اَلۡحَمۡدُ    لِلہِ    رَبِّ      الۡعٰلَمِیۡنَ     وَالصَّلٰوۃُ    وَالسَّلَامُ     عَلٰی    سَیِّدِ الۡمُرۡسَلِیۡنَ 

اَمَّا  بَعۡدُ فَاَعُوۡذُ بِا للہِ مِنَ الشَّیۡطٰنِ الرَّجِیۡمِ         ؕ بِسۡمِ اللہِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ        ؕ 

বাচ্চাদের হজ্ব 
======== 
দরূদ শরীফের ফযিলত 

নবী করীম, রউফুর রহীম, রাসুলে আমীন صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ   وَاٰلِہٖ   وَسَلَّم   ইরশাদ   করেছেন:   “আল্লাহর  যিকির অধিক করা এবং আমার দরূদ  পড়া দারিদ্রতাকে  দূর  করে।” (আল কাওলুল বাদী, ২৭৩ পৃষ্ঠা) 

আলমে ওয়াজদ মে রুকছা মেরা পার পার হোতা, 
কাশ! মে গুম্বদে খায্‌রা কা কাবুতর হোতা। 

صَلُّوْا  عَلَی الۡحَبِیۡب!                              صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد 

প্রশ্ন: বাচ্চাও কি হজ্ব করতে পারে? 

উত্তর:   জ্বি,  হ্যাঁ!   যেমন:   হযরত  সায়্যিদুনা   আবদুল্লাহ ইবনে  আব্বাস  رَضِیَ  اللہُ    تَعَالٰی   عَنۡہُ    বর্ণনা   করেছেন; ছরকারে দোআলম,  নূরে মুজাস্‌সম, নবীয়ে  আকরাম,  হুযুর صَلَّی اللہُ تَعَالٰی  عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم রূওহা  নামক স্থানে একটি কাফিলার সাথে সাক্ষাত হলে তিনি صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ  وَسَلَّم   জিজ্ঞাসা  করলেন:  এরা  কারা?   তার  আরজ    করলেন;    আমরা    মুসলমান,    অতঃপর    তারা  জিজ্ঞাসা   করল   যে;  আপনি  কে?  তিনি  صَلَّی  اللہُ  تَعَالٰی عَلَیْہِ  وَاٰلِہٖ   وَسَلَّم   ইশরাদ   করলেন:   আল্লাহ   তাআলার  রাসুল।   তাদের   মধ্য   থেকে   একজন  মহিলা   বাচ্চাকে উপরে উঠিয়ে জিজ্ঞাসা করল: কি এরও (বাচ্চারও) হজ্ব হয়ে  যাবে?  ইরশাদ   করলেন:   হ্যাঁ!   এবং   তোমাকেও এর সাওয়াব দেয়া হবে। (মুসলীম, ৬৯৭ পৃষ্ঠা, হাদীস: ১৩৩৬)    প্রসিদ্ধ     মুফাস্‌সির    হাকিমুল    উম্মত     হযরত মুফতি     আহমদ    ইয়ার    খান    رَحۡمَۃُ    اللہِ    تَعَالٰی     عَلَیْہِ বলেছেন: অর্থাৎ বাচ্চাকেও হজ্ব করার সাওয়াব দেওয়া হবে   এবং    তোমাকেও   হজ্ব  করানোর   সাওয়াব   দেয়া হবে।  আরও  বলেছেন: এই   হাদীসে পাক থেকে   বুঝা গেল    যে,   বাচ্চাদের  নেকী   দেয়া  হবে   (বাচ্চাও  নেকী পাবে) বাচ্চার বাবা-মাকেও নেকী দেয়া হবে। অতএব  তাদেরকে নাময, রোজার নিয়মিত আদায়কারী বানান। (মিরাত, ৪র্থ খন্ড, ৮৮ পৃষ্ঠা) 

প্রশ্ন: তাহলে   কি হজ্ব করলে বাচ্চার  ফরয  আদায় হয়ে যাবে? 

