বিষয় নং-১৩: রাসূল (ﷺ) দরূদ শুনেন এবং দরূদ পাঠকারীকে চিনেন:


‘‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’’ গ্রন্থের ৩৭২ পৃষ্ঠায় ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর এ আক্বিদা পোষণকারী সম্পর্কে লিখেছেন-‘‘প্রচলিত জাল ও মিথ্যাগুলোর একটি।’’ 

তারপর সে মাওলানা আব্দুল হাই লাখনৌভী উদ্ধিৃতি দিয়ে জাল একটি বর্ণনা তুলে ধরে পুরো বিষয়টিকেই অস্বীকার করে বসেন।

ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর সে তার কান আর রাসূল (ﷺ) এর কান মোবারককে এক মনে করে ফেলেছেন, যা সম্পূর্ণ কুফুরী ও রাসূল (ﷺ) এর শানে বেয়াদবীরই শামিল এবং তাঁর একটি গুরুত্বপূর্ণ মুজিজা অস্বীকার করারই নামান্তর। রাসূল (ﷺ) এর কান মোবারক কারও কানের মত নয়, তা নবী করীম (ﷺ) নিজেই বলছেন, যা বহু হাদিসে বর্ণিত আছে। 


❏ হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, একবার হুযূর (ﷺ) হযরত বেলাল (رضي الله عنه) কে বললেন-

يَا بِلَالُ هَلْ تَسْمَعُ مَا أَسْمَعُ؟ قَالَ: لَا وَاللَّهِ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا أَسْمَعُهُ، قَالَ: أَلَا تَسْمَعُ أَهْلَ الْقُبُورِ يُعَذَّبُونَ

-‘‘হে বেলাল! তুমি কি শুনতে পাচ্ছ যা আমি শুনতে পাচ্ছি? তিনি বললেন, না। ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর শপথ করে বলছি আমি কিছুই শুনতে পাচ্ছি না। হুযূর (ﷺ) ইরশাদ করলেন, তুমি শুনতে পাচ্ছ না এই কবরবাসীদের (ইয়াহুদীদের) কে আযাব দেয়া হচ্ছে।’’১৮৩

১৮৩. ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ১/৯৮ পৃ. হা/১১৮, তিনি বলেন- هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ -‘‘এ হাদিসটি সহীহ বুখারী মুসলিমের শর্তানুসারে সহীহ।’’ ইমাম যাহাবীও তার সাথে একমত পোষণ করেছেন।


এ হাদিস থেকে জানা গেল যে সাহাবায়ে কিরামগণের নিকট যেটি গায়ব ছিল কিন্তু রাসূল (ﷺ)‘র কাছে তা নয়। হযরত বেলাল (رضي الله عنه) কসম করে বলেছেন তিনি কিছুই শুনেননি; বুঝা গেল মাটির ভিতরে কবরের অবস্থা পঞ্চ ইন্দ্রের বাহিরে তাই এটি সুস্পষ্ট গায়ব। আর এটাই সাহাবায়ে কিরামদের আক্বিদা ছিল রাসূল (ﷺ) গায়বের খবর দাতা। এ হাদিস থেকে বুঝা গেল রাসূল (ﷺ) এমন অনেক কিছু শুনেন যা আমরা শুনিনা। রাসূল (ﷺ)-এর কাছে অনেক দূরের আওয়াজও নিকটেও আওয়াজের মত শুনতে পান। বিষয়টির সুস্পষ্টতার জন্য কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরছি।


❏ সায়্যিদুনা হযরত আবূ হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, আমরা রাসূল (ﷺ)’র পবিত্র খেদমতে উপস্থিত হলাম। হঠাৎ করে একটি মৃদু শব্দ শুনলাম, নাবী (ﷺ) বললেন-

أَتُدْرُونَ مَا هَذَا؟

‘তোমরা কি জান এই মৃদু শব্দ কিসের?’ 

তখন আমরা বললাম-

اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ

-‘আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন।’ রাসূল (ﷺ) বলেন-

هَذَا حَجَرٌ رُمِيَ بِهِ فِي النَّارِ مُنْذُ سَبْعِينَ خَرِيفًا، فَهُوَ يَهْوِي فِي النَّارِ الْآنَ، حَتَّى انْتَهَى إِلَى قَعْرِهَا

-‘এটি পাথরের শব্দ, যেটি আজ থেকে ৭০ বছর পূর্বে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, এখন এটি জাহান্নামের নিচে পৌঁছেছে।’  ১৮৪

১৮৪. সহীহ মুসলিম শরীফ, ৪/২১৮৪ পৃ. হা/২৮৪৪, পরিচ্ছেদ: بَابٌ فِي شِدَّةِ حَرِّ نَارِ جَهَنَّمَ وَبُعْدِ قَعْرِهَا وَمَا تَأْخُذُ مِنَ الْمُعَذَّبِينَ


নাবি পাক (ﷺ)’র শ্রবণশক্তি এত বেশি যে, দূর-নিকট এর কোন পার্থক্য নেই। সত্তর বছর ধরে নিচে পাথর পড়ছে। এটা কত কোটি মাইল দূরে তা আন্দাজ করা যায়। হুযূর পাক (ﷺ) এই পাথর জাহান্নামের নীচে যাওয়ার ফলে সৃষ্ট আওয়াজ মাদিনা শরীফে বসে শুনেছেন। অনুরূপ রাসূল (ﷺ) তাঁর উম্মাত ও গোলামদের দরুদ ও সালাম শুনেন। তারা যেখান থেকে পড়ুকনা কেন? 


