বিষয় নং-২৪: সমগ্র দুনিয়া হাতের তালুতে:


❏ ইমাম তাবরানী, ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী, ইমাম নুয়াইম বিন হাম্মাদ (رحمة الله) সংকলন করেন-

حدثنا بكرُ بن سَهْل، ثنا نُعَيم بن حمَّاد المَرْوَزي، ثنا بَقيَّة ، عن سعيد بن سِنان ، ثنا أبو الزاهريَّة، عن كَثير بن مُرَّة، عن ابن عمر، قال : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ : إِنَّ اللَّهَ رَفَعَ لِي الدُّنْيَا فَأَنَا أَنْظُرُ إِلَيْهَا وَإِلَى مَا هُوَ كَائِنٌ فِيهَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ كَمَا أَنْظُرُ إِلَى كَفِّي هَذِهِ-

-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।  রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, আল্লাহ্ তা‘য়ালা আমার সামনে সারা দুনিয়া তুলে ধরেছেন। ফলে আমি এ দুনিয়াতে এবং এতে কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে এমনভাবে দেখতে পাচ্ছি যেভাবে আমি আমার নিজ হাতকে দেখতে পাচ্ছি।’’ ৩১৬

৩১৬. ইমাম নুয়াঈম বিন হাম্মাদ, আল-ফিতান, ১/২৭ পৃ. হা/২, আবু নুয়াইম ইস্পাহানী : হিলইয়াতুল আউলিয়া : ৬/১০১ পৃ. দারুল কিতাব আল-আরাবী, বয়রুত, লেবানন, তাবরানী : মু’জামুল কাবীর, ১৩/৩১৮ পৃ. হা/১৪১১২, ইমাম কাস্তাল্লানী : মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া : ৩/৯৫ পৃ. ইমাম জুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব : ৭/২০৪ পৃ., মুত্তাকী হিন্দী : কানযুল উম্মাল : ১১/৪২০৯ পৃ. হা/৩১৯৭৯ ও ১১/৪২০ পৃ. হা/৩১৯৭১, ইমাম সুয়ূতি : খাসায়েসুল কোবরা : ২/১৮৫ পৃ. সুয়ূতি : জামিউল জাওয়ামে : হা/৪৮৪৯ ও জামিউস সগীর, ১/৩৫৪৭ পৃ. হা/৩৫৪৭ এবং জামিউল আহাদিস, ৮/৫৫ পৃ. হা/৬৮৫৪, হাইসামী : মাযমাউয যাওয়ায়েদ : ৮/২৮৭ পৃ. হা/১৪০৬৭, শায়খ ইউসুফ নাবহানী : জামিউল কাবীর, হা/৪৮৪৯, আবুল কাসেম তায়মী ইস্পাহানী, আল-হুজ্জাত, ২/৪৪০ পৃ. হা/৪২১, ইমাম তায়মী ইস্পাহানী, আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব, ২/২১১ পৃ. হা/১৪৫৬, দারুল হাদিস, কায়রু, মিশর, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ১/৩১৬ পৃ. হা/৩৪০৫


সনদ পর্যালোচনা:


হিফাজতে ইসলামের আমীর মাওলানা আহমদ শফি তার লিখিত গ্রন্থ ‘সুন্নত বিদআতের সঠিক পরিচয়’ এর ১৪৭ পৃষ্ঠায় নিম্নের হাদিস সম্পর্কে বলেন, -“কানযুল উম্মালে বলা হয়েছে যে, তার সনদ অর্থাৎ-বর্ণনা সূত্র অত্যন্ত দুর্বল।” নাঊযুবিল্লাহ!

দেখুন তিনি সুকৌশলে কতবড় মিথ্যাচার করলেন! 


✧ অথচ উপরোক্ত গ্রন্থাকার আল্লামা মুত্তাকী হিন্দী (رحمة الله) হাদিসটি সম্পর্কে কিছুই মন্তব্য করেন নি বরং তিনি শুধু এতটুকুই বলেছেন-

طب، حل - عن ابن عمر

-‘‘হাদিসটি ইমাম তাবরানী  তাঁর মু‘জামুল কাবীরে ও ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী (رحمة الله) তাঁর হিলয়াতুল আউলিয়া গ্রন্থে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন।’’৩১৭  

