ষটত্রিংশ অধ্যায়


সব ধরনের অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকার সুন্নাত


১। সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস এ তিনটি সূরা সকাল ও সন্ধ্যা ৩ বার করে পড়লে সব ধরনের অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকা যাবে।


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُصَفَّى، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي فُدَيْكٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ، عَنْ أَبِي أَسِيدٍ الْبَرَّادِ، عَنْ مُعَاذِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ خُبَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّهُ قَالَ خَرَجْنَا فِي لَيْلَةِ مَطَرٍ وَظُلْمَةٍ شَدِيدَةٍ نَطْلُبُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لِيُصَلِّيَ لَنَا فَأَدْرَكْنَاهُ فَقَالَ ‏"‏ أَصَلَّيْتُمْ ‏"‏ ‏.‏ فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا فَقَالَ ‏"‏ قُلْ ‏"‏ ‏.‏ فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا ثُمَّ قَالَ ‏"‏ قُلْ ‏"‏ ‏.‏ فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا ثُمَّ قَالَ ‏"‏ قُلْ ‏"‏ ‏.‏ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا أَقُولُ قَالَ ‏"‏ ‏{‏ قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ ‏}‏ وَالْمُعَوِّذَتَيْنِ حِينَ تُمْسِي وَحِينَ تُصْبِحُ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ تَكْفِيكَ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ ‏"‏ ‏.


মু’আয ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু খুবাইব رضي الله عنه হতে তার পিতা থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেন, এক বর্ষণমুখর খুবই অন্ধকার কালো রাতে আমাদের সলাত পড়াবার জন্য আমরা রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে খুঁজছিলাম। আমরা তাঁকে পেয়ে গেলাম। তিনি বললেনঃ বলো। আমি কিছুই বললাম না। পুনরায় তিনি বললেন, বলো। আমি কিছই বললাম না। তিনি আবার বললেনঃ বলো। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ‌র রাসুল! কি বলবো? তিনি বললেনঃ তুমি সন্ধ্যায় ও সকালে উপনীত হয়ে তিনবার সূরাহ কুল হুয়াল্লাহু (সূরা ইখলাস), সূরাহ নাস ও ফালাক্ব পড়বে; এতে তুমি যাবতীয় অনিষ্ট হতে রক্ষা পাবে।


(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৫০৮২, তিরমিযী, নাসায়ী।)



২। প্রতি ফরজ সালাতের পর সূরা ইখলাস ফালাক ও নাস এ তিনটি সূরা একবার করে পাঠ করতে হবে। 


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُصَفَّى، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي فُدَيْكٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ، عَنْ أَبِي أَسِيدٍ الْبَرَّادِ، عَنْ مُعَاذِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ خُبَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّهُ قَالَ خَرَجْنَا فِي لَيْلَةِ مَطَرٍ وَظُلْمَةٍ شَدِيدَةٍ نَطْلُبُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لِيُصَلِّيَ لَنَا فَأَدْرَكْنَاهُ فَقَالَ ‏"‏ أَصَلَّيْتُمْ ‏"‏ ‏.‏ فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا فَقَالَ ‏"‏ قُلْ ‏"‏ ‏.‏ فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا ثُمَّ قَالَ ‏"‏ قُلْ ‏"‏ ‏.‏ فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا ثُمَّ قَالَ ‏"‏ قُلْ ‏"‏ ‏.‏ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا أَقُولُ قَالَ ‏"‏ ‏{‏ قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ ‏}‏ وَالْمُعَوِّذَتَيْنِ حِينَ تُمْسِي وَحِينَ تُصْبِحُ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ تَكْفِيكَ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ ‏"‏ ‏.