❏ হযরত আবু যার আল গিফারী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন-

عَنْ أَبِي ذَرٍّ ؓ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ : إِنِّي أَرَى مَا لَا تَرَوْنَ، وَأَسْمَعُ مَا لَا تَسْمَعُونَ، إِنَّ السَّمَاءَ أَطَّتْ، وَحَقَّ لَهَا أَنْ تَئِطَّ، مَا فِيهَا مَوْضِعُ أَرْبَعِ أَصَابِعَ إِلَّا وَمَلَكٌ وَاضِعٌ جَبْهَتَهُ سَاجِدًا لِلَّهِ

-‘‘রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, আমি এমন কিছু দেখি, যা তোমরা দেখোনা,  এমন কিছু শুনি, যা তোমরা শুনো না। আকাশ বোঝার কারণে চড় চড় করে,  (তাও শুনি) তার ‘চড় চড়’ করাই সঙ্গত, কেননা, আকাশে চার আঙ্গুল পরিমাণ জায়গাও নেই, যেখানে কোন একজন ফেরেস্তা আল্লাহর সামনে মাথা নত করে রাখেনি।’’ ১৮৫

১৮৫.  

(ক.) ইমাম তিরমিযী: আস সুনান: কিতাবুদ যুহুদ : ৪/১৩৪ পৃ. হা/২৩১২

(খ.) ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল: আল মুসনাদ: ৫/১৭৩ পৃ.

(গ.) ইমাম ইবনে মাজাহ: আস্-সুনান: কিতাবুদ যুহুদ :২/১৪০২ পৃ. হা/৪১৯০

(ঘ.) ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানি : হিলইয়াতুল আউলিয়া :২/২৩৬ পৃ.

(ঙ) ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি: খাসায়েসুল কোবরা: ১/১১৮ পৃ. হা/৩০৬

(চ) আবু নসার মারওয়াযী, তা‘জিমে কদ্বরুল সলাত, ১/২৫৯ পৃ. হা/২৫১

(ছ) বায্যার, আল-মুসনাদ, ৯/৩৫৭ পৃ. হা/৩৯২৫

(জ) ইবনে শায়খ ইস্পাহনী, আল-আজিমাত, ৩/৯৮২ পৃ. হাদিস, ৫০৭

(ঝ) হাকিম নিশাপুরী, আল-মুস্তাদরাক, ৪/৬২৩ পৃ. হাদিস, ৮৭২৬

(ঞ) হাকিম নিশাপুরী, আল-মুস্তাদরাক, ২/৫৫৪ পৃ. হাদিস, ৩৮৮৩

(ট) বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ২/২২৬ পৃ.হাদিস, ৭৬৪

(ঠ) বায়হাকী, আস্-সুনানিল কোবরা, ৭/৮৩ পৃ. হাদিস, ১৩৩৩৭

(ড) বগভী, শরহে সুন্নাহ, ১৪/৩৭০ পৃ. হাদিস, ৪১৭২

(ঢ) আলবানী: সিলসিলাতুস সহীহাহ, হা/১৭২২, তিনি বলেন, হাদিসটি সহীহ। 


উক্ত হাদিস দ্বারা বুঝা গেল, রাসূল (ﷺ) ফেরেস্তাদের দাঁড়ানো এবং তাদের ওজনে আকাশ থেকে আসার শব্দ তিনি শুনেছেন এবং তাদের অবস্থা দেখেছিলেন তারা কীভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। অথচ সাহাবীদের কাছে তা সম্পূর্ণ অদৃশ্যই ছিল। 


❏ এ ধরনের আরেকটি হাদিস ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) সংকলন করেন-

واخرج البيهقى والصابونى فى (المأتين) والخطيب وابن عساكر فى التاريخيهما ، عَنِ الْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، دَعَانِي إِلَى الدُّخُولِ فِي دِينِكَ أَمَارَةٌ لِنُبُّوتِكَ، رَأَيْتُكَ فِي الْمَهْدِ تُنَاغِي الْقَمَرَ وَتُشِيرُ إِلَيْهِ بِأُصْبُعِكَ، فَحَيْثُ أَشَرْتَ إِلَيْهِ مَالَ قَالَ: إِنِّي كُنْتُ أُحَدِّثُهُ وَيُحَدِّثُنِي، وَيُلْهِينِي عَنِ الْبُكَاءِ، وَأَسْمَعُ وَجْبَتَهُ حِينَ يَسْجُدُ تَحْتَ الْعَرْشِ ----- قال البيهقى تفرد به أحمد بن ابراهيم الجبلى وهو مجهول وقال الصابونى : هذا حديث غريب الاسناد والمتن فى المعجزات حسن ـ      