৩১৭. আল্লামা মুত্তাকী হিন্দী : কানযুল উম্মাল : ১১/৪০০ পৃ. হা/৩১৯৭


✧ অপরদিকে আহলে হাদিস আলবানী তার দু‘টি গ্রন্থে হাদিসটিকে সাধারণ দুর্বল বলেছেন। ৩১৮

৩১৮. আলবানী, দ্বঈফু জামে, হা/১৬২৪, সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্-দ্বঈফাহ, ২/৩৭৪ পৃ. হা/৯৫৭


✧ তাবারানীর সনদ দীর্ঘ হলেও-

أبو عبد الله نعيم بن حماد بن معاوية بن الحارث الخزاعي المروزي

-“ইমাম আবু আব্দুল্লাহ নুয়াইম ইবনে হাম্মাদ ইবনে মুয়াবিয়া ইবনে হারেছ আল খাজাই মারুজী রহ:, ওফাত ২২৮ হিজরী” এর সনদ অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ও সুন্দর, যা তাবারানীর সনদের চেয়ে আরো উত্তম। 


✧ ইমাম নুয়াইম ইবনে হাম্মাদ (رحمة الله) এর ‘আল ফিতান’ কিতাবের সনদটি লক্ষ্য করুন:-

حَدَّثَنَا الْحَكَمُ بْنُ نَافِعٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ سِنَانٍ، قَالَ حَدَّثَنَا أَبُو الزَّاهِرِيَّةِ، عَنْ كَثِيرِ بْنِ مُرَّةَ أَبِي شَجَرَةَ الْحَضْرَمِيِّ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ:ৃ

-‘‘হাকাম ইবনে নাফে বর্ণনা করেছেন ‘সাঈদ ইবনে সিনান’ থেকে। তিনি বর্ণনা করেছেন ‘আবু জাহিরিয়্যা’ থেকে। তিনি বিশিষ্ট তাবেঈ কাসির ইবনে র্মুরা (رحمة الله) থেকে। তিনি হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) থেকে।.....।’’ (ইমাম নুয়াইম ইবনে হাম্মাদ: আল ফিতান, হাদিস নং ২)


✧ এই সনদের রাবী ‘ইবনে উমর (رضي الله عنه)’ তো সাহাবী আর ‘কাসির ইবনে র্মুরাহ’ সম্পর্কে ইমাম যাহাবী (رحمة الله) বলেন: الإِمَامُ، الحُجَّةُ، -“সে ইমাম ও হুজ্জাত।” 

(ইমাম যাহাবী: সিয়ারু আলামিন নুবালা, রাবী নং ১১)


✧ বর্ণনাকারী ‘আবু জাহেরীয়া’ এর মূল নাম হল ‘হুদাইর ইবনে কুরাইব’। সে সহীহ্ মুসলিম এর রাবী এবং 

وَثَّقَهُ: يَحْيَى بنُ مَعِيْنٍ، وَغَيْرُهُ. 

ইমাম ইবনে মাঈন (رحمة الله)সহ অন্যান্যরা তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন। (ইমাম যাহাবী: সিয়ারে আলামিন নুবালা, রাবী নং ১১)


বর্ণনাকারী ‘হাকাম ইবনে নাফে সহীহ্ বুখারী, মুসলিমের রাবী ও ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার ব্যাপারে বলেন: الحَافِظُ، الإِمَامُ، الحُجَّةُ، -

“সে হাফিজ, ইমাম ও হুজ্জত।” (ইমাম যাহাবী: সিয়ারু আলামিন নুবালা, রাবী নং ৭৭) 


আর ‘সাঈদ ইবনে সিনান’ হাসান পর্যায়ের রাবী, তার ব্যাপারে নিচে বিস্তারিত আলোচনা হবে। অতএব, এই সনদটি শক্তিশালী যা হুজ্জাত হওয়ার যোগ্য।


✧ ইমাম তাবারানী (رحمة الله) এর সনদটি হচ্ছে,

حدثنا بكرُ بن سَهْل، ثنا نُعَيم بن حمَّاد المَرْوَزي، ثنا بَقيَّة، عن سعيد بن سِنان ثنا أبو الزاهريَّة، عن كَثير بن مُرَّة، عن ابن عمر، قال: قال رسولُ الله صلى الله عليه وسلم: إِنَّ اللهَ عَزَّ وجَلَّ قَدْ رَفَعَ لِيَ الدُّنْيَاৃ