উত্তর:  জ্বি,  না!    হজ্বের   শর্ত  সমূহ  থেকে   একটি     শর্ত বালিগ   হওয়াও   রয়েছে।     আর   আমার   আক্বা     আ’লা হযরত ইমাম  আহমদ   রযা  খান رَحۡمَۃُ  اللہِ   تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেছেন: বাচ্চার উপর  হজ্ব  ফরয নয়। যদি করে নেয়  তাহলে  নফল হবে, সাওয়াব বাচ্চাই পাবে।  বাবা এবং অন্যান্য বৃদ্ধরাও শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সাওয়াবে পাবে। আবার  যখন    বালিগ  হওয়র    পর  শর্ত   সমূহ  একত্রিত হবে,      তখন     তার     উপর     হজ্ব     ফরয      হয়ে      যাবে। শিশুকালের      হজ্ব     যথেষ্ট      হবে      না।      (ফাতোওয়ায়ে রযবীয়াহ, ১০ম খন্ড, ৭৭৫ পৃষ্ঠা) 

প্রশ্ন:    হজ্বের   গুরুত্বপূর্ণ    আহকামের    ক্ষেত্রে   বাচ্চাদের  কতটি প্রকার রয়েছে? 

উত্তর: এই  দৃষ্টি ভঙ্গিতে বাচ্চাদের ২টি প্রকার রয়েছে। 

(১)    বিবেকবান:   যে   পাক-নাপাক,   ঝাল-মিষ্টির    স্বাদ পার্থক্য     করতে      পারে।     কারণ      ইসলাম     নাজাতের মাধ্যম। (ইরশাদুস্‌সারী, হাশিয়া   মানাসীক,  ৩৭ পৃষ্ঠা) 

(২) অবুঝ: যে উপরোক্ত কাজ সমূহের বুদ্ধি জ্ঞান রাখে না। 

প্রশ্ন:  বিবেকবান   বাচ্চাদরা    কি  হজ্বের  আহকাম  সমূহ নিজেই আদায় করতে হবে? 

উত্তর:   জ্বি, হ্যাঁ!  বিবেকবান   বাচ্চা নিজেই হজ্বের কাজ সমূহ   আদায়   করবে।   রমী     (অর্থাৎ     পাথর   নিক্ষেপ) ইত্যাদি কাজ ছেড়ে দিলে কাফ্‌ফারা ইত্যাদি ওয়াজিব নয়। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১০৭৫ পৃষ্ঠা) 

প্রশ্ন:  বিবেকবান   বাচ্চা   কিছু কাজ  নিজে  করতে পারে এবং কিছু করতে পারে না তাহলে কি করবে? কাউকে কি নিজের স্থলাভিষিক্ত করতে পারবে? 

উত্তর: হযরত আল্লামা আলী ক্বারী رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেছেন:   যে   কাজ  বিবেকবান   বাচ্চা  নিজেই  করতে   পারে তার মধ্যে  কাউকে নিজের স্থলাবিষিক্ত করা ঠিক নয়   এবং  যে কাজ   নিজে করতে  পারবে  না সেগুলোর মধ্যে    অন্যকে  নিজের  স্থলাবিষিক্ত   করা  সঠিক।   কিন্তু তাওয়াফের পরের দু’রাকাত নামায যদি   নিজে  পরতে নাপারে  তাহলে   অন্য    কেউ  তার   পক্ষ    থেকে  আদায় করতে  পারবে  না। (আল মাসলাকুল মুতাকাসীত  লিল ক্বারী, ১১৩ পৃষ্ঠা) 

অবুঝ বাচ্চার হজ্বের পদ্ধতি 
======== 
প্রশ্ন: অবুঝ বাচ্চা  হজ্বের জরুরি    কাজ  কিভাবে  আদায়  করবে? 