-‘‘ইমাম বায়হাকী, দালায়েলুল নবুওয়াতে, সাবূনী তাঁর মাতীন গ্রন্থে, খতিব বাগদাদী তারীখে বাগদাদে এবং ইমাম ইবনে আসাকির তারীখে দামেস্কে হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূল (ﷺ) কে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আমি আপনার নবুয়তের এ আলামত দেখে ঈমান এনেছি যে, তা হল আপনি চাঁদের সাথে শিশু অবস্থায় বাক্যলাপ করেছিলেন এবং তার দিকে আঙ্গুলে ইশারা করছিলেন, আপনি যেদিকে ইশারা করতেন, চাঁদ সেদিকেই হেলে যেত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, আমি তখন চাঁদের সাথে কথা বলেছিলাম এবং চাঁদ আমার সাথে কথা বলছিল। সে আমার ক্রন্দনে সান্তনা দিচ্ছিল। আর চন্দ্র যখন আল্লাহর আরশের নীচে সেজদা করে, তখনও আমি তার তাসবীহ শুনতে পাই।’’১৮৬

১৮৬.

(ক) আবূ সা‘দ নিশাপুরী, শরফে মোস্তফা, ১/৩৫৮ পৃ. 

(খ) জুরকানী, শরহুল মাওয়াহেব, ১/২৭৫ পৃ.  

(গ) বুরহানুদ্দীন হালবী, সিরাতে হালবিয়্যাহ, ১/১১৫ পৃ.  

(ঘ) ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১/৩৪৯ পৃ.ও ১০/৪৮১ পৃ.  

(ঙ) ইবনে কাসীর, বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ১/২১১ পৃ.  

(চ) বায়হাকী, দালায়েলুল নবুয়ত, ২/৪১ পৃ.  

(ছ) ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতি : খাসায়েসুল কোবরা : ১/৯৪ পৃ. হা/২৩৭


❏ হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) বলেন,  হুযূর (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, 

قَالَ الطَّبَرَانِيّ حَدثنَا يحيى بن أَيُّوب العلاف حَدثنَا سعيد بن أبي مَرْيَم حَدثنَا يحيى بن أَيُّوب عَن خَالِد بن يزِيد عَن سعيد بن أبي هِلَال عَن أبي الدَّرْدَاءؓ  قَالَ قَالَ رَسُول الله ﷺ أَكْثرُوا الصَّلَاة عَليّ يَوْم الْجُمُعَة فَإِنَّهُ يَوْم مشهود تشهده الْمَلَائِكَة لَيْسَ من عبد يُصَلِّي عَليّ إِلَّا بَلغنِي صَوته حَيْثُ كَانَ قُلْنَا وَبعد وفاتك قَالَ وَبعد وفاتي إِن الله حرم على الأَرْض أَن تَأْكُل أجساد الْأَنْبِيَاء ـ 

-‘‘তোমরা জুম‘আর দিন আমার উপর অধিক হারে দরুদ পাঠ করো, ......যে কোন ব্যক্তি আমার প্রতি দরুদ পাঠ করে তার আওয়াজ আমার নিকট পৌঁছে থাকে সে যেখানেই থাকুক না কেন। সাহাবীগণ আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! এমনিভাবে কি আপনার ওফাতের পরও শুনবেন? রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান,  আমার ওফাতের পরও (নবীগণ স্বীয় কবরেও জিন্দা)। কেননা আল্লাহ্ তা‘য়ালা নবীদের শরীর ভক্ষণ করা যমীনের জন্য হারাম করে দিয়েছেন।’’ ১৮৭

১৮৭. 

ক. আল্লামা ইবনে কাইয়্যুম : জিলাউল ইফহাম, ১/১২৭ পৃ. হা/১০৮

খ. আল্লামা শফী উকাড়ভী: জিকরে জামীল, ৯৯ পৃ.


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ইবনুল কাইয়্যুম জাওযিয়্যাহ (ওফাত.৭৫১হি.) হলেন আহলে হাদিস ও দেওবন্দীদের ইমাম। তিনিই হাদিস সংকলন করেন যে,  প্রত্যেকের দুরূদই রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনতে পান, তারপরও তারা আক্বিদা সংশোধন করছে না, সাধারণ মানুষদেরকে ভুল শিখাচ্ছে প্রতিনিয়তই।


❏ অনেক ইমাম সংকলন করেন-

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، ؓ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ : إِنَّ اللَّهَ رَفَعَ لِي الدُّنْيَا فَأَنَا أَنْظُرُ إِلَيْهَا وَإِلَى مَا هُوَ كَائِنٌ فِيهَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ كَمَا أَنْظُرُ إِلَى كَفِّي هَذِهِ، -

-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা আমার জন্য বিশ্বকে তুলে ধরেছেন। ফলে আমি এ দুনিয়া এবং এতে কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে, এমনভাবে দেখতে পাচ্ছি, যেভাবে আমি আমার নিজ এই হাত দেখতে পাচ্ছি।’’  ১৮৮

১৮৮. 

ক. ইমাম তাবরানী: মুজামুল কাবীর: ২/৪১২পৃ. হা/১০৮৯

খ. ইমাম আবু নুয়াইমইস্পহানি : হিলইয়াতুল আউলিয়া : ৬/১০১ পৃ. তরজুমা নং- ৩৩৮

গ. ইমাম জালাল উদ্দিন সূয়তী: খাসায়েসুল কোবরা: ২/১৯৩ : হা/২১১৭

ঘ. ইমাম সুয়ূতি: জামেউল জাওয়ামী : হা/৪৮৪৯

ঙ. ইমাম জুরকানী: শরহুল মাওয়াহেব: ৭/২০৪ পৃ.

