি আরবের ডুবাই অঞ্চলে আল্লামা ঈসা মানি হিমইয়ারী (হাফিজাহুল্লাহ) এর সংরক্ষনে রয়েছে এবং সেটার হুবহু স্কেনিং করা পৃষ্টা যুব উল মাফকুদ' কিতাবে তিনি দিয়েছেন। হাদিসখানা যে পূর্ব যুগে মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক' কিতাবে মওজুদ ছিল তার ব্যাপারে বিভিন্ন কিতাবে ইমামগণ সাক্ষ্য প্রদান রয়েছে।
যেমনঃ

→ ইমাম হাফিজ ইবনে হাজার মক্কী (রহঃ),
→ ইমাম আলুনী (রহঃ),
→ ইমাম মাহমুদ আলুছী বাগদাদী হানাফী (রহঃ), → ইমাম বুরহান উদ্দিন আলী হালভী (রহঃ),
→ ইমাম কাস্তালানী (রহঃ),
→ আল্লামা শায়েখ আব্দুল হক মােহাদ্দেছ দেহলভী (রহঃ),
→ আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী (রহঃ),
→ ইমাম যুরকানী (রহঃ),
→ মাওলানা আব্দুল হাই লাখনভী
→ ইমাম নববী (রহঃ),
→ মাওলানা আশরাফ আলী থানভী

তারা প্রত্যেকেই তাদের স্ব স্ব কিতাব সমূহে হাদিসটিকে মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক এর রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তাই যতই কাটাসাট করুক না কেন ওনাদের সাক্ষ্য কাটশাট করতে হলে তাদের সকলের কিতাবই আগে বিকৃত করতে হবে।

নিচে আলাদা করে প্রত্যেক ইমামরা কিভাবে হাদিসটি উল্লেখ করেছেন তা দেওয়া হলঃ

♣ ইমাম আবুল আব্বাস শিহাবুদ্দিন কাস্তালানী (রঃ) (ওফাত ৯২৩ হিজরী) তদীয় কিভাবে এভাবে হাদিসটি উল্লেখ করেছেন, ....।

“ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (রঃ) তার সনদে হজরত জাবের (রাঃ) হতে হাদিস বর্ণনা করেছেন.....।" (ইমাম কাতালানী: মাওয়াহেদুনিমী, ১ম খন্ড, ৪৮ পৃঃ)

♣ ইমাম যুরকানী (রঃ) তার "শরহে মাওয়াহেব" এর মধ্যেও হাদিসটি ব্যাখ্যাসহ স্বীকৃতি দিয়ে এভাবেই উল্লেখ করেছেন।

অনেকে লিখেছেন, ইমাম কাস্তালানী (রঃ) এই হাদিস খানা ভুলে মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক এর রেফারেন্স দিয়েছে। তারা আরাে লিখেছে, ইমাম কাস্তালানী (রঃ) এর পূর্বে কেউ এই হাদিস উল্লেখ করেননি। অথচ ইমাম কাস্তালানী (রঃ) এর পূর্বেও বহু মােহাদ্দিছ ইমামগণ তাঁদের কিতাবে হাদিস খানা অথবা নূরে মুহাম্মদী (রহঃ) যে প্রথম সৃষ্টি ইহা বর্ণনা করেছেন।
যেমন লক্ষ্য করুন:
♣ ইমাম আবু সা'দ নিছাপুরী আরকুশী (রঃ) (ওফাত ৪০৭ হিজরী} তাঁর সুপ্রসিদ্ধ সিরাত গ্রন্থ “শরফুল মােস্তফা” ১ম খন্ড, ৩০৭ পৃষ্টায় (যা দারুল বাশায়েরুল ইসলামিয়্যা, মক্কাতুল মুকারামা হতে প্রকাশিত হাদিস খানা নিম্মােক্তভাবে উল্লেখ রয়েছে : -

"ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (রহঃ) তাঁর সনদে জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।”