উত্তর: যে কাজ  গুলোতে  নিয়্যত করা   শর্ত রয়েছে;  ঐ  সমস্ত   কাজ   সমূহ   তার    পক্ষ   থেকে   তার   অবিভাবক  আদায়  করবে,   আর  যে  সমস্ত    কাজের    মধ্যে  নিয়্যত করা   শর্ত      নয়  সেগুলো  নিজেই  করতে  পারবে,  আর  ফকিহগণ رَحِمَہُمُ   اللہُ  السَّلَام  বলেন: অবুঝ বাচ্চা যদি  ইহরাম বাঁধল অথবা  হজ্বের  কাজ   সমূহ সম্পন্ন   করল, তাহলে  হজ্ব আদায় হল না। বরং তার  অবিভাবক  তার পক্ষ  থেকে  আদায়    করবে।   কিন্তু   তাওয়াফের   পরের  দু’রাকাত যা বাচ্চার পক্ষ থেকে তার অবিভাবক আদায় করবে  না।  তার  সাথে  বাবা  এবং  ভাই  দুইজনই হলে বাবা আরকান সমূহ   আদায়  করবে।   (আলমগিরী, ১ম খন্ড,   ২৩৬ পৃষ্ঠা। বাহারে  শরীয়াত,  ১ম  খন্ড, ১০৭৫ পৃষ্ঠা) সদরুশ শরীয়াহ, বদরুত তরিকা হযরত মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ আমজাদ  আলী আজমী رَحۡمَۃُ اللہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেছেন: এই (অবুঝ   বাচ্চা অথবা পাগল) নিজে ঐ কাজ সমূহ করতে পারবে না, যার মধ্যে নিয়্যত করা জরুরি। যেমন: ইহরাম বাঁধা অথবা তাওয়াফ করা বরং তার   পক্ষ  থেকে  যেন অন্য  কেউ করে, আর যে কাজে নিয়্যত করা শর্ত নয় যেমন:  উকুফে  আরাফাত নিজেই করতে  পারবে।  (বাহারে   শরীয়াত,   ১ম   খন্ড,  ১০৪৬ পৃষ্ঠা) 

প্রশ্ন: কি ইহরামের পূর্বে বাচ্চাদেরকেও গোসল করাতে হবে? 

উত্তর:  জ্বি,  হ্যাঁ!  ফতোওয়ায়ে     শামী,  ৩য়  খন্ড,  ৫৫৭ পৃষ্ঠার মধ্যে লিখিত অংশের সারাংশ হচ্ছে: বিবেকবান  বাচ্চা    এবং     অবুঝ    বাচ্চা      উভয়ই     গোসল     করবে। অন্যথায়  এই   পার্থক্য    আছে    যে,  বিবেকবানের  জন্য নিজেই গোসল করা মুশতাহাব এবং অবিভাবকের জন্য গোসলের আদেশ দেয়া মুশতাহাব এবং অবুঝ বাচ্চাকে অবিভাবকের জন্য অথবা মা ইত্যাদির সাহায্যে গোসল করানো মুশতাহাব হবে। 

প্রশ্ন:    অবুঝ    বাচ্চাকে    কি    ইহরাম    পরিধান    করাতে  হবে? 

উত্তর:   জ্বি,   হ্যাঁ!  এমন  করা   উচিৎ  যে,  অবুঝ  বাচ্চার সেলাই করা  পোশাক  খুলে  চাদর তেহবন্দ  অভিবাবক অথবা অন্য কেউ পরিধান করিয়ে দিবে। 

