বিষয় নং-০৫: তোমরা মু‘মিনের অন্তর দৃষ্টিকে ভয় কর, কেননা তারা আল্লাহর নূর দ্বারা দেখে:


আহলে হাদিস নাসিরুদ্দীন আলবানী তার নিকৃষ্ট গ্রন্থ ‘সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্-দ্বঈফাহ’ এর ১৮২১ নং হাদিসের আলোচনায় এ বিষয়ের হাদিসটিকে দ্বঈফ বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিল। 


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এ হাদিসটি অনেকগুলো সূত্রে বর্ণিত, তিনি একটি সূত্রের উপর ভিত্তি করে পুরো বিষয়ের হাদিসকে যঈফ বলা মানে উসূলে হাদিস শাস্ত্রকে অবমাননার শামীল। নিম্নে আমি প্রত্যেকটি সূত্রের মান নিয়ে আলোচনার করা চেষ্টা করবো ইনশা আল্লাহ।


প্রথম সূত্র:


ইমাম তিরমিযি (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ أَبِي الطَّيِّبِ، قَالَ: حَدَّثَنَا مُصْعَبُ بْنُ سَلاَّمٍ، عَنْ عَمْرِو بْنِ قَيْسٍ، عَنْ عَطِيَّةَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ  ؓ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ : اتَّقُوا فِرَاسَةَ الْمُؤْمِنِ فَإِنَّهُ يَنْظُرُ بِنُورِ اللهِ


-‘হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, তোমরা মু‘মিনদের অন্তরদৃষ্টিকে ভয় কর, কেননা তারা আল্লাহর নূর দ্বারা দেখেন।’’  ১৭

১৭. ইমাম বুখারী, তারীখুল কাবীর,  ৭/৩৫৪ পৃ.হাদিস,  ১৫২৯, সুয়ূতি : আল জামেউস সগীর : ১/২৯ পৃ.: হা/১৫১, জামিউল আহাদিস,  ১/৩৩৪ পৃ. হাদিস,  ৫৩১, ইমাম তিরমিযী : আস-সুনান : কিতাবুত-তাফাসীর : সূরা হিযর : ৫/১৪৯ পৃ. হাদিস: ৩১২৭,  ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৩৮ পৃ. হা/২৩,  আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ১/৩৫ পৃ. হা/৮০,  আহলে হাদিস নাসিরুদ্দীন আলবানী : দ্বঈফাহ : ৩/১৪২ পৃ.,  ইমাম আবু নুয়াইম : হিলইয়াতুল আউলিয়া : ৪/৯৪ পৃ.,  ইমাম তাবরানী : মু‘জামুল কাবীর : ৮/১২১ পৃ. হা/,  ও মু‘জামুল আওসাত,  ৮/২৩ পৃ.হাদিস,  ৭৮৪৩, ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী,  আল-তিব্বুল নববী,  ১/২০৪ পৃ. হা/৬৩,  ও ১/২০৪ পৃ. হা/৬৪, ও ১/২০৪ পৃ. হা/৬৫, হযরত আবু উমামার সূত্রে,  তাঁর অপর গ্রন্থ হিলইয়াতুল আওলিয়া, ১০/২৮১ পৃ.,  ইমাম যুবাইদী উত্তাহাদুস-সা’দাতুল মুত্তাকীন : ৬/৫৪৪ পৃ.,  আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতি, আদ-দুররুল মানসুর : ৪/১০৩ পৃ.,  আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়ায়েদ :,  আল্লামা মানবী : ফয়জুল কাদীর : ১/১৪২ পৃ. হা/১৫১,  শায়খ উসায়িদ আব্দল্লাহ আসাদী,  আল-মুকতাছারুল নসীহ,  ১/১৮পৃ.হাদিস,  ১৬, হাসকাফী,  মুসনাদে আবি হানিফাহ, খালেদ বিন সালেম নিশাপুরী (ওফাত.৪১২পৃ.), আল-আরবাঈন ফিল তাসাউফ, ১/১৪ পৃ. হা/৩৫ ও ১/৯০ পৃ. ইমাম ইবনে আছির, জামিউল উসূল, ২/২০৫ পৃ. হা/৬৮৪, সুয়ূতি,  আদ্দরুল মুনতাসিরাহ, ১/৪৩ পৃ, হা/৩, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর,  ১/৩৬ পৃ. হা/২৪৩, ও ১/৪৭ পৃ. হাদিস,  ৩৮৫, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল,  ১১/৮৮ পৃ. হাদিস,  ৩০৭৩, সুলাইমান বিন ফাসী, জামিউল ফাওয়াইদ,  ৩/১৫৩ পৃ. হা/৭০৩৭, দরবেশহুত, আস্-সুনানিল মুত্তালিব, ১/২৮ পৃ. হা/৪৮, তিনি বলেন, হাদিসটি ‘হাসান’, ইবনুল জাওযী, সিফাতুস্-ছাফা,  ২/১২৬ পৃ.