চ. আল্লামা ইমাম কাস্তাল্লানী: মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া: ৩/৯৫ পৃ. 

ছ. মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী: জা‘আল হক: ১/১০৩ পৃ. (বাংলা সংস্করণ)

জ. আহলে হাদিস নাসির উদ্দিন আলবানী : দ্বঈফু জামেউস সগীর : হা/১৬২৪

ঝ. মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১১/৪২০ পৃ. হা/৩১৯৭১

ঞ. ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ২/২১১ পৃ.

ট. হাইসামী, মাযমাউদ, মাযমাউয যাওয়াইদ, ৮/২৯০ পৃ.


এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হলো রাসূল (ﷺ) শুধু আমাদের দরুদ শুনেন তা নয়,  বরং তিনি আমাদেরও দেখতে পান। এ হাদিসটির সনদ পর্যালোচনা সামনে করা হবে ইনশাআল্লাহ 


❏ বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম আবদুর রহমান জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) এর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘‘আনিসুল জালীস” এর ২২৭ পৃষ্ঠায় একটি হাদিস বর্ণনা করেন,  রাসূল (ﷺ)  ইরশাদ ফরমান, 

 اصحابى اخوانى صلوا علىّ فى كل يوم الاثنين والجمعة بعد وفاتى فانى أسمع صلواتك بلا واسطة ـ 

-‘‘প্রতি সোমবার ও শুক্রবার আমার ওফাতের পর তোমরা বেশী করে দরূদ পাঠ করবে, কেননা তোমাদের দরূদ আমি মাধ্যম ব্যতীত সরাসরি শুনি।’’ 


তাই উক্ত হাদিস দিয়ে প্রমাণিত হয়ে গেলো রাসূল (ﷺ) ফিরিশতাদের পৌঁছানো ব্যতীত স্বয়ং উম্মতের দুরূদ শুনেন, সে ক্ষমতা খোদ আল্লাহ্ তা‘য়ালা দান করেছেন তবে তাঁর মধ্যে বিভিন্ন স্তর রয়েছে। যেমন-


❏ বিশ্ববিখ্যাত দরূদ সম্পর্কিত গ্রন্থ “দালায়েলুল খায়রাত’’ গ্রন্থে ৫৯ পৃষ্ঠায় হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) এর সূত্রে (শরাহ এর সূত্রে) একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে-

وقيل لرسول الله ارأيت صلوة المصلين عليك ممن غاب عنك ومن يأتى بعدك ما حالهما عندك؟ فقال أسمع صلوة اهل محبتى واعرفهم وتعرض علىّ صلوة غيرهم عرضا ـ 

-‘‘হুযূর (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার কাছে দূরে অবস্থানকারী ও আপনার ওফাতের পরে আগমনকারীদের দরুদের অবস্থা কি? তখন তিনি ইরশাদ করলেন, আমি মুহাব্বত সম্পন্ন লোকদের দরূদ নিজেই স্বয়ং শুনি এবং তাদেরকে চিনি এবং মুহাব্বত ছাড়া পড়া ব্যক্তিদের দরূদ আমার নিকট (ফিরেশতাদেও মাধ্যমে) পেশ করা হয়।’’১৮৯

১৮৯. ইমাম আবু আব্দুল্লাহ জাজুলী : দালায়েলুল খায়রাত- পৃষ্ঠা নং- ৫৯, ফরিদ বুক ডিপু, দিল্লী শাহী জামে মসজিদ, ইমাম ইবনে মাহদী আল ফার্সী : মাতালিউল মুর্সারাত ফি শরহে দালায়েলুল খায়রাত , ১৫৬ পৃ., আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৪৪ পৃ:, ইমাম সাভী : তাফসীরে সাভী : ৫ পারা, সূরা আহযাবের তাফসির, আল্লামা শফী উকাড়ভী : জিকরে জামিল- পৃষ্ঠা নং : ৯১


❏ আল্লামা ইমাম ইবনুল হজ্জ ‘আল-মাদখাল’ গ্রন্থে ও ইমাম শিহাবুদ্দীন কাস্তাল্লানী (رحمة الله) তার ‘মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া’ গ্রন্থে “বাবুল জিয়ারাতুল কুবুর শরীফ” শীর্ষক অধ্যায়ে বলেছেন-

وَقَدْ قَالَ عُلَمَاؤُنَا رَحْمَةُ إذْ لَا فَرْقَ بَيْنَ مَوْتِهِ وَحَيَاتِهِ أَعْنِي فِي مُشَاهَدَتِهِ لِأُمَّتِهِ وَمَعْرِفَتِهِ بِأَحْوَالِهِمْ وَنِيَّاتِهِمْ وَعَزَائِمِهِمْ وَخَوَاطِرِهِمْ، وَذَلِكَ عِنْدَهُ جَلِيٌّ لَا خَفَاءَ فِيهِ.