কিন্তু  তার  পক্ষ  থেকে  বাবা,  বাবা  না  হলে  ভাই  এবং  ভাই   না   হলে    অন্য  কেউ  তার  রক্তের  ক্ষেত্রে  আত্মীয় হলে সে, তার পক্ষ থেকে ইহরমের নিয়্যত করবে, আর ঐ     কাজ    সমূহ    থেকে     বাঁচাবে    যা    মুহরিমের     জন্য নাজায়েয, আর সদরুশ  শরীয়া,  বদরুত  তরিকা হযরত আল্লামা     মাওলানা    মুফতি    মুহাম্মদ     আমজাদ    আলী আজমী    رَحۡمَۃُ   اللہِ  تَعَالٰی  عَلَیْہِ  বলেছেন:  বাচ্চার  পক্ষ থেকে  ইহরাম  বাঁধলে,  তবে  তার  সেলাইকৃত  কাপড়  খুলে     নেওয়া   উচিৎ।   চাদর     এবং   তেহবন্দ   পরিধান করিয়ে দেয়া  এবং  ঐ  সমস্ত কাজ   সমূহ থেকে বাঁচাবে  যা  মুহরিমের  জন্য  নাজায়েয।  (বাহারে  শরীয়াত,  ১ম  খন্ড,     ৬ষ্ঠ      অংশ,     ১০৭৫    পৃষ্ঠা)    বিবেকবান    বাচ্চা ইহরামের নিয়্যত নিজেই করবে। অবিভাবক তার পক্ষ থেকে ইহরাম বাঁধতে  পারবে না। যেমন; শামীর  মধ্যে রয়েছে:  যদি  বাচ্চা     বিবেকবান    হয়,   তাহলে  তাকেই ইহরাম   বাঁধতে     হবে।    অবিভাবক    তার   পক্ষ    থেকে  বাঁধতে     পারবে     না,     কেননা    জায়েয     নেই।     (রদ্দুল মুহতার,  ৩য়  খন্ড,  ৫৩৫ পৃষ্ঠা) যদি বিবেকবান বাচ্চা   নিজেই  ইহরাম   বাঁধার  ক্ষমতা   রাখে,  তাহলে   তাকেই ইহরাম    বাঁধতে   হবে।   অবিভাবক     তার    পক্ষ    থেকে  ইহরাম    বাঁধতে   পারবে    না।     যদি   বিবেকবান    বাচ্চা নিজেই     ইহরাম     বাঁধার    ক্ষমতা     না    রাখে,     তাহলে   অবিভাবক তার পক্ষ থেকে ইহরাম বাঁধবে। 

প্রশ্ন: অবুঝ বাচ্চার পক্ষ থেকে অবিভাবক কি ইহরামের নফল পড়তে পারবে? 

উত্তর:  জ্বি,  না।     অবুঝ   বচ্চার  পক্ষ  থেকে  অবিভাবক ইহরামের নফল পড়তে পারবে না। 

অবুঝ বাচ্চার   পক্ষ থেকে নিয়্যত  এবং  লাব্বাইকা  এর নিয়ম 
=========== 
প্রশ্ন: অবুঝ বাচ্চার পক্ষ থেকে নিয়্যত  এবং লাব্বাইকা  এর নিয়ম বলে দিন। 

উত্তর:  অবুঝ বাচ্চার পক্ষ থেকে ইহরামের নিয়্যত তার অবিভাবক   করবে,  আর  এভাবে   বলবে     اَحۡرَمۡتُ  عَنۡ فُلانٍঅর্থাৎ   আমি   অমুকের  পক্ষ  থেকে  ইহরাম  বাঁধার নিয়্যত  করছি। (অমুকের জায়গায় বাচ্চার নাম নিবে।) অনুরূপভাবে  লাব্বাইকাও  এরকম   বলবে:     لَبَّيۡک  عَنۡ  فُلانٍ   (অমুকের জায়গায়   বাচ্চার নাম   নিবে এবং শেষ পর্যন্ত    لَبَّیْکَ  সম্পন্ন  করবে)   আরবিতে   নিয়্যত  তখনই কার্জকর   হবে,   যখন  এর  অর্থ  জানা    থাকবে।  আপন মাতৃভাষায়     নিয়্যত    করতে    পারেন।   যেমন:    হেলাল রযা’র  পক্ষ   থেকে ইহরাম  বাঁধছি। এটাও মনে রাখতে হবে,   অন্তরে  নিয়্যত   হওয়াটা  শর্ত।     যেহেতু   উচ্চারণ করে নিয়্যত করা মুশতাহাব।   যদি  মুখ থেকে উচ্চারণ  করে     নিয়্যত  না  করে,   তাহলে  কোন  অসুবিধা  নেই। لَبَّیْکَ লাব্বাইকা উচ্চারণ করে বলা জরুরি, আর সেটাও যেন  কমপক্ষে  এত  আওয়াজে  হয়,  যাতে  কোন  বাঁধা  ছাড়া নিজে  শুনতে  পারে এবং এখানে  এভাবে বলবে যে, যেমন: 

لَبَّیْکَ    عَن ہِلال  رضا  اَللّٰھُمَّ   لَبَّیْکَ ط لَبَّیْکَ لَا شَرِیْکَ  لَکَ لَبَّیْکَ ط اِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَۃَ لَکَ وَالْمُلْکَ ط لَاشَرِیْکَ لَکَ ط 