পর্যালোচনা:


ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) এটি সংকলন করে লিখেন-


هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ، إِنَّمَا نَعْرِفُهُ مِنْ هَذَا الوَجْهِ.


-‘‘এ হাদিসটি গরীব, আমরা শুধু এ সূত্রেই হাদিসটিকে চিনি।’’ এ হাদিসে একক ইমাম তিরমিযি (رحمة الله)-এর একক সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল হওয়া যাবে না,  কেননা তা বাস্তবতার বিপরীত। গরীব হাদিস তাকেই বলে যে হাদিস সর্ব স্তরে বর্ণনাকারী একজন, কিন্তু এ হাদিসের বেলায় তেমনটি নয়; বরং এটির মান মুতাওয়াতিরের নিকটবর্তী। আমার যেটা মনে হয় যে, ইমাম তিরমিযীর নিকট একজন সাহাবির সনদ পৌঁছেছে তাই তার নিকট সনদটি গরীব বলে মনে হয়েছিল। 


আল্লামা তাহের পাটনী (رحمة الله) এ হাদিসটি প্রসঙ্গে লিখেছেন- بِسَنَد حسن. -‘‘এ সনদটি ‘হাসান’।’’ (আল্লামা তাহের পাটনী, তাযকিরাতুল মাওদ্বুআত, ১৯৫ পৃ.) 


তারপরে তিনি অন্যান্য সনদ বিশ্লেষণ করে এটি সম্পর্কে বলেন- قلت حسن صَحِيح -‘‘আমি (তাহের পাটনী) বলি, এটি হাসান, সহীহ।’’(আল্লামা তাহের পাটনী, তাযকিরাতুল মাওদ্বুআত, ১৯৫ পৃ.) 


এ হাদিসের অন্যতম রাবী ‘মুস‘আব ইবনে সাল্লাম’ সম্পর্কে ইমাম ইবনে আদী (رحمة الله) বলেন-‘‘


وَأَرْجُو أَنَّهُ لا بَأْسَ بِهِ


-‘‘আমি আশাবাদী তার হাদিস গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই।’’ (ইমাম ইবনে আদি, আল-কামিল, ৮/৮৮ পৃ. ক্রমিক.১৮৪৪) 


ইমাম যাহাবী (رحمة الله) উল্লেখ করেছেন- وقال أبو حاتم: محله الصدق -‘‘ইমাম আবু হাতেম (رحمة الله) বলেন, তিনি সত্যবাদীদের অর্ন্তভুক্ত।’’ (যাহাবী, মিযানুল ই‘তিদাল, ৪/১২০ পৃ. ক্রমিক.৮৫৬২) 


আল্লামা মুগলতাঈ (رحمة الله) বলেন- وابن شاهين في الثقات. -‘‘ইমাম ইবনে শাহীন (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর গ্রন্থে অর্ন্তভুক্ত করেছেন।’’ (মুগলতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ১১/২১৫ পৃ. ক্রমিক.৪৫৭৯) 