তৎকালীন কোন আলিম এই হাদিসের বিরুদ্ধে কথা বলেননি।

♣ আল্লামা ইয়াহইয়া ইবনে আবু বকর ইবনে মুহাম্মদ ইবনে ইয়াহইয়া আলআমরী হারদ্বী  ওফাত ৮৯৩ হিজরী, তিনি “বাহ্জাতুল মাহফিল ওয়া বাগিয়াতুল আমহালফি তালখিছুল মুযিজাত ওয়াল সিওর ওয়াশ শামায়েল” কিতাবে ১ম খন্ড ১৫ পৃষ্টায় (যা দারুস সদর বইরুত থেকে প্রকাশিত) এই হাদিস খানা এভাবে উল্লেখ করেছেন :-

"ইমাম আব্দুর রাজ্জাক মজবুত সনদে জাবের (রাঃ) এর হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।”
তৎকালীন কোন আলিম এর বিরুদ্ধে সমালােচনা করেননি।

♣ আল্লামা ইমাম হুছাইন ইবনে মুহাম্মদ হুছাইন দিয়ারবকরী (রহঃ) ওফাত ৯৬৬ হিজরী তিনি তাঁর লিখিত তারিখুল খামিছ” কিতাবে হজরত জাবের (রাঃ) এর হাদিসখানা এভাবে উল্লেখ করেছেন,
کما روی عن جابر بن عبد الله الانصاري أنه قال سألت رسول الله صلى الله عليه وسلم عن أول شي خلقه الله قال هونور نبيك يا جابر
-“যেমন হজরত জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, নিশ্চয় তিনি রাসূল (ﷺ) কে আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছেন। প্রিয় নবীজি (ﷺ) বলেছেন: হে জাবের। সেটা তােমার নবীর নূর।”
★ (ইমাম দিয়ার বকরী: তারিখুল খামিছ, ১ম খন্ড, ১৯ পৃঃ)।

♣ ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (রহঃ) এর প্রায় সম-সাময়িক বিশ্ব বিখ্যাত ইমাম আল্লামা হাফিজ ইবনে হাজার হায়তামী মক্কী (রঃ) [ওফাত ৯৭৪ হিজরী] তিনি তার “ফাওয়ায়ে হাদিছিয়্যা” কিতাবের ৪৪ পৃষ্টায় হাদিস খানা মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক এর রেফারেন্সে উল্লেখ করেছেন। যেমন:
فقد أخرج عبد الراق بسنده عن جابر بن عبد الله الأنصاري رضي الله عنهما
-“অবশ্যই আব্দুর রাজ্জাক (রহঃ) তার সনদে হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী (রাঃ) থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন.....।"
★ (ফাতওয়ায়ে হাদিছিয়্যা, ৮৫ পৃঃ)

♣ হাফিজুল হাদিস ইমাম ইবনে হাজার মক্কী (রঃ) তার অন্য কিতাবে বলেন,
وروى عبد الرزاق في مسنده أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: إن الله خلق نور محمد قبل الأشياء من نوره
-ইমাম আব্দুর রাজ্জাক তার মুসনাদে বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয় আল্লাহর নবী (ﷺ) বলেছেন: নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সব কিছুর পূর্বে নূরে মুহাম্মদী সৃষ্টি করেছেন।”
★ (হফিল ইবনে হাজার মক্কী: আশরাফুল অছাইল ফি শরহে শমাইল, ১ম খন্ড, ৩৬ পৃঃ)

♣ আল্লামা মহিউদ্দিন আব্দুল কাদের ইবনে শায়েখ আব্দুল্লাহ আইদারুছ (রঃ) (ওফাত ১০৩৮ হিজরী) তদীয় কিতাবে বলেন,
وروى عبد الرژاق ي ده أن النبي صلى الله عليه وسلم قال إن الله خلق نور تمتد قبل الأشياء من نوره
-“ইমাম আব্দুর রাজ্জাক তার সনদে বর্ণনা করেন, নিশ্চয় আল্লাহর নবী (ﷺ) বলেছেন: আল্লাহ তা'য়ালা সব কিছুর পূর্বে আল্লাহর নূর থেকে নবী পাক (ﷺ) এর নূর সৃষ্টি করেছেন।”
★ (নূরুছ ছাফির আনি আখবারিল কারনিল আশির, ৮ম পূঃ)।