-‘‘আমাদের সুবিখ্যাত উলামায়ে কিরাম বলেন যে,  হুযূর (ﷺ) এর জীবন ও ওফাতের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তিনি নিজ উম্মতকে দেখেন, তাদের অবস্থা,  নিয়ত, ইচ্ছা ও মনের কথা ইত্যাদি জানেন। এগুলো তার কাছে সম্পূর্ণ রূপে সুস্পষ্ট, বরং এই কথার মধ্যে কোন রূপ অস্পষ্টতা ও দুর্বোধ্যতার অবকাশ নেই।’’ ১৯০

১৯০. আল্লামা ইমাম কাস্তাল্লানী : মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া : দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : ৪/৫৮০ পৃ., আল্লামা ইবনুল হাজ্ব : আল মাদখাল : কালাম আলা যিয়ারতে সাইয়্যিদিল মুরসালীন : ১/২৫২ পৃ., আল্লামা ইমাম জুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব : ৪/৩১২ পৃ., আল্লামা মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী : জা‘আল হক, ১/২৪২ পৃ. 


❏ উম্মুল মু‘মিনীন হযরত মায়মুনা (رضي الله عنه) বলেন, একরাতে হুযূর (ﷺ) আমার হুজরায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি যথারীতি ‘তাহাজ্জুদ’ নামাযের জন্য উঠলেন এবং ওযূ করার স্থানে গমন করলেন-

فَسَمِعَتْهُ يَقُولُ فِي مُتَوَضَّئِهِ: لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ ثَلَاثًا , نُصِرْتَ نُصِرْتَ، ثَلَاثًا , فَلَمَّا خَرَجَ قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ , سَمِعْتُكَ تَقُولُ فِي مُتَوَضَّئِكَ: لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ ثَلَاثًا , نُصِرْتَ نُصِرْتَ، ثَلَاثًا , كَأَنَّكَ تُكَلِّمُ إِنْسَانًا , فَهَلْ كَانَ مَعَكَ أَحَدٌ؟ فَقَالَ: هَذَا رَاجِزُ بَنِي كَعْبٍ يَسْتَصْرِخُنِي

-‘‘অতঃপর আমি শুনতে পেলাম যে, তিনি ওযূখানায় তিনবার ‘লাব্বায়ক’ (আমি তোমার কাছে উপস্থিত) এবং তিনবার ‘নুসিরতা’  (তোমাকে সাহায্য করা হল) বললেন। যখন হুযূর (ﷺ) ওযূ করে বের হলেন, তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি শুনতে পেলাম- আপনি ওযূখানায় তিনবার ‘লাব্বায়ক’ এবং তিনবার ‘নুসিরতা’ বলেছেন। যেন আপনি কোন মানুষের সাথে কথা বলছিলেন। আপনার কাছে কেউ ছিল কি? তখন হুযূর (ﷺ) ইরশাদ করেন, ইতি রাজেয, আমার কাছে ফরিয়াদ করেছে।’’১৯১

১৯১. ইমাম তাবরানী, মু‘জামুস সগীর, ২/১৬৭ পৃ. হা/৯৬৮, হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৬/১৬৩ পৃ. হা/১০২৩২, ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ২৩/৪৩৩ পৃ. হা/১০২০, দিয়ার বকরী, তারিখুল খামিস, ২/৭৭ পৃ., ইমাম বুরহান উদ্দিন হালবী, সিরাতে হালবিয়্যাহ, ৩/১০৪ পৃ. ইমাম ইসমাঈল ইস্পাহানী, দালায়েলুন নবুয়ত, ১/৩৭ পৃ. হা/৫৯, জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৩/৩৮১ পৃ.


পর্যালোচনা:


উল্লেখ্য যে, তখন তিনি ছিলেন মক্কায় এবং হুযূর (ﷺ) ছিলেন মদিনায়। কিন্তু হুযূর (ﷺ) তার ফরিয়াদ শুনেছেন এবং তাকে সাহায্য করেছেন। ঘটনা ছিল এই- হুদায়বিয়ার সন্ধিসূত্রে বনী বকর কুরাইশের পক্ষ অবলম্বন করেছিল এবং খোযাআ গোত্র হুযূর আকরাম (ﷺ)‘র পক্ষ অবলম্বন করেছিল। আর এ পক্ষাবলম্বন সেই চুক্তির ভিত্তিতে ছিল যে, আগামী দশ বছর পারস্পরিক কোন যুদ্ধ হবে না। কিন্তু কুরাইশরা সুন্ধি ও তার শর্তাবলী ভেঙ্গে ফেলল এবং বনী বকর ইত্যাদির সাথে মিলে মুসলিম নিধনের সংকল্প করেছিল। (ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, ইসাবা ফি তামিযিস সাহাবা, ২/৫৩৬ পৃ.)