মু’আয ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু খুবাইব رضي الله عنه হতে তার পিতা থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেন, এক বর্ষণমুখর খুবই অন্ধকার কালো রাতে আমাদের সলাত পড়াবার জন্য আমরা রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে খুঁজছিলাম। আমরা তাঁকে পেয়ে গেলাম। তিনি বললেনঃ বলো। আমি কিছুই বললাম না। পুনরায় তিনি বললেন, বলো। আমি কিছই বললাম না। তিনি আবার বললেনঃ বলো। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ‌র রাসুল! কি বলবো? তিনি বললেনঃ তুমি সন্ধ্যায় ও সকালে উপনীত হয়ে তিনবার সূরাহ কুল হুয়াল্লাহু (সূরা ইখলাস), সূরাহ নাস ও ফালাক্ব পড়বে; এতে তুমি যাবতীয় অনিষ্ট হতে রক্ষা পাবে।


(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৫০৮২, তিরমিযী, নাসায়ী।)



৩। নবী ﷺ রাতে ঘুমানোর পূর্বে সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস একবার করে পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে  সমস্ত শরীরে একবার বুলিয়ে দিতেন। এভাবে তিনি ৩ বার করতেন।


حَدَّثَنَا عَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ بْنِ أَبِي فُدَيْكٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْبَرَّادِ، عَنْ مُعَاذِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ خُبَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ خَرَجْنَا فِي لَيْلَةٍ مَطِيرَةٍ وَظُلْمَةٍ شَدِيدَةٍ نَطْلُبُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي لَنَا - قَالَ - فَأَدْرَكْتُهُ فَقَالَ ‏"‏ قُلْ ‏"‏ ‏.‏ فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا ثُمَّ قَالَ ‏"‏ قُلْ ‏"‏ ‏.‏ فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا ‏.‏ قَالَ ‏"‏ قُلْ ‏"‏ ‏.‏ قُلْتُ مَا أَقُولُ قَالَ ‏"‏ قُلْ ‏:‏ ‏(‏ هوَ اللَّهُ أَحَدٌ ‏)‏ وَالْمُعَوِّذَتَيْنِ حِينَ تُمْسِي وَتُصْبِحُ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ تَكْفِيكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى وَهَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ وَأَبُو سَعِيدٍ الْبَرَّادُ هُوَ أَسِيدُ بْنُ أَبِي أَسِيدٍ مَدَنِيٌّ ‏.


আবদুল্লাহ ইবনু খুবাইব رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেন, এক ঘুটঘুটে অন্ধকার ও বৃষ্টিমুখর রাতে আমাদের নামায আদায় করানোর জন্য আমরা রাসুলুল্লাহ ﷺ এর সন্ধানে বের হলাম। আমি তাঁর দেখা পেলে তিনি বললেনঃ বল। কিন্তু আমি কিছুই বললাম না। তিনি পুণরায় বললেনঃ বল। এবারও আমি কিছুই বললাম না। তিনি আবার বললেন, বল। এবার আমি প্রশ্ন করলাম, আমি কি বলব? তিনি বললেনঃ তুমি প্রতি দিন বিকালে ও সকালে উপনীত হয়ে তিনবার করে সূরা কুল হুআল্লাহু আহাদ (সূরা আল -ইখলাস) ও আল –মুআওবিযাতাইন (সূরা আল –ফালাক্ব ও সুলা আন -নাস) পাঠ করবে, আর তা প্রত্যেকটি ব্যাপারে তোমার জন্য যথেষ্ট হবে।


(জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৩৫৭৫, তালীকুর রাগীব (১/২২৪), আল –কালিমুত তাইয়্যিব ১৯/৭)

  


৪। যে কোন সময় অসুস্থতা অনুভব করলে সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস এ তিনটি সূরা পড়ে শরীরে ফুঁ দিতে হবে ।


عَبْدُ اللهِ بْنُ يُوْسُفَ أَخْبَرَنَا مَالِكٌ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ عُرْوَةَ عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا اشْتَكَى يَقْرَأُ عَلَى نَفْسِهِ بِالْمُعَوِّذَاتِ وَيَنْفُثُ فَلَمَّا اشْتَدَّ وَجَعُهُ كُنْتُ أَقْرَأُ عَلَيْهِ وَأَمْسَحُ بِيَدِهِ رَجَاءَ بَرَكَتِهَا.