♣ ইমামুশ শায়েখ ইসমাঈল ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল হাদী আল-আজলুনী (রঃ) (ওফাত ১১৬২ হিজরী) তদীয় কিতাবে হাদিসটি উল্লেখ করেছেন এভাবে, ....।
“ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (রহঃ) তার সনদে হজরত জাবের (রাঃ) হতে হাদিস বর্ণনা করেছেন.....।"
★ (ইমাম আজলুনী: কাশফুল খফা, ১ম খন্ড, ২৩৭ পৃ:)।

♣ প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ আল্লামা আব্দুল হাই লাখনভী তদীয় কিতাবের বলেন,

“অবশ্যই প্রথম সৃষ্টি নূরে মুহাম্মদী সৃষ্টির আব্দুর রাজ্জাক (রাঃ) এর রেওয়াতটি প্রমাণিত।”
★ (আল্লামা আব্দুল হাই লখিনভী: আছারুল মারফুয়া, ১ম খন্ড, ৪৩ পৃ)

♣  হাদিসটি আল্লামা নুরুদ্দিন হালভী (রহঃ) (ওফাত ১০৪৪ হিজরী) তদীয় কিতাবে এভাবে উল্লেখ করেছেন,
وقد قال له جابر: یا رسول الله أخبرني عن أول شيء خلقه الله تعالى قبل الأشياء؟ قال: يا جابر إن الله خلق قبل الأشياء نور نبيك من نوره
-“অবশ্যই রাসূল (ﷺ) কে জাবের (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আমাকে বলুন সব কিছুর পূর্বে আল্লাহ কি সৃষ্টি করেছেন? প্রিয় নবীজি (ﷺ) বললেনঃ হে জাবের। সব কিছুর পূর্বে আল্লাহ তাঁর নূর থেকে তােমার নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন।” ★ (ছিরাতে হালভিয়া, ১ম খন্ড, ২১৪ পৃঃ)

♣ হজরত জাবের (রাঃ) এর হাদিসটির সত্যতা আরেকটি রেওয়াত দ্বারা পাওয়া যায়,
ثنا الحسين بن شبيب المكب، حدثنا محمد بن زياد الحريري، عن
قال ابن جرير : فرات بن أبي الفرات، عن معاوية بن كير عن أبيه قال: قال رسول الله صلى الله
ژون) قال: لوح من ثور وقلم بن ثور يجري بما
عليه وسلم: (ن والقلم وما هو كائن إلى يوم القيامة
-“মুয়াবিয়া ইবনে কুররা (রাঃ)

তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: নূন, কলমের শপত এবং যা দ্বারা লিখা হয় এই আয়াত সম্পর্কে রাসূল (ﷺ) বলেছেন: লাওহ নূর থেকে সৃষ্টি, কলম নূর থেকে সৃষ্টি, এভাবেই কেয়ামত পর্যন্ত চলমান থাকবে।”

★ হাফিজ ইবনে কাছির: তাফছিরে ইবনে কাছির, ৮ম বন্ড, ১৮৬ পৃঃ
★ ইমাম ছিয়তী: আল হাবী লিল ফাতওয়া, ১ম খন্ড, ৪২৯ পৃঃ
★ তাফছিরে তাবরী, ২৩তম খন্ড, ১৪৪ পৃ: সূরা কলম এর ১ম আয়াতের ব্যাখ্যায়;
★ ইমাম ছিয়তী: তাফছিরে দুরে মানছুর, ৮ম খন্ড, ২৪১ পৃঃ