উক্ত রাবী ছাড়াও ইমাম উকাইলী (رحمة الله) এ সাহাবী থেকে সনদ সংকলন করেছেন এভাবে-


حَدَّثَنَاهُ مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ الْأَنْطَاكِيُّ، حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ دَاوُدَ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ كَثِيرٍ، عَنْ عَمْرِو بْنِ قَيْسٍ، عَنْ عَطِيَّةَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ


-‘‘(ইমাম উকাইলী, দ্বুআফাউল কাবীর, ৪/১২৯ পৃ. ক্রমিক.১৬৮৮) 


এই সনদে ‘মুহাম্মদ বিন কাসির’ সম্পর্কে ইমাম উকাইলী (رحمة الله) নিজেই বলেন- وَلَمْ يَكُنْ بِهِ بَأْسٌ -‘‘তার হাদিস গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই।’’ (ইমাম উকাইলী, দ্বুআফাউল কাবীর, ৪/১২৯ পৃ. ক্রমিক.১৬৮৮, ইমাম সুয়ূতি, আল-লাআলিল মাসনূ, ২/২৭৮ পৃ.) 


তবে তাকে অনেকে যঈফ বলেছেন বলে ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার মিযানুল ই‘তিদালে উল্লেখ করেছেন। (ইমাম সুয়ূতি, আল-লাআলিল মাসনূ, ২/২৭৮ পৃ.)


এমন একটি হাদিসকে আলবানীসহ আহলে হাদিস ধোঁকাবাজরা কিভাবে যঈফ বলে আমার ভাবতেও অবাক লাগে।


দ্বিতীয় সূত্র: 


এ হাদিসটির আরেকটি সূত্র পাওয়া যায় যেমন-


حَدَّثَنَا أَبِي رَحِمَهُ اللهُ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ إِسْحَاقَ الطَّبَرِيُّ، ثنا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُحَمَّدٍ، ثنا سُلَيْمَانُ بْنُ سَلَمَةَ، ثنا مُؤَمَّلُ بْنُ سَعِيدِ بْنِ يُوسُفَ، ثنا أَبُو الْعَلَاءِ أَسَدُ بْنُ وَدَاعَةَ الطَّائِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنِي وَهْبُ بْنُ مُنَبِّهٍ ، عَنْ طَاوُسٍ، عَنْ ثَوْبَانَ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ ﷺ: احْذَرُوا دَعْوَةَ الْمُؤْمِنِ وَفِرَاسَتَهُ فَإِنَّهُ يَنْظُرُ بِنُورِ اللهِ وَيَنْظُرُ بِالتَّوْفِيقِ


-‘‘হযরত ওয়াহ ইবনে মুনাব্বাহ (رحمة الله) তিনি হযরত তাউস (رحمة الله) হতে তিনি হযরত সাওবান (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) বলেন,  তোমরা মু’মিনদের (ওলীদের) অন্তরদৃষ্টিকে ভয় কর, কেননা তারা আল্লাহর নূর দ্বারা দেখে এবং তারা আল্লাহর দেয়া ক্ষমতা বলে দেখে।’’ ১৮

১৮ . ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানি, হিলইয়াতুল আওলিয়া, ৪/৮১ পৃ.ও তার অপর গ্রন্থ আর-আরবাঈন আ‘লা মাযহাবিল মুহাক্কাকি মিনাল সূফিয়া,  ১/১০৫ পৃ. হা/৫৫, আবু শায়খ ইস্পাহানী, তবকাতুল মুহাদ্দিসীন, ৩/৪১৯ পৃ. ইমাম সুয়ূতি, জামেউল আহাদিস, ১/৪৭৫ পৃ. হা/৭৬১, ইমাম তবারী, আল-জামিউল বায়ান ফি তাফসীরুল কোরআন,  ১৪/৪৭ পৃ.