'আয়িশা رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


যখনই নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অসুস্থ হতেন তখনই তিনি ‘সূরায়ে মু’আব্বিযাত’ পড়ে নিজের উপর ফুঁক দিতেন। যখন রোগ কঠিন হয়ে গেল, তখন বাকাত অর্জনের জন্য আমি এই সূরা পাঠ করে তাঁর হাত দিয়ে শরীর মাসহ করিয়ে দিতাম।


(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫০১৬) (ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৪৭) 



৫। জিন ও মানুষের বদনজর থেকে নিরাপদ থাকার জন্য সূরা ফালাক ও নাস পাঠ করে শরীরে ফুঁ দিতে হবে ।


قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيْدٍ حَدَّثَنَا الْمُفَضَّلُ بْنُ فَضَالَةَ عَنْ عُقَيْلٍ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ عُرْوَةَ عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا أَوَى إِلَى فِرَاشِهِ كُلَّ لَيْلَةٍ جَمَعَ كَفَّيْهِ ثُمَّ نَفَثَ فِيْهِمَا فَقَرَأَ فِيْهِمَا{قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ}وَ {قُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ} وَ {قُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ} ثُمَّ يَمْسَحُ بِهِمَا مَا اسْتَطَاعَ مِنْ جَسَدِهِ يَبْدَأُ بِهِمَا عَلَى رَأْسِهِ وَوَجْهِهِ وَمَا أَقْبَلَ مِنْ جَسَدِهِ يَفْعَلُ ذَلِكَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ.


'আয়িশা رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


প্রতি রাতে নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিছানায় যাওয়ার প্রাক্কালে সূরা ইখ্‌লাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করে দু’হাত একত্র করে হাতে ফুঁক দিয়ে যতদূর সম্ভব সমস্ত শরীরে হাত বুলাতেন। মাথা ও মুখ থেকে আরম্ভ করে তাঁর দেহের সম্মুখ ভাগের উপর হাত বুলাতেন এবং তিনবার এরূপ করতেন।


(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫০১৭) (ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৪৮)

  


১) আবূ হুরাইরা رضي الله عنه হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ (সূরা) ‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ সম্পর্কে বলেছেন, “নিঃসন্দেহে এটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য”। 


عَبْدُ اللهِ بْنُ يُوْسُفَ أَخْبَرَنَا مَالِكٌ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِيْ صَعْصَعَةَ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ أَنَّ رَجُلًا سَمِعَ رَجُلًا يَقْرَأُ {قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ} يُرَدِّدُهَا فَلَمَّا أَصْبَحَ جَاءَ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ وَكَأَنَّ الرَّجُلَ يَتَقَالُّهَا فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ إِنَّهَا لَتَعْدِلُ ثُلُثَ الْقُرْآنِ.


আবূ সা’ঈদ খুদরী رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


এক ব্যক্তি আরেক ব্যক্তিকে ‘কুল হুআল্লাহু আহাদ’ পড়তে শুনলেন। সে বার বার তা মুখে উচ্চারণ করছিল। পরদিন সকালে তিনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে এসে এ ব্যাপারে বললেন। যেন ঐ ব্যক্তি তাকে কম মনে করলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার জীবন। এ সূরা হচ্ছে সমগ্র কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান।


(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫০১৩) (ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৪৫)



২) আবূ সাঈদ খুদরী رضي الله عنه হতে বর্ণিত , রাসুলুল্লাহ ﷺ (সূরা) ‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ সম্পর্কে বলেছেন, “সেই মহান সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রান আছে, নিঃসন্দেহে এটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য”।


عُمَرُ بْنُ حَفْصٍ حَدَّثَنَا أَبِيْ حَدَّثَنَا الْأَعْمَشُ حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيْمُ وَالضَّحَّاكُ الْمَشْرِقِيُّ عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لِأَصْحَابِهِ أَيَعْجِزُ أَحَدُكُمْ أَنْ يَقْرَأَ ثُلُثَ الْقُرْآنِ فِيْ لَيْلَةٍ فَشَقَّ ذَلِكَ عَلَيْهِمْ وَقَالُوْا أَيُّنَا يُطِيْقُ ذَلِكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَقَالَ اللهُ الْوَاحِدُ الصَّمَدُ ثُلُثُ الْقُرْآنِ.