♣ এই হাদিসে লাওহ-কলম নূরের তৈরী এই কথা স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। আরেকটি রেওয়াতে পাওয়া যায় আরশ’ নূরের তৈরী। যেমন,
تری علی بخر بن نصر الخولاني المصري، ثنا أسد بن موسی ننا يوف، عن أبي العتيبي ابن بنت وهب بن منبه، عن وهب بن منبه قال إ الله خلق العرش من نور
-“ওহাব ইবনে মুনিয়া (রাঃ) বলেন: নিশ্চয় আল্লাহ তা'য়ালা আরশকে নূর থেকে সৃষ্টি করেছেন।”
★ (তাফছিরে ইবনে আবী হাতেম, হাদিস নং ১০২১৫)।

♣ নূন, লাওহে মাহফুজ ও কলম নূরের সৃষ্টি এই ব্যাপারে আরেকটি রেওয়াত উল্লেখ করা যায়,

وأخرج الرافعي في تاريخ قزوین من طریق وبير عن الضحاك عن ابن عباس قال: قال
ول الله صلى الله عليه وسلم: الكون اللوح المحفوظ والقلم من نور ساطع
-“হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন,
রাসূলে করিম (ﷺ) বলেছেন: নুন, লাওহ, মাহফুজ ও কলম উজ্জল নুর থেকে সৃষ্টি।”
★ (তাফছিরে দুরে মনসুর ৮ম খন্ড, ২৪১ পৃ)

উল্লেখিত হাদিস সমূহ দ্বারা হজরত জাবের (রাঃ) এর নুরের আরাে স্পষ্ট প্রমাণিত হয়। কারণ লওহ-কলম, নূন ও আরশ নূরের তৈরী।
• যা হজরত জাবের (রাঃ) এর নূরের হাদিসে স্পষ্ট বলা হয়েছে।

▓█► ইমাম ছিয়তী (রহঃ) কি জাবের (রাঃ) এর নূরের হাদিসকে জাল বলেছেন?

♣ ইমাম আব্দুর রহমান জালালুদ্দিন ছিয়তী (রহঃ) তার ''আল-হাভী লিল ফাতওয়া নূরে মুহাম্মদী প্রথম সৃষ্টি হওয়ার ব্যাপারে উল্লেখিত হাদিসটি সম্পর্কে বলেছেন:
"ইহার উপর নির্ভর করা যায় এমন কোন সনদ নেই।”
★ (ইমাম ছিয়তী: আল হাভী লিল ফাতওয়া, ১ম খন্ড, ৩৮৬ পৃঃ)

অর্থাৎ ইমাম ছিয়তীর কাছে এর সনদটি অনির্ভরযােগ্য। ইমাম ছিয়তী বলেননি যে, ইহার কোন সনদ নেই। বরং তিনি বলেছেন নির্ভর করার মত সনদ নেই।

▓█► সম্ভবত তিনি ইমাম ছালাভী (রহঃ) এর বর্ণিত হাদিসটি সম্পর্কে এরূপ বলেছেন।
কেননা ইমাম ছিয়তীর উল্লেখিত হাদিসের মতন মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক এর হাদিসের মতনের সাথে সম্পূর্ণ মিল নেই।

সর্বোপরি ইমাম ছিয়তী (রহঃ) এর উল্লেখিত হাদিসখানা ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (রহঃ) বর্ণিত হজরত জাবের (রাঃ) এর হাদিসটি নয়।

কারণ মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক এর হাদিসের মতন এবং ‘আল হাতী লিল ফাতওয়া এর মতনে অনেক ব্যবধান রয়েছে।

তাছাড়া ইমাম ছিয়তী (রহঃ) তার আলােচনার মাঝে কোথাও বলেননি যে, ইহা হজরত জাবের (রাঃ) এর বর্ণিত মুছান্নাফের হাদিস।
তাই ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (রহঃ) এর এই কথা মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক এর হাদিসকে জাল-জয়ীফ বলার কোন সুযােগ নেই।