অবুঝের পক্ষ থেকে তাওয়াফের নিয়্যত 
এবং ইসতিলাম করার নিয়ম 
======== 
প্রশ্ন: অবুঝ বাচ্চার পক্ষ থেকে তাওয়াফের এবং হাজরে আসওয়াদের       ইসতিলামের      নিয়্যতের     নিয়ম     বলে দিন। 

উত্তর: অন্তরে   নিয়্যত যথেষ্ট। উত্তম  হচ্ছে মুখ  থেকেও যেন  এভাবে উচ্চারণ  করে   নেয়, যেমন: আমি  হেলাল রযার পক্ষ থেকে তাওয়াফের ৭ চক্করের নিয়্যত করছি। এরপর  যা  ইসতিলাম হবে, সেটাও বাচ্চার  পক্ষ থেকে হবে। 

প্রশ্ন: কোলে তুলে তাওয়াফ করাবে না আঙ্গুল ধরে? 

উত্তর: যেভাবে সুবিধা হয় সেভাবে। 

প্রশ্ন:      তাওয়াফের      সময়       কি      অবিভাবক        নিজের তাওয়াফেরও নিয়্যত করতে পারে? 

উত্তর: জ্বি,  হ্যাঁ!  বরং  করে নেওয়া উচিৎ। এভাবে এক সাথে দু’জনের  তাওয়াফ  হয়ে যাবে। কিন্তু  এটা  স্মরণ   রাখবেন! প্রত্যেক চক্করের পর দু’বার ইসতিলাম করতে হবে। একবার নিজের পক্ষ থেকে আর একবার বাচ্চার পক্ষ থেকে। 

প্রশ্ন: বাচ্চা কিভাবে তাওয়াফ করবে? 

উত্তর:     বিবেকবান      বাচ্চা      নিজেই      তাওয়াফ     করে   তাওয়াফের     নফল     আদায়    করবে।    এক্ষেত্রে    অবুঝ বাচ্চাকে     তার    অবিভাবক     তাওয়াফ    করাবে।     কিন্তু  তাওয়াফের      দু’রাকাত     নফল     বাচ্চার      পক্ষ      থেকে  অবিভাবক  আদায়  করবে  না।  (বাহারে  শরীয়াত,  ১ম  খন্ড, ১০৭৫ পৃষ্ঠা) 

প্রশ্ন: বাচ্চাকে রমী কীভাবে করাবো? 

উত্তর:   বিবেকবান   বাচ্চা      নিজেই     রমী   করবে   এবং অবুঝ   বাচ্চার    পক্ষ  থেকে  তার  সাথে  যে  থাকবে   সে করবে।   উত্তম   এটাই   তার   হাতে   কংকর   রেখে   রমী  কারা।         (সুনসাক         মুতাওয়াসাত,          ২৪৭          পৃষ্ঠা।  ফাতোওয়ায়ে  রযবীয়া,  ১০  খন্ড,  ৬৬৭  পৃষ্ঠা।  বাহরে  শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১৪৮ পৃষ্ঠা) 

প্রশ্ন:  বাচ্চার  হজ্বের   জরুরি  আহকাম   কিছু  বাকী  রইল অথবা সে এমন কাজ করল, যার কারণে কাফ্‌ফারা বা দম ওয়াজিব হয়ে যায়, তাহলে কি করবে? 

উত্তর: যদি বাচ্চা কোন কাজ ছেড়ে দেয় অথাব নিষিদ্ধ কাজ করে, তাহলে  তার উপর না কাযা ওয়াজিব,  আর না  কাফ্‌ফারা।  অনুরূপভাবে  বাচ্চার  পক্ষ  থেকে  বাবা  ইহরাম  বাঁধল   এবং  বাচ্চা   কিছু  নিষিদ্ধ    কাজ    করল,  তাহলে  বাবার  উপরও  কোন  কিছু   ওয়াজিব  হবে  না।  (আলমগিরী,  ১ম  খন্ড,  ২৩৬   পৃষ্ঠা। বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১০৭০ পৃষ্ঠা) 

প্রশ্ন:   বাচ্চা   যদি   হজ্ব   ফাসিদ   করে   দেয়,   তাখন   কি  করতে হবে? 