-“বকর ইবনে সাহল নুয়াইম ইবনে হাম্মাদ হতে, তিনি বাক্বিয়া থেকে, তিনি সাঈদ ইবনে সিনান হতে, তিনি আবু জাহিরিয়্যা হতে, তিনি কাছির ইবনে র্মুরা হতে, তিনি হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে তিনি বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেন:....।”


✧ তাবারানীর এই হাদিসের সনদে

 سَعِيدُ بْنُ سِنَانٍ، أَبُو مَهْدِيٍّ الْحِمْصِيُّ 

“সাঈদ ইবনে সিনান আবু মাহদী আল হিমছী” নামক একজন রাবী রয়েছে, যাকে বাতিল পন্থিরা ‘দূষী রাবী’ বলতে চায়। অথচ এই রাবী সম্পর্কে ইমামগণের অভিমত শুনুনঃ- 


✧ ইমাম আবু হাতিম রাজী (رحمة الله) তদীয় কিতাবে উল্লেখ করেন,

أبو مهدي سعيد بن سنان مؤذن أهل حمص وكان ثقة -

“আবু মাহদী সাঈদ ইবনে সিনান তিনি হাম্ছ বাসীর মুয়াজ্জিন ছিলেন, আর তিনি ছিলেন বিশ্বস্ত।” (ইমাম আবু হাতিম: জারাহ ওয়া তা’দিল, ৪র্থ খণ্ড, ২৮ পৃ: রাবী নং ১১৪)


وَقَال أَبُو بَكْر بْن أَبي خَيْثَمَة: حَدَّثَنِي صاحب لي من بني تميم قال: قال أَبُو مسهر: حَدَّثَنَا صَدَقَة بْن خَالِد، قال: حدثني أَبُو مهدي سَعِيد بْن سنان مؤذن أهل حمص وكان ثقة

✧ “ইমাম আবু বকর ইবনে আবী হায়ছামা বলেন, বনী তামিমের আমাদের সাথী বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন: আবু মিছয়ার বলেন, ছাদাকা ইবনে খালেদ বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আবু মাহ্দী সাঈদ ইবনে সিনান আহলে হিম্স এর মুয়াজ্জিন হাদিস বর্ণনা করেছেন আর তিনি বিশ্বস্ত।” (ইমাম মিয্যী: তাহযিবুল কামাল, রাবী নং ২২৯৫) 


عن الدارقطني في رواية: هو ثقة. 

✧ “ইমাম দারে কুতনী (رحمة الله) থেকে আরেকটি রেওয়াতে আছে সে বিশ্বস্ত রাবী।” (ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ১৯৮৮)


قال أحمد ضعيف وقال ابن معين ليس بثقة 

✧ “ইমাম আহমদ (رحمة الله) বলেন: সে দুর্বল রাবী। ইবনে মাঈন (رحمة الله) বলেন: সে বিশ্বস্ত নয়।” 

(ইমাম আবু হাতিম: জারহ ওয়া তা’দিল, ৪র্থ খণ্ড, ২৮ পৃ: রাবী নং ১১৪)


وقال البخاري منكر الحديث -

✧ “ইমাম বুখারী (رحمة الله) বলেন: সে মুনকার।” 

(ইমাম আবু হাতিম: জারাহ্ ওয়া তা’দিল, ৪র্থ খণ্ড, ২৮ পৃ: রাবী নং ১১৪)


অতএব, এই রাবীর উপর নির্ভর করে হাদিসটিকে জাল বলার কোন ভিত্তি নেই বরং এই রাবীর বর্ণিত রেওয়াত সর্বনিম্ন ‘হাসান’ হবে। কারণ ইমামদের কেউ কেউ তাকে সিক্বাহ বা বিশ্বস্ত বলেছেন এবং কেউ কেউ সমালোচনা করেছেন। তাই অবশ্যই এই হাদিস ‘হাসান’ পর্যায়ের হবে কিন্তু কোন মতেই বাতিল রাবী নয়। 


✧ তাবারানীর সনদে এই হাদিসে আরেকজন রাবী হল: 

بَقِيَّةُ بنُ الوَلِيْدِ بنِ صَائِدِ بنِ كَعْبِ بنِ حَرِيْزٍ الحِمْيَرِيُّ

“বাক্বিয়া ইবনে ওয়ালিদ ইবনে সাঈদ ইবনে হারিজ হিময়ারী”। তবে তাবারানীর সনদে ‘বাকিয়া’ থাকলেও ইমাম নুয়াইম ইবনে হাম্মাদ’ এর সনদে সে নেই।