বরং ইমাম ছিয়তী (রহঃ) মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক এর হাদিসটির সত্যতা স্বীকার করেছেন তার ‘খাছায়েদুল কোবরা" কিতাবে হাদিসটি চয়ন করেছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।
যেমনঃ
♣ শায়েখ আল্লামা গুমারী তার কিতাবে বলেন:
“ইমাম সুয়ূতী (রহঃ) তার "খাছায়েছুল কুবরা" কিতাবে "মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক" এর রেফারেন্সে হাদিস খানা বর্ণনা করেছেন।
★ ইরশাদুত তালেবীন নজীব ইলা মা ফিল মাওলিদিন নাববী মিনাল আকাজিব।
★ হাদিসের নামে জালিয়াতী পৃষ্টা নং ৩২৮।

অতীব আফছুছের বিষয় হল, বর্তমানে সেই ‘খাছায়েদুল কুবরা কিতাব থেকেও এই হাদিসখানা বাদ করে দিয়েছে। আল্লাহ পাক সব সত্যের পিছনে তার প্রমাণ রেখে দেন। যেমন ভড ছালাফীদের অনুচর শায়েখ আব্দুল্লাহ গুমারী' তার কিতাবে ‘খাছাইছুল কুবরায় এই হাদিস থাকার কথাটি স্বীকার করেছেন।

হে মুসলীম ভাতা ও ভগ্নিগণ! এ এক কঠিন মচিবতের জামানা! নবীর দুশমনেরা কিতাব থেকে হাদিস বাদ করে দিচ্ছে স্বার্থের কারণে। এখন আলাহই তার নবীর ইজ্জত রক্ষা করবেন, ইহাই সর্বশেষ প্রত্যাশী।
এছাড়াও মােট ৫২ জন মােহাদ্দিছ হাদিসখানা তাদের স্ব স্ব কিতাবে উল্লেখ করেছেন।
বিশ্ব বিখ্যাত ইমামগণের কেউ হাদিসটিকে জাল-মওজু বলেননি, বরং তাঁরা তাঁদের স্ব স্ব কিতাবে নূরে মুহাম্মদীর স্বপক্ষে এই হাদিস দলিল হিসেবে পেশ করেছেন। যেসকল ইমামগণ এই হাদিস উল্লেখ করেছেন, তাদের সংক্ষিপ্ত তালিকা দেওয়া হল:
১. আল্লামা ইবনে হাজার হায়তামী মক্কী (রহঃ),
২. আল্লামা ইমাম ইয়াহইয়া আল আমরী আল হারদ্বী (রহঃ)
৩. ইমাম কাস্তালানী (রহঃ),
৪. ইমাম যুরকানী (রহঃ),
৫. ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী (রহঃ),
৬. ইমাম দিয়ার বকরী (রহঃ),
৭. ইমাম আবু সাদ নিছাপুরী খারকুশী (রহঃ),
৮. ইমাম ইবনুল হাজ্জ মালেকী (রহঃ),
৯. ইমাম বদরুদ্দিন আইনী (রহঃ),
১০. ইমাম সুলতান মােল্লা আলী ক্বারী (রহঃ)
১১. ইমাম আজলুনী (রহঃ), .
১২. ইমাম শাহ ওলিউল্লাহ মােহাদ্দেছ দেহলভী (রহঃ)
১৩. ইমাম নূরউদ্দিন আলী হালভী (রহঃ),
১৪. ইমাম মাহমুদ আলুছী বাগদাদী (রহঃ),
১৫. মাওলানা আশরাফ আলী থানভী সাহেব, ১৬. মাওলানা আব্দুল হাই লাখনবী সাহেব, 
১৭. ইমাম নববী (রহঃ) প্রমূখ।

প্রথম সৃষ্টি হচ্ছে 'নূর' তারপর অন্ধকার সৃষ্টি হয়েছে। এক কথায় নূরের আগে অন্য কিছু সৃষ্টি করা হয়নি। এ বিষয়ে একাধিক সূত্র বর্ণিত আছে।