উত্তর: বাচ্চা যদি হজ্ব ফাসিদ করে দেয়, তাহলে না দম ওয়াজিব   হবে  না  কাযা।   বাচ্চা    বিবেকবান    হোক  না কেন।    (আলমগিরী,    ১ম     খন্ড,    ২৩৬     পৃষ্ঠা।     রদ্দুল মুহতার, ৩য় খন্ড, ৬৭৩ পৃষ্ঠা) 

প্রশ্ন: বাচ্চার জন্য হজ্বের কুরবানীর কি হুকুম আছে? 

উত্তর:  বাচ্চা  বিবেকবান হোক অথবা অবুঝ তার উপর (তামাত্তু হজ্ব অথবা কিরান)  কুরবানী  ওয়াজিব হবে না এবং  হজ্জ্বে  ইফরাদে  বৃদ্ধদের   উপরেও হয়  না।  (আল মাসলাকুর মুতাকাসীত লিল ক্বারী, ৬২৩ পৃষ্ঠা) 

প্রশ্ন: যদি অবিভাবক বাচ্চার পক্ষ থেকে হজ্বের কুরবানী করতে চায়, তাহলে করতে পারবে কি পারবে না? 

উত্তর: করতে পারে। কিন্তু নিজের ব্যক্তিগত টাকা দিয়ে করবে।   বাচ্চার    টাকা  দিয়ে    করলে  ক্ষতিপুরন  দিতে  হবে। অর্থাৎ ঐ   পরিমান টাকা   বাচ্চাকে    ফেরত দিতে হবে। 

অবুঝ  বাচ্চার ওমরা করার পদ্ধতি 
======== 
প্রশ্ন:    বাচ্চাকে   কি   ওমরা   করানো   যাবে?   যদি     যায় তাহলে পদ্ধতি কি? 

উত্তর: হ্যাঁ! করানো যাবে।  মাসআলার মধ্যে  এখানেও ঐ   বিবেকবান    ও   অবুঝ   বাচ্চার    মাসআলা   রয়েছে।  অতএব এর মধ্যে অতিরিক্ত মাসআলা এটাই যে, অতি ছোট শিশুকে মসজিদে প্রবেশ করার আহকামের উপর লক্ষ্য   করতে   হবে।    হুকুম   এটাই    যে,   বাচ্চা      থেকে  নাপাকী   বের   হওয়ার   কাঠোর   ধারণা   আছে,   তাহলে  তাকে     মসজিদে     নিয়ে     যাওয়া     মাকরূহে     তাহরীমী  অন্যথায় মাকরূহে তানযিহী। 

প্রশ্ন:  বাচ্চাদের কি  চুল কাটানো অথবা মুন্ডানো  যেতে পারে কি না? 

উত্তর: জ্বি, হ্যাঁ! মেয়ে বাচ্চাকে চুল কাটাতে হবে। যদি   দুধ পানকারী শিশু অথবা খুবই  ছোট বাচ্চা হয় তাহলে মুন্ডন করাতে কোন অসুবিধা নেই। 

বাচ্চা এবং নফলী তাওয়াফ 

প্রশ্ন:   নফল   তাওয়াফের     মধ্যে   বাচ্চাদের     কি    হুকুম রয়েছে? 

উত্তর:   বিবেকবান    বাচ্চা  নিজেই  নিয়্যত  করবে   এবং তাওয়াফের   পরের   নফল   ও   আদায়   করবে।   অন্যত্র  অবুঝ     বাচ্চার   পক্ষ   থেকে      তার   অবিভাবক    নিয়্যত করবে। তাওয়াফের পরের নফলের প্রয়োজন নেই। 

প্রশ্ন:     বাচ্চা    যদি    ইহরাম   ব্যতীত   মীকাতের   ভিতরে প্রবেশ করে এবং এখন বালিগ হয়ে গেল, তাহলে তার উপর কি দম ওযাজিব হবে? 