সেই মুহূর্তে হযরত আমর ইবনে সালেম রাজেয (رضي الله عنه) মক্কা মুর্কারমা থেকে ফরিয়াদ করলেন এবং হুযূর (ﷺ)‘র কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলেন, যার উত্তরে নবী (ﷺ) তিনবার ‘লাব্বায়ক’ এবং তিনবার ‘নুসিরতা’ বলে তাকে সাহায্য করেছেন। বুঝা গেল রাসূল (ﷺ) দূরে কাছে সব কিছুই শুনেন এবং দেখেন।


❏ ইমাম দারাকুতনী  এবং সুয়ূতি (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-

عَن ابْن عمر ؓ قَالَ كُنَّا مَعَ رَسُول الله ﷺ فَرفع رَأسه إِلَى السَّمَاء فَقَالَ وَعَلَيْكُم السَّلَام وَرَحْمَة الله فَقَالَ النَّاس يَا رَسُول الله مَا هَذَا قَالَ مر بِي جَعْفَر بن أبي طَالب فِي مَلأ من الْمَلَائِكَة فَسلم عَليّ

-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একদা) আমরা হুযূর পুরনুর (ﷺ) এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। হঠাৎ হুযূর (ﷺ) তার মাথা মোবারক তুলে ফরমালেন, ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহ্মাতুল্লাহ। অতপর উপস্থিত লোকেরা (সাহাবীরা) বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)! আপনি কার সালামের জবাব দিলেন। তিনি বললেন, হযরত জাফর ইবনে আবু তালিব (رضي الله عنه) ফিরেশতাদের একটি দলসহ আমার নিকট দিয়ে গমন করেছিলেন, তিনি আমাকে সালাম প্রদান করেছেন। আমি তার উত্তর দিলাম।’’ ১৯২

১৯২. ইমাম জালালুদ্দীন সূয়তী : খাসায়েসুল কোবরা : ১/৪৬০-৪৬১ পৃ. হা/১৪৩৫, ১৪৩৬, ইমাম দারাকুতনী, গারায়েবু মালেক, ১/৫৫ পৃ., ইমাম বুরহানুদ্দীন হালাবী, সিরাতে হালাবিয়্যাহ, ৩/১০০ পৃ., ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১১/১০৯ পৃ., ইমাম জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৩/৩৫২ পৃ.


উক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত  হলো, সাহাবী যা শুনেন নি রাসূল (ﷺ) তা শুনতেন এবং আরো প্রমাণিত হল ওফাতের পরও সাহাবীরা যেখানে ইচ্ছা সেখানে যেতে পারেন। তাহলে রাসূল (ﷺ) এর অবস্থা কিরূপ হবে?


❏ মিশকাত শরীফের ‘বাবুল কারামাত’ অধ্যায়ে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে, হযরত উমর (رضي الله عنه) হযরত সারিয়া (رضي الله عنه) কে এক সেনাবাহিনীর অধিনায়ক নিযুক্ত করে নেহাওয়ান্দ নামক স্থানে যুদ্ধের জন্য পাঠিয়েছিলেন। 


❏ এরপর একদিন হযরত উমর (رضي الله عنه) মদীনা মুনাওয়ারায় খুতবা পাঠের সময় উচ্চ স্বরে বলে উঠলেন-

فَبَيْنَمَا عُمَرُ يَخْطُبُ فَجَعَلَ يَصِيحُ: يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ لَقِيَنَا عَدُوُّنَا فَهَزَمُونَا فَإِذَا بِصَائِحٍ يَصِيحُ: يَا سَارِيَ الْجَبَلَ. فَأَسْنَدْنَا ظُهُورَنَا إِلَى الْجَبَلِ فَهَزَمَهُمُ اللَّهُ تَعَالَى

-‘‘হযরত উমর (رضي الله عنه) মদীনা মুনাওয়ারায় খুতবা পড়ার সময় উচ্চ স্বরে বলে উঠলেন, ওহে সারিয়া! পাহাড়ের দিকে পিঠ দাও।’’ ১৯৩

১৯৩. খতিব তিবরিজী : মিশকাতুল মাসাবীহ : ৪/৪০১ পৃ. হা/৫৯৫৪, ইমাম বায়হাকী : দালায়েলুন নবুয়ত : ৬/৩৭০ পৃ., আল্লামা ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৫৪১ পৃ. হা/১৩৩১, আল্লামা ইমাম আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/৫৩২ পৃ. হা/৩১৭১, আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুস সহীহাহ, হাদিস, ১১১০, তিনি বলেন সনদটি সহীহ, আবু নুয়াইম ইস্পাহানী, দালায়েলুল নবুয়ত, ৫১৮পৃ-৫১৯ পৃ., গায্যালী, ইহইয়াউল উলূম, ৩/২৫ পৃ., মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১২/৫৭১ পৃ. হা/৩৫৭৮৮, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, আল-ইসাবা, ৩/৬পৃ. হাদিস, ৩৫৭৮৮, ইমাম যারীর ত্ববারী, তারীখে ত্বাবারী, ৩/২৫৪ পৃ., বায়হাকী, ই‘তিকাদ, ২০৩ পৃ., শায়খ ইউসুফ নাবহানী, হুজ্জাতুল্লাহি আ‘লাল আলামিন, ৬১২-৬১৩, আল্লামা যুবায়দী ইত্তাহাফ সাদাকাতুল মুত্তাকীন, ৮/৩৭৯পৃ.


বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর উক্ত সেনাবাহিনী থেকে কর্জ বাহক এসে জানান, আমাদিগকে শত্র“রা প্রায় পরাস্ত করে ফেলেছিল, এমন সময় কোন এক আহবানকারীর ডাক শুনতে পেলাম। উক্ত অদৃশ্য আহবানকারী বলছিলেন তার কারণে ওদেরকে فَهَزَمَهُمُ اللَّهُ تَعَالَى ‘‘আল্লাহ্ তা‘আলার কৃপায় তাদেরকে অপদস্ত করে দিলাম।

এখন, হযরত উমর (رضي الله عنه) মদীনা শরীফে খুতবা দেওয়ার সময় শত শত মাইল দূর থেকে হযরত সারিয়া (رضي الله عنه) কে দেখতে পেলেন এবং তিনি তার আওয়াজ শুনতে পেলেন, অপরদিকে তিনি খুতবাও দিচ্ছেন। সুতরাং, রাসূল (ﷺ) এর খলিফাদের যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে রাসূল (ﷺ) এর অবস্থা কিরূপ হতে পারে?


❏ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) সম্পর্কে বর্ণিত আছে, 

حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ قَالَ: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ: خَدِرَتْ رِجْلُ ابْنِ عُمَرَ، فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ: اذْكُرْ أَحَبَّ النَّاسِ إِلَيْكَ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ ـ 

-‘‘হযরত আবদুর রাহমান বিন সা‘দ (رضي الله عنه) বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) এর পা অবশ হয়ে গেল। তখন এক ব্যক্তি তাঁকে বললেন, আপনি ওই ব্যক্তিকে স্মরণ করুন, যিনি আপনার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। তখন তিনি বললেন, ইয়া মুহাম্মাদাহ!। অতঃপর তার পা ভাল হয়ে গেল।’’ ১৯৪

১৯৪. ইমাম বুখারী : আদাবুল মুফরাদ : পৃ-১৪২, হাদিস নং- ৯৬৪, হযরত আব্দুর রহমান বিন সাদ (رضي الله عنه)-এর সূত্রে, ইমাম নববী : কিতাবুল আযকার : ২৭১ পৃ., ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ, ২/৫৩ পৃ., ইমাম ইবনে সাদ : তাবক্বাত-ই- ইবনে সাদ, ৪/১৫৪ পৃ., ইমাম ইবনে সুন্নি : আমালুল ইয়াউমি ওয়াল লায়লাহ, পৃ-৬৭, মুহাদ্দিস ইবনে যারীর তবারী : নুরুল ঈমান ফী যিয়ারতে আসার-ই-বিহাবীবির রাহমান, পৃ-৮, আহলে হাদিস শায়েখ ওহীদুজ্জামান হায়দারাবাদী : হাদিয়াতুল মাহদি, পৃ-২৩, ইমাম ইবনে যাহদ, মুসনাদে যাহদ, ৩৬৯ পৃ., হা/২৫৩৯


❏ দেখুন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) এর পা অবশ হয়ে গেল আর রাসূল (ﷺ) কে ওফাতের পরও দূর থেকে ডাকলেন, তাতে তিনি রাসূল (ﷺ)-এর সাড়াও পেলেন এবং তার পা রাসূল (ﷺ) সুস্থ করে দিলেন। 


❏ বিশ্ববিখ্যাত ফকীহ আল্লামা শিহাবুদ্দীন খিফ্ফাযী (رحمة الله) লিখিত গ্রন্থ ‘নাসীমুর রিয়াদ্ব’ শরহে শিফা এর ৩য় খণ্ডের শেষে উল্লেখ করেন-

الانبياء عليهم السلام من جهة الاجسام والظواهر مع البشر وبواطنهم وقواهم الروحانية ملكية ولذا ترى مشارق الارض ومغاربها تسمع اطيط السماء وتشم رائحة جبريل اذا اراد النزول اليهم ـ 

-‘‘আম্বিয়ায়ে কেরাম (ﷺ) শারিরীক ও বাহ্যিক দিক থেকে মানবীয় বৈশিষ্ঠ্য সম্পন্ন,তবে আভ্যন্তরীন ও রূহানী শক্তির দিক থেকে ফিরিশতাদের বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। এ কারণেই তারা পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত সমূহ দেখতে পান, আসমানের চিড়চিড় আওয়াজ শোনেন এবং হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) তাদের নিকট অবতরণের ইচ্ছা পোষণ করতেই তার সুঘ্রাণ পেয়ে যান।’’ 


❏ বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস, মুফাস্সির, দার্শনীক ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (رحمة الله) বলেন-

وَكَذَلِكَ الْعَبْدُ إِذَا وَاظَبَ عَلَى الطَّاعَاتِ بَلَغَ إِلَى الْمَقَامِ الَّذِي يَقُولُ اللَّهُ كُنْتُ لَهُ سَمْعًا وَبَصَرًا فَإِذَا صَارَ نُورُ جَلَالِ اللَّهِ سَمْعًا لَهُ سَمِعَ الْقَرِيبَ وَالْبَعِيدَ وَإِذَا صَارَ ذَلِكَ النُّورُ بَصَرًا لَهُ رَأَى الْقَرِيبَ وَالْبَعِيدَ وَإِذَا صَارَ ذَلِكَ النُّورُ يَدًا لَهُ قَدَرَ عَلَى التَّصَرُّفِ فِي الصَّعْبِ وَالسَّهْلِ وَالْبَعِيدِ وَالْقَرِيبِ. 