♣ বিখ্যাত ঐতিহাসিক ও বিশিষ্ট তাবেঈ মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক (রহঃ) বলেন:
حنی محمد بن حبد، قال: حدثنا سلمة بن الفضل، قال: قال محممد بن إسحاق: كان أول ما خلق الله تبارك وتعالى: التوتر والظلمة
“ইমাম ইবনে জারির তাবারী (রহঃ) মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক (রহঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম নূর সৃষ্টি করেছেন এরপর অন্ধকার সৃষ্টি করেছেন।”
★ তাফছিরে তাবারী শরীফ, ১ম খন্ড, ৪৬০ পৃ: হাদিস নং ৫৯০;
★ ইমাম আইনী: উমদাতুল বারী, ১০ম খন্ড, ৫৪৩ পৃ:

♣ বিশিষ্ট তাবেঈ হজরত কাতাদা (রহঃ) এর বক্তব্য:
ورزی سعید عن قتادة قال: أول ما خلق الله التوتر والظلم
“সাঈদ → হজরত কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আল্লাহ তা'লা সর্বপ্রথম নূর সৃষ্টি করেছেন এরপরে অন্ধকার সৃষ্টি করেছেন।” ★ তাফছিরে কুরতুবী, ২০তম জিলদ ৬১ পৃঃ

সর্বপ্রথম যে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে তা অন্যভাবে আল্লাহর নবী (ﷺ) বলেছেন। যেমনঃ

“হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন,
রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন: তখন তার (আদম আলায়হিস সালাম এর) সন্তানদেরকে দেখালেন, ফলে তিনি পারস্পরিক শ্রেষ্ঠত্ব নিরিক্ষা করতে লাগলেন। অবশেষে তিনি একটি নূর দেখতে পেয়ে বললেন: ওহে রব! এই নূর কে? আল্লাহ তা'লা বলেন: সে তােমার পুত্র আহমদ! সেই প্রথম সৃষ্ট, সেই শেষ (শেষে প্রেরিত), সে প্রথম শাফায়াতকারী ও তারই শাফায়াত প্রথম কবুল করা হবে।”
★ ইমাম বায়হাক্কী : দালায়েলুন্নবুয়াত, ৫ম খন্ড, ৪৮৩ পৃ: হাদিস নং ২২১৮;
★ ইমাম খারকুশী : শরফুল মুস্তফা, ১ম খন্ড, ৩০৯ পৃ:
★ ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ৩২০৫৩;
★ ইমাম ছিয়তী: খাইছুল কুবরা, ১ম খন্ড, ১০২ পৃঃ

♣ এই হাদিস সম্পর্কে আহলে হাদিসদের শায়খ নাছিরুদ্দিন আলবানী তার কিতাবে বলেন:

(আলবানী) বলছি: এই হাদিসের সনদ হাছান, ইহার সকল বর্ণনাকারীগণ ইমাম বুখারী (রহঃ) এর বর্ণনাকারী।”
★ আলবানী: সিলছিলায়ে জয়ীফা, হাদিস নং ৬৪৮২

♣ এর সমর্থনে আরেকটি হাদিস উল্লেখ কছি, আল্লামা ইমাম ছা'লাভী (রহঃ) (ওফাত ৪২৭ হিজরী) তদীয় তাফছিরে উল্লেখ করেন,
اخبرنا ابو عثمان سعيد بن محمد بن محمد بن إبراهيم العدل قال: حدثنا أبو الحسين محمد
صور الراعظ قال: حدثنا أبو عمر محمد بن عبد الواحد الزاهد قال: حدثنا محمد ابن
من برنس الكني قال: حلا عيد الله بن عائشة قال: حلتنا حماد بن سلمة عن ثابت عن أنس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: أن الله تعالى خلقني من نور
“হজরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন:
নিশ্চয় আল্লাহ তা'লা তাঁর নূর থেকে আমাকে সৃষ্টি করেছেন.....।”
★ (তাফছিরে ছালাভী, ৭ম খন্ড, ১১১ পৃঃ)