 بَقيَّة ‘বাকিয়া’ মূলত ছহীহ্ মুসলীমের রাবী এবং ইমাম বুখারী (رحمة الله) তার ব্যাপারে ভাল সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। যার সম্পর্কে ইমামগণের উক্তি লক্ষ্য করুন:


عَنِ ابْنِ المُبَارَكِ، قَالَ: بَقِيَّةُ كَانَ صَدُوقاً

✧ “ইমাম ইবনে মোবারক (رحمة الله) বলেছেন: সে সত্যবাদী।” (ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৪৯)


✧ ইয়াইয়া ইবনে মাঈন (رحمة الله) কে জিজ্ঞাসা করা হল,

وَسُئِلَ أَيُّمَا أَثْبَتُ: هُوَ أَوْ إِسْمَاعِيْلُ؟ 

-“জিজ্ঞাসা করা হল, কে অধিক প্রমাণিত সে (বাক্বিয়া) নাকি ইসমাঈল?  

قَالَ: كِلاَهُمَا صَالِحَانِ. 

উত্তরে তিনি বলেন, তারা দুই জনেই নেক বান্দাহ।” 

(ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৭৩৮)


قَالَ يَعْقُوْبُ بنُ شَيْبَةَ: بَقِيَّةُ: ثِقَةٌ، حَسَنُ الحَدِيْث

✧ "ইমাম ইয়াকুব (رحمة الله) বলেন: বাক্বিয়া বিশ্বস্ত ও তার হাদিস উত্তম।” (ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৭৩৮)


وَقَال مُحَمَّد بْن سعد: كان ثقة

✧ “মুহাম্মদ ইবনে সা’দ (رحمة الله) বলেন: সে বিশ্বস্ত।” (ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৭৩৮)


وَقَال أَحْمَد بْن عَبْد اللَّهِ العجلي: ثقة

✧ “আহমদ ইবনে আব্দুল্লাহ আজলী (رحمة الله) বলেন: সে বিশ্বস্ত।” (ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৭৩৮)


وَقَالَ أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ النَّسَائِيُّ: إِذَا قَالَ: حَدَّثَنَا وَأَخْبَرَنَا، فَهُوَ ثِقَةٌ

✧ “ইমাম নাসাঈ (رحمة الله) বলেছেন: যখন সে এভাবে বর্ণনা করবে: ‘হাদ্দাছানা’ অথবা ‘আখবারানা’ তখন অবশ্যই তার হাদিস বিশ্বস্ত বলে স্বীকৃত {এভাবেই এই হাদিস বর্ণিত হয়েছে}। 

(ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৭৩৮)


عثمان الدارميّ، عَنِ ابن مَعِين: بقيّة ثقة. قلت لَهُ: هُوَ أحبّ إليك أو محمد بْن حرب؟ فقال: ثقة وثقة. 

✧ “উছমান ইবনে দারেমী (رحمة الله) হযরত ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, বাক্বিয়া বিশ্বস্ত। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার কাছে কে বেশী পছন্দনীয় বাক্বিয়া নাকি মুহাম্মদ ইবনে হারব? তিনি বলেন: সে বিশ্বস্ত এবং সেও বিশ্বস্ত।” 

(ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৪৯)


وقال ابن عَدِيّ: ولبقيّة حديث صالح

✧ “ইমাম ইবনে আদী (رحمة الله) বলেন: বাক্বিয়া হাদিস বর্ণনায় নেক।” (ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৪৯)


وروى له مسلم حديثا واحدا -

✧ “ইমাম মুসলিম (رحمة الله) তার থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন।” (ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, ১ম খণ্ড, ৪৭২-৭৩ পৃ:)


استشهد به البخاري في الصحيح

✧ “ইমাম বুখারী (رحمة الله) তার সহীহ্ গ্রন্থে তার ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।” (ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৪৯)


وقال الحاكم في سؤالات مسعود: بقية ثقة مأمون

✧ ইমাম হাকেম (رحمة الله) মাসউদ এর ছওয়ালে বলেন: বাক্বিয়া বিশ্বস্ত ও গ্রহণযোগ্য।” (ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, ১ম খণ্ড, ৪৭২-৭৩ পৃ:)