উত্তর:  না।  বাহারে শরীয়াতের ১ম খন্ড, ১১৯২ পৃষ্ঠার মধ্যে      রয়েছে:     নাবালিগ      ইহরাম      ব্যতীত      মীকাত অতিক্রম করল, তারপর বালিগ হয়ে গেল এবং সেখান থেকেই ইহরাম বেঁধে নিল, তাহলে   দম ওয়াজিব  হবে  না।   এমনিতে  যদি   সে  ‘হিলী’অর্থাৎ   হারামের  বাহিরে এবং  মীকাতের  সিমানার  ভিতরে  বালিগ  হল,  তাহলে হিলস্নী আহকাম তার উপর অপরিহার্য হবে। অর্থাৎ হজ্ব অথবা   ওমরার  জন্য     হারম  যেতে  হয়   তাহলে  ‘হিলী’ থেকে   ইহরাম  বেঁধে নিবে  এবং  অন্যত্রে   হারম শরীফ যেতে হয়, তাহলে  ইহরাম   ব্যতীতও যেতে পারে এবং হারমের মধ্যে বালিগ   হয়,    তাহলে  হারামের আহকাম অপরিহার্য   হয়ে   যাবে  অর্থাৎ   হজ্বের   ইহরাম  হারমের  মধ্যে    বাঁধবে    এবং    ওমরার    ইহরাম    হারম    শরীফে  বাহিরে থেকে  এবং যদি কোন   কিছু না     করে,  তাহলে ইহরাম বাঁধার প্রয়োজন নেই। 

প্রশ্ন:   মাদানী    মুন্না   অথবা    মাদানী    মুন্নীকে   মসজিদে নববী শরীফে    عَلٰی  صَاحِبِہَا الصَّلٰوۃُ وَالسَّلَام এর মধ্যে নিয়ে যেতে পারি কি না? 

উত্তর: ছরকারে মদীনা,  নবী করীম صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ  وَسَلَّم   ইরশাদ করেছেন:  “মসজিদ  সমূহকে বাচ্চা  থেকে এবং পাগল এবং ঝগড়া এবং বেচা কেনা, উচ্চ আওয়াজ    করা,     সীমা    কায়েম    করা     এবং    তরবারী টাঙ্গানো   থেকে    বাচাও।”   (ইবনে   মাজাহ,    ১ম   খন্ড, ৪১৫   পৃষ্ঠা,    হাদীস;   ৭৫০)   এমন   বাচ্চা   যার    থেকে নাজাসাত       অর্থাৎ    (প্রস্রাব,     পায়খানা    ইত্যাদি)    এর সম্ভাবনা   রয়েছে   এবং   পাগলকে   মসজিদের    ভিতরে  নিয়ে   যাওয়া   হারাম।   যদি   নাজাসাতের   সম্ভাবনা   না  থাকে তাহলে মাকরূহে  তানযিহী। যারা   জুতা সেন্ডেল মসজিদের   ভিতরে  নিয়ে  যায়  তাদেরকে   এটার  লক্ষ্য রাখা   উচিৎ  যে,  যদি   নাজাসাত  লেগে  থাকে   তাহলে   সেগুলো ভাল  করে  পবিত্র  এবং  পরিষ্কার করে,  যাতে  নাজাসাত না থাকে এবং না তার দুর্গন্ধ। অতঃপর পাক করল  না,   কিন্তু   এমন  ভাবে  পরিষ্কার   করে   যাতে  না মসজিদ   অপবিত্র  হওয়ার   সম্ভাবনা    রয়েছে,   আর   না নাজাসাতে    দুর্গন্ধ      অবশিষ্ট      থাকে।    তাহলে     আবার নাজায়েয হবে না। 