♣ অনুরূপ আরেকটি রেওয়াত উল্লেখ করা যায়,
ابن عباس إن الله عز وجل خلقني من نوره وخلق أبا بكر من نوري وخلق عمر من نور أبي بكر وخلق المؤمنين كلهم من نور عمر غير اليين والمرسلين
-“হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন:
নিশ্চয় আল্লাহ তা'লা আমাকে তার নূর থেকে সৃষ্টি করেছেন।
- আবু বকর (রাঃ) কে আমার নূর হতে,
- উমর (রাঃ) কে আবু বকরের নূর হতে সৃষ্টি করা হয়েছে।
- সকল মুমীনদেরকে উমরের নূর থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে শুধু নবী-রাসূলগণ ব্যতীত।”
★ মুসনাদ আল ফেরদৌছ, হাদিস নং ৬৪০

♣ বিশ্ব বিখ্যাত ইমাম ও হাফিজুল হাদিস, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) (ওফাত ৮৫২ হিজরী) বলেছেন ও হিজরী ১১শ শতাব্দির মােজাদ্দিদ, আল্লামা মােল্লা আলী কারী হানাফী (রহঃ) {ওফাত ১০১৪ হিজরী) সংকলন করেছেন,
قال ابن حجر: اختلفت الروايات في أول المخلوقات، واتا گنا بيتها في شرح شمائل التيني أين أولها الثور الذي خلق منه عليه الشلاة والسلام التاء، تم الترش
-“হাফিজ ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন: প্রথম সৃষ্টি সম্পর্কে রেওয়ায়েত গুলোর মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। এর সার কথা, যেমনটি আমি শরহে শামায়েলে তিরমিজি কিতাবে বলেছি, নিশ্চয় এ গুলাের মধ্যে প্রথম সৃষ্টি হল নূর যা দ্বারা রাসূলে পাক (ﷺ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে। অতঃপর পানি সৃষ্টি করা হয় অতঃপর আরশ সৃষ্টি করা হয়।”
★ (ইমাম মােল্লা আলী কারী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ১ম খন্ড, ২৪১ পৃ:, ৭৯ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়) 

♣ বিভিন্ন কিতাবে এভাবে উল্লেখ আছে,

قال شول الله صلى الله عليه وسلم أول ما خلق الله نوري
-“নবী করিম (ﷺ) বলেন: আল্লাহ পাক সর্ব প্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন।”
★ ইমাম আলুছি আল বাগদাদী হানাফীঃ তাফছিরে রুল মায়ানীঃ , ৮ম খন্ড ৪২৪ পৃঃ ১ম খন্ড, ৯০ পৃ:
★ ইমাম আজলুনীঃ কাশফুল খাফা, ১ম খন্ড ৩১১ পৃঃ
★ ইমাম বদরুদ্দীন আঈনীঃ উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী, ১০ম খন্ড
★ ইমাম মােল্লা আলী কারীঃ মেরকাত শরহে মেসকাত, ১ম খন্ড, ২৭০ পূঃ
★ ইমাম ইসমাঈল হাক্কীঃ তাফছিরে রুহুল বয়ান, ২য় খন্ড, ৪২৯ পূ।
★ আল্লামা মুফতী শফীঃ তাফছিরে মাআরেফুল কোরআন,  সূরা আনআমের শেষের দিকে।
★ ইমাম আব্দুল হক মােহাদ্দিসে দেহলভীঃ মাদারেজুন্নবুয়ত, ১ম খন্ড, ৭ পৃ:
★ তাফছিরে নিছাফুরী,
★ গাউছে পাক আব্দুল কাদের জিলানীঃ ছিররুল আছরার,  ৪৮ পূ হিজরী ১০ম শতকের মােজাদ্দেদ,
★ ভারত উপমহাদেশে যিনি সর্বপ্রথম জাহাজ দিয়ে হাদিসের কিতাব এনেছেন তিনি হলেন "মারকাজুল আসানিদ আল্লামা শায়েখ আব্দুল হক মােহাদ্দেছ দেহলভী" তিনি এই হাদিসকে বিশুদ্ধ বলে অভিমত পেশ করেছেন। (মাদারেজুন্নবুয়্যাত, ১ম খন্ড)।

 
Top