আবূ সা’ঈদ খুদরী رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সহাবীদেরকে বলেছেন, তোমাদের কেউ কি এক রাতে কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করা সাধ্যাতীত মনে কর? এ প্রশ্ন তাদের জন্য কঠিন ছিল। এরপর তারা বলল, হে আল্লাহ‌র রাসুল (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমাদের মধ্যে কার সাধ্য আছে যে এটা পারবে? তখন তিনি বললেন, “কুল হুআল্লাহু আহাদ” অর্থাৎ সূরা ইখলাস কুরআনের তিন ভাগের এক ভাগ।


(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫০১৫) (ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৪৬)



৩) অপর এক বর্ণনায় আছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ সাহাবাগনকে বললেন, ‘তোমরা কি এক রাতে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়তে অপারগ?’ প্রস্তাবটি তাদের পক্ষে ভারী মনে হল। তাই তারা বলে উঠলেন ‘হে আল্লাহ ﷻ'র  রাসুল! এ কাজ আমাদের মধ্যে কে করতে পারবে?’ (অর্থাৎ কেও পারবে না)। তিনি বললেন, “কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ, আল্লাহুস সামাদ” (সূরা ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য”। (অর্থাৎ, এই সূরা পড়লে এক তৃতীয়াংশের কুরআন পড়ার সমান নেকী অর্জিত হয়)। 


عَبْدُ اللهِ بْنُ يُوْسُفَ أَخْبَرَنَا مَالِكٌ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِيْ صَعْصَعَةَ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ أَنَّ رَجُلًا سَمِعَ رَجُلًا يَقْرَأُ {قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ} يُرَدِّدُهَا فَلَمَّا أَصْبَحَ جَاءَ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ وَكَأَنَّ الرَّجُلَ يَتَقَالُّهَا فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ إِنَّهَا لَتَعْدِلُ ثُلُثَ الْقُرْآنِ.


আবূ সা’ঈদ খুদরী رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


এক ব্যক্তি আরেক ব্যক্তিকে ‘কুল হুআল্লাহু আহাদ’ পড়তে শুনলেন। সে বার বার তা মুখে উচ্চারণ করছিল। পরদিন সকালে তিনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে এসে এ ব্যাপারে বললেন। যেন ঐ ব্যক্তি তাকে কম মনে করলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার জীবন। এ সূরা হচ্ছে সমগ্র কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান।


(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫০১৩) (ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৪৫)



৪) উক্ত সাহাবী رضي الله عنه আরো বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি কোন লোককে সূরাটি বারবার পড়তে শুনল। অতঃপর সে সকালে রাসুলুল্লাহ ﷺ নিকট এসে তা ব্যক্ত করল। সে সূরাটিকে নগণ্য মনে করেছিল। রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন, “সেই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ আছে, নিঃসন্দেহে এই সূরা (ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান”।


عُمَرُ بْنُ حَفْصٍ حَدَّثَنَا أَبِيْ حَدَّثَنَا الْأَعْمَشُ حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيْمُ وَالضَّحَّاكُ الْمَشْرِقِيُّ عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لِأَصْحَابِهِ أَيَعْجِزُ أَحَدُكُمْ أَنْ يَقْرَأَ ثُلُثَ الْقُرْآنِ فِيْ لَيْلَةٍ فَشَقَّ ذَلِكَ عَلَيْهِمْ وَقَالُوْا أَيُّنَا يُطِيْقُ ذَلِكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَقَالَ اللهُ الْوَاحِدُ الصَّمَدُ ثُلُثُ الْقُرْآنِ.


