পাত্র-পাত্রী নির্বাচন


ইসলাম পাত্রকে তার পাত্রী এবং পাত্রীকে তার পাত্র নির্বাচনের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে। কোন অভিভাবক তাদের অধীনস্থ নর-নারীকে তাদের অসম্মতিতে জোর-জবরদস্তী বিবাহ দিতে পারে না। 


বিয়ের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানব অস্তিত্বের ধারা অব্যাহত রাখা, বৈধভাবে যৌনতৃপ্তি অর্জন এবং স্নেহ-ভালোবাসা, সহানুভূতি ও নিঃস্বার্থ সেবাভিত্তিক সুস্থ সমাজ গড়ে তোলা। এজন্যে একজন উত্তম স্ত্রী কেবল সেই নারীই হতে পারে, যে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে পূর্ণ সজাগ রয়েছে এবং উত্তম পন্থায় তার স্ত্রীসুলভ দায়িত্ব পালনে সক্ষম, নীতি, চরিত্র ও জ্ঞান বুদ্ধিতে হবে সেই নারী আদর্শস্থানীয়। সুতরাং এমন স্ত্রী নির্বাচন করতে হবে যার অন্তর হবে ঈমানের আলোকে উজ্জ্বল এবং কথায় ও কাজে হবে যথার্থ মুসলিম। যার চরিত্র হবে উন্নত, যে শিক্ষায় ও সততায় হবে সুন্দর, শ্লীলতা-শালীনতা, পবিত্রতা ও আত্মমর্যাদার ব্যাপারে হবে সচেতন ও সজাগ। 


সমাজে এমন লোক আছে যারা জীবনের আসল সুখ-সমৃদ্ধি সম্পর্কে অজ্ঞ। তারা বিয়েকে ধন-সম্পদ অর্জনের মাধ্যম মনে করে। তারা পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে কেবল সম্পদকেই প্রাধান্য দেয়। তারা ওসব পাত্রীই অন্বেষণ করে যাকে বিয়ে করলে ধন-সম্পদের মালিক হওয়া যায়। এতে বিয়ের আসল উদ্দেশ্য পূর্ণ হয় না এবং সামান্য অর্থলোভে দীর্ঘমেয়াদি সুখ-সমৃদ্ধি থেকে নিজেকে বঞ্চিত করে। নবী করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন- “তোমরা ধন-সম্পদের ভিত্তিতে নারীদের বিয়ে করো না, কেননা এতে করে তাদের অবাধ্য হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”৭৯

৭৯.ইবনে মাজাহ, বায়হাকী, সূত্র. আলবাহী আলখাওলী, ইসলামে নারী, পৃ. ৭৮

 

পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে মহানবী (ﷺ) চারটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করলেও দ্বীনদারীকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। হযরত হোরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেছেন

-تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ: لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَلِجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا فَاظْفَرْ بِذَات الدّين 

সাধারণত চারটি বৈশিষ্ট্যের কারণে কোন মেয়েকে বিবাহ করা হয়। তার সম্পদ, তার সৌন্দর্য্য, তার বংশমর্যাদা ও তার দ্বীনদারী। তবে তোমরা ধর্মপরায়নতাকেই প্রাধান্য দিবে। ৮০

৮০.বুখারী ও মুসলিম, সূত্রঃ মিশকাত, পৃ. ২৬৭


একজন নারী স্বামী নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখতে হবে যে, পাত্র ঈমানদার, মুত্তাকী, পরহেযগার, চরিত্রবান, শিক্ষিত, মিষ্টিভাষী, ভদ্র এবং পরোপকারী কিনা? টাকা-পয়সা, ধন-দৌলত ক্ষণস্থায়ী বস্তু। আজ আছে কাল নেই। রূপ সৌন্দর্যও অস্থায়ী। কিন্তু উপরে বর্ণিত বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো স্থায়ী সৌন্দর্য্য ও সর্বাপেক্ষা বড় সম্পদ। এ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে নবী করিম (ﷺ) নারীজাতিকে পরামর্শস্বরূপ বলেছেন- “যখন তোমাদের কাছে এমনব্যক্তির বিয়ের প্রস্তাব আসে যে সভ্য ও চরিত্রবান তাহলে তার সাথে বিয়ে করে নাও। যদি তা না কর তাহলে পৃথিবীতে বিভেদ-বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়বে।” ৮১

৮১.তিরমিযী, সূত্র. আলবাহী ওয়াল খাওলী, ইসলামে নারী. পৃ. ৮১

 
Top