সনদ পর্যালোচনা: এ সনদে ‘আসাদ ইবনে ওয়াদা‘আহ’ নামক রাবী নিয়ে কেউ কেউ সমালোচনা করতে চায়, আমি তাদের জবাবে বলবো, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) উল্লেখ করেছেন- وذَكَره ابن حِبَّان في الثقات -‘‘ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর অর্ন্তভুক্ত করেছেন।’’ (ইমাম ইবনে হিব্বান, কিতাবুস সিকাত, ৪/৫৬ পৃ. ক্রমিক.১৮০৫, ইবনে হাজার, লিসানুল মিযান, ২/৯৩ পৃ. ক্রমিক.১১০৮) 


ইমাম ইবনে হাজার (رحمة الله) এবং ইমাম যাহাবী (رحمة الله) উল্লেখ করেন- وقال النَّسَائي: ثقة، -‘‘ইমাম নাসাঈ (رحمة الله) বলেন, তিনি সিকাহ বা বিশ্বস্ত রাবী।’’(ইমাম ইবনে হাজার, লিসানুল মিযান, ২/৯৩ পৃ. ক্রমিক.১১০৮, যাহাবী, মিযানুল ই‘তিদাল, ১/২০৭ পৃ. ক্রমিক.৮১৬) 


তাই এই সনদটির মান ‘সহীহ’ পর্যায়ের। ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) এ হাদিসটির শাওয়াহেদ হিসেবে আরেকটি হাদিস এভাবে সংকলন করেন-


أَخْرَجَهُ الْبَزَّار وأَبُو نُعَيم وَابْن جرير وَابْن السّني وأَبُو نُعَيم فِي الطِّبّ منْ طَرِيق أَبِي بشر بْن المزاق عَنْ ثَابت عَن أَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُول الله: إِن للَّه عَزَّ وَجَلّ عبادًا يعْرفُونَ النّاس بالتوسم.


-‘‘ইমাম বায্যার, আবু নুয়াইম, ইবনে জারীর, ইবনে সুন্নী এবং ইমাম আবু নুয়াইম তাঁর কিতাবুল তিব্ এ হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, নিশ্চয় মহান রবের কতিপয় বান্দা রয়েছেন যারা লোকদেরকে দূরদৃষ্টির মাধ্যমে চেনেন।’’ (ইমাম সুয়ূতি, আল-লাআলিল মাসনূ, ২/২৭৮ পৃ.)


তৃতীয় সূত্র: 


এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে আরেকটি সনদ পাওয়া যায় যেমন তা হলো-


حَدَّثَنَا بَكْر بْن سهل حَدَّثَنَا عَبْد الله بْن صالِح مُعَاوِيَةُ بْنُ صَالِحٍ، عَنْ رَاشِدِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: اتَّقُوا فِرَاسَةَ الْمُؤْمِنِ، فَإِنَّهُ يَنْظُرُ بِنُورِ اللَّهِ


-‘‘হযরত আবূ উমামা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, তোমরা মুমিন বান্দার অন্তরদৃষ্টিকে ভয় কর, কেননা তারা আল্লাহর নূর দ্বারা দেখে থাকেন।’’  ১৯