আবূ সা’ঈদ খুদরী رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সহাবীদেরকে বলেছেন, তোমাদের কেউ কি এক রাতে কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করা সাধ্যাতীত মনে কর? এ প্রশ্ন তাদের জন্য কঠিন ছিল। এরপর তারা বলল, হে আল্লাহ‌র রাসুল (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমাদের মধ্যে কার সাধ্য আছে যে এটা পারবে? তখন তিনি বললেন, “কুল হুআল্লাহু আহাদ” অর্থাৎ সূরা ইখলাস কুরআনের তিন ভাগের এক ভাগ।


(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫০১৫) (ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৪৬)

  


৫) আনাস رضي الله عنه হতে বর্নিত, এক ব্যক্তি নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহ ﷻ'র  রাসুল! আমি এই (সূরা) ‘কূল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ ভালবাসি। তিনি বললেন, ‘ এর ভালবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে’। 


حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، قَالَ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، قَالَ حَدَّثَنَا أَيُّوبُ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَرَأَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فِيمَا أُمِرَ، وَسَكَتَ فِيمَا أُمِرَ ‏{‏وَمَا كَانَ رَبُّكَ نَسِيًّا‏}‏ ‏{‏لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ‏}‏‏.‏


ইব্‌নু ‘আব্বাস رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেন, নবী ﷺ যেখানে কিরাআত পাঠের জন্য আদেশ পেয়েছেন, সেখানে পড়েছেন। আর যেখানে চুপ থাকতে আদেশ পেয়েছেন সেখানে চুপ থেকেছেন রয়েছেন। (আল্লাহ তা‘আলার বাণী): “তোমার প্রতিপালক ভুল করেন না”-(সূরা মারইয়াম ১৯/৬৪)। “নিশ্চয় তোমাদের জন্য আল্লাহ ﷻ'র  রাসুল-এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।” 

(সূরা আল-আহযাব ৩৩/২১)



৭৭৪/১. আনাস رضي الله عنه হতে বর্ণিত। কুবার মসজিদে এক আনসারী ব্যক্তি তাঁদের ইমামাত করতেন। তিনি সশব্দে কিরা-আত পড়া হয় এমন কোন সালাতে যখনই কোন সূরা তেলাওয়াত করতেন, قُل هُوَ اللهُ أَحَدٌ সূরা দ্বারা শুরু করতেন। তা শেষ করে অন্য একটি সূরা এর সাথে মিলিয়ে পড়তেন। আর প্রতি রাক‘আতেই তিনি এমন করতেন। তাঁর সঙ্গীরা এ ব্যাপারে তাঁর নিকট বললেন যে, আপনি এ সূরাটি দিয়ে শুরু করেন, এটি যথেষ্ট হয় বলে আপনি মনে করেন না তাই আর একটি সূরা মিলিয়ে পড়েন। হয় আপনি এটিই পড়বেন, না হয় এটি বাদ দিয়ে অন্যটি পড়বেন। তিনি বললেন, আমি এটি কিছুতেই ছাড়তে পারব না। আমার এভাবে ইমামাত করা যদি আপনারা অপছন্দ করেন, তাহলে আমি আপনাদের ইমামাত ছেড়ে দেব। কিন্তু তাঁরা জানতেন যে, তিনি তাদের মাঝে উত্তম। তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তাদের ইমামাত করুক এটা তাঁরা অপছন্দ করতেন। পরে নবী যখন তাঁদের এখানে আগমন করেন, তাঁরা বিষয়টি নবী ﷺ-কে জানান। তিনি বললেন, হে, অমুক! তোমার সঙ্গীগণ যা বলেন তা করতে তোমাকে কিসে বাধা দেয়? আর প্রতি রাক‘আতে এ সূরাটি বাধ্যতামূলক করে নিতে কিসে উদ্বুদ্ধ করছে? তিনি বললেন, আমি এ সূরাটি ভালবাসি। নবী ﷺ বললেনঃ এ সূরার ভালবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। 


(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৭৭৪) (ই.ফা. অনুচ্ছেদ ৪৯৮ )