অতএব এটা মনে রাখবেন! জুতা পাক হলেও মসজিদে পরিধান   করে  যাওয়া   বেয়াদবী।    অবুঝ   বাচ্চা  অথবা পাগল (অথবা  বেহুশ   অথবা যার  উপর জ্বীন  এসেছে) দম করানোর জন্য পেম্পার (ঢ়বসঢ়বৎ) লাগানো হোক, তবুও     মসজিদে    নিয়ে    যাওয়া    উপরোক্ত    মাসআলা   অনুযায়ী   নিষেধ   রয়েছে   এবং      যদি     আপনি    তাদের মসজিদে  নিয়ে  যাওয়ার    ভুল  করে  বসেন,  যার  হুকুম নাজায়েয    সম্পন্ন,     তাহলে     দয়া    করে     তাড়াতাড়ী  তাওবা করে  পরবর্তীতে না নেয়ার প্রতিজ্ঞা  করে নিন। হ্যাঁ! ফিনায়ে মসজিদ যেমন; ইমাম সাহেবের হুজরাতে নিয়ে    যেতে    পারেন,    যদি    মসজিদের    ভিতর    দিয়ে  অতিক্রম করতে না হয়।  যদি সাধারণ মসজিদের  এই  ধরনের    আদব   হয়ে   থাকে,   তাহলে   মসজিদে    নববী শরীফ   عَلٰی   صَاحِبِہَا   الصَّلٰوۃُ   وَالسَّلَام   এবং   মসজিদে  হারম  শরীফের    কি  রকম  আদব  হবে।   এটা  প্রত্যেক আশিকে রাসুল   ভালই বুঝতে পরে।   এই দুই মসজিদ বাচ্চাদের     থেকে    বাঁচানো    খুবই    জরুরি।       আজকাল বাচ্চারা  সেখানে   চিৎকার,  হৈ-চৈ  করতে   থাকে   এবং  কিছু সময় مَعَاذَ اللہ عَزَّوَجَلَّ ময়লা আবর্জনা ত্যাগ করে দেয়।    কিন্তু    আফসোস   যে  বাচ্চাকে  নিয়ে  যায়,   তার কোন  খেয়াল   থাকে না। নিঃস্বন্দেহে এই বাচ্চা  অবুঝ, তাদের কোন দোষ নেই। কিন্তু এই গুনাহ যে বাচ্চাদের নিয়ে যায় তার উপর। যদি বিবেকবান বাচ্চাকেও নিয়ে আসে,  তাহলে  তার উপর   কঠোর লক্ষ্য  রাখতে  হবে।  যেন  লাফা-লাফী  করে  লোকদের  ইবাদতের  সমস্যার  কারণ না হয়। 

বাচ্চা এবং রওজায়ে আনওয়ারে হাজিরী 
======== 
প্রশ্ন: তাহলে অবুঝ বাচ্চাদের সোনালী জালীর  সামানে হাজেরী দেওয়ার অবস্থা কি রকম? 

উত্তর:  এর  জন্য  মসজিদ  শরীফে  আনতে  হবে।  তার  আহকাম উপরেই  উলেস্নখ  করা হল। অতএব মসজিদ শরীফের বাইরে  সবুজ  সবুজ গুম্বদের  সামনে হাজেরী   করিয়ে দিন। 

প্রশ্ন:   উলেস্নখিত   হজ্ব    ও   ওমরা   ইত্যাদির    সম্পর্কের  সাথে মেয়ে বাচ্চারও এটাই হুকুম? 

উত্তর: জ্বি, হ্যাঁ! 

এই কিতাবটি শায়খে তরিকত, আমীরে আহ্‌লে সুন্নাত, দা’ওয়াতে      ইসলামীর      প্রতিষ্ঠাতা        হযরত      আল্লামা  মাওলানা     আবু     বিলাল     মুহাম্মদ     ইলইয়াস     আত্তার  কাদেরী   রযবী      دَامَتۡ   بَرَکاتُہُمُ   الۡعَالِیَہ     উর্দূ      ভাষায়  লিখেছেন।    দা’ওয়াতে   ইসলামীর   অনুবাদ   মজলিশ এই    কিতাবটিকে    বাংলাতে  অনুবাদ  করেছে।      যদি অনুবাদ,    কম্পোজ    বা   প্রিন্টিং    এ      কোন      প্রকারের ভুলত্রুটি    আপনার দৃষ্টিগোচর     হয়, তাহলে   অনুগ্রহ   করে  মজলিশকে  লিখিতভাবে  জানিয়ে প্রচুর সাওয়াব হাসিল করুন। 

(মৌখিকভাবে বলার   চেয়ে লিখিতভাবে  জানালে বেশি উপকার হয়।)
 
Top