আশ্চর্যের বিষয় হলো! ইমামগণ তার সম্পর্কে এরূপ ভাল মন্তব্য করার পরেও নাছিরুদ্দিন আলবানী তার বর্ণিত হাদিসকে জাল বলার দুঃসাহস দেখিয়েছেন। সুতরাং ইমামগণের অভিমত দ্বারা প্রমাণিত হয় তার বর্ণিত হাদিসের মর্যাদা হবে ‘ছহীহ্ অথবা হাছান’। উল্লেখ্য যে, 


✧ নুয়াইম ইবনে হাম্মাদ (رحمة الله) এর সনদে ‘বাক্বিয়া’ নামক রাবী নেই। তাবারানীর সনদে

 نعيم بن حمّاد بن معاوية بن الحارث بن همّام بن سلمة بن مالك الخزاعى 

“নুয়াইম ইবনে হাম্মাদ” নামক আরেকজন রাবী রয়েছে। তিনি তো নিজেই ইমাম। যার সম্পর্কে ইমামগণের অভিমত হল: 


وقال الخطيب: يقال: نُعَيْم أوّل من جمع المُسْنَد وصنَّف.

✧ -“খতিবে বাগদাদী (رحمة الله) বলেন: নুয়াইম সর্বপ্রথম সনদ একত্রিত করেন এবং কিতাব প্রনয়ণ করেন।” (ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৪৪৭)


قال أبو زكريا نعيم بن حماد صدوق ثقة

✧ -“ইমাম আবু জাকারিয়া (رحمة الله) বলেছেন, ‘নুয়াইম ইবনে হাম্মাদ’ সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত।” 

(ইমাম ইবনে আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৮৩১)


وقال العِجْليّ: صَدُوق ثقة. -

✧ “ইমাম ইজলী (رحمة الله) বলেন: বিশ্বস্ত।” (ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৪৪৭)


وقال أبو حاتم: محله الصدق. -

✧ “ইমাম আবু হাতিম  বলেন: সে মূলত সত্যবাদী।” 

(ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৪৪৭; ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৬৪৫১)


وقال مسلمة بن قاسم في كتاب الصلة: كان صدوقا

✧ “ইমাম মাসলামাহ ইবনে কাশেম তার ‘কিতাবুস সিলাহ’ এর মধ্যে বলেন: সে সত্যবাদী।” (ইমাম মুগলতাঈ: ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৪৮৫০)


✧ ইমাম আহমদ ও ইমাম ইবনে মাঈন (رحمة الله) তাকে ثقة বিশ্বস্ত বলেছেন। (ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৬৪৫১)


وذكره بن حبان في الثقات -

✧ “ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাকে ‘কিতাবুস ছিকাত’-এ উল্লেখ করেছেন।” 

(ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৬৪৫১)


✧ সর্বোপরি সে বুখারীর রাবী, ইমাম মুসলিম  তার মুকাদ্দমায় ‘নুয়াইম’ থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। আশ্চর্যের বিষয় হল, ওহাবীরা এই রাবীকে নিয়েও সমালোচনা করার অপচেষ্টা করেন। অথচ তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন: ইমাম বূখারী, ইমাম দারেমী, ইমাম আবু হাতিম, ইমাম ইবনে মাঈন (رحمة الله) প্রমূখ ইমামগণ। এই রাবী সম্পর্কে ইমামগণের এরূপ ভাল মন্তব্য ও ইমাম বূখারী, দারেমী, আবু হাতিম এবং ইবনে মাঈন (رحمة الله) তার হাদিস গ্রহণ করার দ্বারা প্রমাণিত হয়, তার বর্ণিত হাদিসের মর্যাদা ‘সহীহ্ বা বিশুদ্ধ’।


✧ এই হাদিসে

 بكر بن سهل الدمياطي أبو محمد مولى بني هاشم 

“বাকর ইবনে সাহল” নামক আরেকজন রাবী রয়েছে। যার থেকে বিশ্ব নন্দিত ইমাম তাহাবী (رحمة الله), ইমাম তাবারানী (رحمة الله), ইমাম বায়হাক্বী (رحمة الله), ইমাম আসেম (رحمة الله) প্রমূখ হাদিস বর্ণনা করে কোন প্রকার সমালোচনা করেননি। 


✧ আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله), ইমাম বদরুদ্দিন আইনী (رحمة الله) ও ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার সম্পর্কে বলেন: حمل الناس عنه وهو مقارب الحال -“লোকেরা তার হাদিস গ্রহণ করেছেন এবং তার অবস্থা গ্রহণযোগ্য।” 