-‘‘এবং এভাবে যখন কোন বান্দা পুন্য কাজের উপর সর্বদা আমল করতে থাকে তখন সে ঐ মাকামে পৌঁছে যায়,  যার সম্পর্কে আল্লাহ্ তা‘য়ালা বলেন, আমি তার কান ও চোখ হয়ে যাই। যখন আল্লাহর মহাত্মের নূর তার কান হয়ে যায়,  তখন সে দূর ও নিকটের আওয়াজ সমূহ শুনেন। যখন এই নূর তার চোখ হয়ে যায়,  তখন সে দূর ও নিকটের বস্তু সমূহ অবলোকন করতে পারেন এবং যখন এই মাহাত্মের নূর তার হাত হয়ে যায়,  তখন সে কঠিন ও সহজ বিষয়ে,  দূর ও নিকটে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে সক্ষম হন।’’ ১৯৫

১৯৫. ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী : তাফসীরে কাবীর: ২১/৪৩৬ পৃ. সূরা ক্বাহাফ, আয়াত.নং.৯


দেখুন আল্লাহর ওলীদের যদি এমন শান হয় তাহলে রাসূল (ﷺ) এর কীরূপ শান হতে পারে? 


❏ আল্লামা শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) এর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘‘মাজমাউল বারকাত’’ গ্রন্থের ১৬১ পৃষ্ঠায় বলেন, 

وى عليه السلام براحوال واعمال امت مطلع است برمقر بان وخاصان درگاه خود مفيض وحاضر وناظر است ـ 

-‘‘হুযূর (ﷺ) নিজ উম্মতের যাবতীয় অবস্থা ও আমল সম্পর্কে অবগত এবং তার মহান দরবারে উপস্থিত সকলকেই ফয়েয প্রদানকারী ও সকলের নিকট তিনি হাযির- নাযির।’’


কারবালার অবস্থা অবলোকন এবং সেখানে উপস্থিত হওয়া


❏ হযরত সালমা (رضي الله عنه) বলেন-

دَخَلْتُ عَلَى أُمِّ سَلَمَةَ، وَهِيَ تَبْكِي فَقُلْتُ: مَا يُبْكِيكِ؟ قَالَتْ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ فِي الْمَنَامِ يَبْكِي وَعَلَى رَأْسِهِ وَلِحْيَتِهِ التُّرَابُ، فَقُلْتُ: مَا لَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: شَهِدْتُ قَتْلَ الْحُسَيْنِ آنِفًا

-‘‘আমি উম্মাহাতুল মু‘মিনীন মা উম্মে সালামা (رضي الله عنه)‘র হুজরা শরীফে প্রবেশ করলাম এবং দেখলাম যে তিনি কাঁদছেন। আমি বললাম, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন, একটু আগে আমি রাসূল (ﷺ) কে স্বপ্নে দেখলাম যে তাঁর মাথা মুবারকে এবং দাঁড়ি মুবারকে ধুলা বালি লেগে আছে। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার এ অবস্থা কেন? তিনি বললেন, এই মাত্র আমি হুসাইনের শাহাদাতের স্থানে উপস্থিত ছিলাম।’’ ১৯৬

১৯৬. ইমাম হাকেম নিশাপুরী, আল-মুস্তাদরাক, ৪/২০ পৃ. হা/৬৭৭৪, পরিচ্ছেদ: ذِكْرُ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ أُمِّ سَلَمَةَ بِنْتِ أَبِي أُمَيَّةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا , 

তিনি একে সহীহ বলেছেন- سكت عنه الذهبي في التلخيص 

-‘‘ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার তালখীছ গ্রন্থে এ সনদের বিষয়ে নীরব ছিলেন।’’ 

ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ৬/১২০ পৃ. হা/৩৭৭১, পরিচ্ছেদ: بَابُ مَنَاقِبِ أَبِي مُحَمَّدٍ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ وَالْحُسَيْنِ بْنِ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا , 

ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ২৩/৩৭৩ পৃ. হা/৮৮২, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৭৭৩ পৃ. হা/৬১৬৬, মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৯/৩৯৮০ পৃ. হা/৬১৬৬, তিনি বলেন-

 قَوِّي -‘‘

এ হাদিসটি শক্তিশালী।’’ এবং ৯/৩৯৮৬ পৃ. হা/৬১৮০, ইমাম ইবনে আছির, জামেউল উসূল, ৯/৩৫ পৃ. হা/৬৫৬৭

 

আক্বিদা


এ হাদিস থেকে বুঝা গেল যে, কারবালায় কি ঘটছে তা আল্লাহর নবী (ﷺ) তাঁর আপন রওজা মোবারক থেকেই দেখতে পেয়েছেন, এজন্যই তিনি সেখানে উপস্থিত হয়েছেন। এ হাদিসের (شَهِدْتُ) এর ব্যাখ্যায় আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) লিখেছেন- أَيْ: حَضَرْتُ -‘‘অর্থাৎ আমি উপস্থিত ছিলাম।’’  ১৯৭

১৯৭. মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৯/৩৯৮০ পৃ. হা/৬১৬৬


এ হাদিস থেকে বুঝা গেল প্রথিবীর যে কোন প্রান্তে রাসূল (ﷺ)-এর উপস্থিত হওয়া তাঁর ইখতিয়ারাধীন।  তারপরও যারা এ আক্বিদার বিপরীত মত পোষণ করেন তারা কখনই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের লোক হতে পারেন না। 

 
Top