সূরা ফালাক ও সূরা নাসের ফজিলতঃ-


১) উকবাহ বিন আমের رضي الله عنه হতে বর্ণিত,রাসুলুল্লাহ ﷺ একদা বললেন, ‘তুমি কি দেখনি, আজ রাতে আমার উপর কতকগুলি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে; যার আনুরূপ আর কিছু দেখা যায়নি? (আর তা হল,) ‘কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক্ক’ ও ‘কুল আউযু বিরাব্বিন নাস’। 


وَحَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ بَيَانٍ، عَنْ قَيْسِ بْنِ أَبِي حَازِمٍ، عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ أَلَمْ تَرَ آيَاتٍ أُنْزِلَتِ اللَّيْلَةَ لَمْ يُرَ مِثْلُهُنَّ قَطُّ ‏{‏ قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ‏}‏ وَ ‏{‏ قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ‏}‏ ‏"‏ ‏.


উক্ববাহ‌ ইবনু 'আমির رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ ﷺ আমাকে বললেনঃ আজ রাতে যে আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়েছে সেগুলোর মতো আর কখনো দেখা যায়নি। সেগুলো হ’ল- “কুল আ’উযু বিরব্বিল ফালাক্ব” (সূরাহ‌ আল ফালাক্ব) এবং “কুল আ’ঊযু বিরব্বিন্‌ না-স” (সূরাহ‌ আন্‌ না-স)-এর আয়াত। 


(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১৭৭৬) (ই.ফা. ১৭৬১)



২)  

أَخْبَرَنَا قُتَيْبَةُ، قَالَ: حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ ابْنِ عَجْلَانَ، عَنْ سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ، عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ، قَالَ: كُنْتُ أَمْشِي مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: «يَا عُقْبَةُ، قُلْ» فَقُلْتُ: مَاذَا أَقُولُ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ فَسَكَتَ عَنِّي، ثُمَّ قَالَ: «يَا عُقْبَةُ قُلْ» قُلْتُ: مَاذَا أَقُولُ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ فَسَكَتَ عَنِّي، فَقُلْتُ: اللَّهُمَّ ارْدُدْهُ عَلَيَّ، فَقَالَ: «يَا عُقْبَةُ قُلْ» قُلْتُ: مَاذَا أَقُولُ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ فَقَالَ: «قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ»، فَقَرَأْتُهَا حَتَّى أَتَيْتُ عَلَى آخِرِهَا، ثُمَّ قَالَ: «قُلْ» قُلْتُ: مَاذَا أَقُولُ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ» فَقَرَأْتُهَا حَتَّى أَتَيْتُ عَلَى آخِرِهَا، ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَ ذَلِكَ: «مَا سَأَلَ سَائِلٌ بِمِثْلِهِمَا، وَلَا اسْتَعَاذَ مُسْتَعِيذٌ بِمِثْلِهِمَا»


উক্‌বা ইব্‌ন আমির رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


আমি রাসুলুল্লাহ‌ ﷺ -এর সাথে ছিলাম। তিনি বললেনঃ হে উক্‌বা! বল। আমি বললামঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ‌! কি বলবো? তিনি কিছুক্ষন চুপ থাকলেন। তারপর বললেনঃ হে উক্‌বা! বল। আমি বললামঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ‌! আমি কি বলবো? তিনি আবার চুপ থাকলেন। আমি বললামঃ হে আল্লাহ‌! তাঁকে আমার দিকে ফিরিয়ে দিন। তারপর তিনি বললেনঃ হে উকবা! বল। আমি বললামঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ ﷺ কি বলবো? এবার তিনি বললেনঃ বল, কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক, আমি তা পড়ে শেষ করলাম। এরপর রাসুলুল্লাহ‌ ﷺ বললেনঃ বল। আমি বললামঃ কি বলবো? তিনি বললেনঃ বল, কুল আউযু বিরাব্বন্নাস। আমি তা পাঠ করলাম। এরপর তিনি বললেনঃ কোন প্রার্থনাকারী এর মত কিছু দ্বারা প্রার্থনা করেনি এবং কোন আশ্রয়প্রার্থী এর মত অন্য কিছু দ্বারা আশ্রয় গ্রহণ করেনি।

  

(সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৫৪৩৮)

 
Top