(ইমাম আসকালানী: লিসানুল মিযান, ২য় খণ্ড, ২৪২ পৃ: রাবী নং ১৯৫; ইমাম যাহাবী: মিযানুল এ’তেদাল, রাবী নং ১২৮৪; ইমাম আইনী: মাগানিল আখইয়ার, রাবী নং ২৩৩)


✧ ইমাম দাওদী মালেকী (رحمة الله) বলেছেন: وهو مقارب الحديث -“তার অবস্থা গ্রহণযোগ্য। (তাবাকাতুল মুফাসিরীন, রাবী নং ১১১)


✧ ইমাম হাকেম (رحمة الله) তার রেওয়াতকে ইমাম মুসলিম (رحمة الله) এর শর্তে সহীহ্ বলেছেন। (মুস্তাদরাক, হাদিস নং ১৪৭১, ১৬৩৭, ২২৩৭, ২৬৭৭)


✧ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার রেওয়াতকে সহীহ বলেছেন। (আল-মুস্তাদরাক, হাদিস নং ৭২৭৯, ৮৭৭৬, ৮৭৮৫) 


উল্লেখ্য যে, ইমাম নুয়াইম ইবনে হাম্মাদ (رحمة الله) এর সনদে এই রাবী নেই। সুতরাং মুহাদ্দিসগণ যার বর্ণিত হাদিস গ্রহণ করেছেন, তার হাদিস জাল হতে পারেনা। কারণ জাল রেওয়াত কারীর বর্ণিত হাদিস মুহাদ্দিস ইমামগণ গ্রহণ করেন না। ইমাম তাহাবী, ইমাম তাবারানী, ইমাম বায়হাক্বী ও ইমাম আসেম (رحمة الله) প্রমূখ তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন এবং কোন প্রকার সমালোচনা করেননি। যদি রাবী সমালোচিত হতেন তাহলে উল্লেখিত ইমামগণ ইহা উল্লেখ করতেন। তাই তার বর্ণিত হাদিস সহীহ অথবা হাসান। 


✧ ইমাম হায়সামী (رحمة الله) এর সনদ সম্পর্কে বলেন,

رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ وَرِجَالُهُ وُثِّقُوا عَلَى ضَعْفٍ كَثِيرٍ فِي سَعِيدِ بْنِ سِنَانٍ الرَّهَاوِيِّ. 

-“ইমাম তাবারানী (رحمة الله) ইহা বর্ণনা করেছেন, এর সকল রাবীগণ বিশ্বস্ত তবে ‘সাঈদ ইবনে সিনান’ এর উপর অনেক দুর্বলতার অভিযোগ রয়েছে।” (মাযমাউয যাওয়াইদ)


আমরা পূর্বে লক্ষ্য করেছি ‘সাঈদ ইবনে সিনান’ সম্পর্কে বিশ্বস্ত হওয়ার অভিমতও রয়েছে। ইমাম হায়সামীর দৃষ্টিতেও হাদিসটি জাল নয় বরং যঈফ হতে পারে। এমনকি নাসিরুদ্দিন আলবানী তার সিলসিলাতুল আহাসিসিদ যঈফাহ গ্রন্থের ৯৫৭ নং হাদিসে এক পর্যায়ে হাদিসটিকে ضعيف যঈফ বলেছেন।

সুতরাং এই হাদিস অবশ্যই নির্ভরযোগ্য ‘হাসান’ সনদের হাদিস। অজ্ঞতা ও মূর্খতার কারণে অথবা মনের ভিতরে রাসূলে পাক (ﷺ) এর প্রতি দুশমনী থাকার কারণে অনেকে এই হাদিস নিয়ে সমালোচনা করার চেষ্টা করে থাকেন।

আহমদ শফির আরেক বই “হক্ব ও বাতিলের চিরন্তন দ্বন্দ্ব” এর ৪৮ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদিসটি হযরত উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত বলে উল্লেখ করেছেন। তার এ উক্তিটিও জঘন্য মিথ্যা, কেননা সে রাবীর নামেই ভুয়া বলেছেন।

আমার মনে প্রশ্ন জাগে, যে হাদিসের রাবী চিনে না, সে কীভাবে মানুষকে হক বাতিল চিনাবে!

 
Top