১৯ . ইমাম সুয়ূতি : আল জামেউস সগীর : ১/২৯ : হা/১৫১, জামিউল আহাদিস, ১/৩৩৪পৃ. হাদিস,  ৫৩১, ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৩৮ পৃ. হা/২৩, আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ১/৩৫ পৃ. হা/৮০, আহলে হাদিস নাসিরুদ্দীন আলবানী : সিল.. দ্বঈফাহ : ৩/১৪২ পৃ. হাদিস,  ১৮২১, ইমাম তাবরানী : মু‘জামুল কাবীর : ৮/১০২ পৃ. হা/৭৪৯৭ ও মু‘জামুল আওসাত, ৩/৩১২পৃ. হাদিস,  ৩২৫৪, ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী, আল-তিব্বুল নববী, ১/২০৪পৃ. হাদিস,  ৬৩, ও ১/২০৪পৃ. হাদিস,  ৬৪,  ও ১/২০৪ পৃ. হা/৬৫ ও হিলইয়াতুল আওলিয়া, ৬/১১৮পৃ., ইমাম যুবাইদী উত্তাহাদুস-সা’দাতুল মুত্তাকীন : ৬/৫৪৪ পৃ.,  আল্লামা মানাবী : ফয়জুল কাদীর : ১/১৪২ পৃ. হা/১৫১,  সুয়ূতি,  আদ্দুরুল মুনতাসিরাহ,  ১/৪৩ পৃ. হা/৩, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ১/৩৬ পৃ. হাদিস,  ২৪৩, ও ১/৪৭ পৃ. হা/৩৮৫, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১১/৮৮ পৃ. হা/৩০৭৩, দরবেশহুত,  আস্-সুনানিল মুত্তালিব, ১/২৮পৃ. হাদিস,  ৪৮, ইমাম ক্বদায়ী, মুসনাদে শিহাব, ১/৩৮৭ পৃ. হাদিস,  ৬৬৩, ইমাম ইবনুল র্বা, জামিউল বায়ানুল ইলমে ওয়া ফাদ্বলিহী, ১/৬৭৭ পৃ. হাদিস, ১১৯৭, হাকিম তিরমিযী, নাওয়ারিদুল উসূল ফি আহাদিসুর রুসূল, ৩/৮৬পৃ. ইবনে কাসীর, জামিউল মাসানিদ ওয়াল সুনান, ৮/৫১৬ পৃ. হাদিস,  ১০৮৬১, হায়সামী, মাযমাউদ যাওয়াউদ, ১০/২৬৮পৃ. হাদিস,  ১৭৯৪০


সনদ পর্যালোচনা:


এ হাদিসটির সনদ সম্পর্কে ইমাম হাইসামী  বলেন- رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ، وَإِسْنَادُهُ حَسَنٌ. -‘‘হাদিসটি ইমাম তাবরানী (رحمة الله) বর্ণনা করেন, আর সসদটি ‘হাসান’।’’ (হায়সামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ১০/২৬৮ পৃ. হা/১৭৯৪০) কিন্তু ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) এ সনদে থাকা ‘আব্দুল্লাহ বিন ছালেহ’ থাকার কারণে লিখেছেন-


عَبْد اللَّه بْن صَالح كَاتب اللَّيْث لَيْسَ بِشَيْء.


-‘‘রাবী ‘আব্দুল্লাহ’ ইমাম লাইস (رحمة الله)-এর কাতেব ছিলেন, তার হাদিস কিছুই নয়।’’ উক্ত রাবী আব্দুল্লাহ ইমাম লাইস ইবনে সা‘দ (رحمة الله)-এর সোহবতে ২০ বছর ছিলেন। (ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ১০/৪০৮ পৃ. ক্রমিক.১১৫) অথচ উক্ত রাবীর বিষয়ে ইমাম যাহাবী (رحمة الله) লিখেন-


الإِمَامُ، المُحَدِّثُ، شَيْخُ المِصْرِيِّيْنَ، أَبُو صَالِحٍ الجُهَنِيُّ مَوْلاَهُمُ، المِصْرِيُّ، كَاتِبُ اللَّيْثِ بنِ سَعْدٍ.


-‘‘তিনি ছিলেন ইমাম, মুহাদ্দিস, মিশরের শায়খ, উপনাম আবূ ছালেহ জুহানী, মিশরের অধিবাসী, তিনি বিখ্যাত ইমাম লাইস বিন সা‘দ (رحمة الله)-এর কাতেব ছিলেন।’’ (ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ১০/৪০৫ পৃ. ক্রমিক.১১৫) 


তিনি আরও লিখেন- فَكَانَ صَدُوْقاً فِي نَفْسِهِ، مِنْ أَوْعِيَةِ العِلْمِ -‘‘তিনি ব্যক্তি হিসেবে ছিলেন সত্যবাদি, ইলমের ধারক।’’ (ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ১০/৪০৫ পৃ. ক্রমিক.১১৫)  


তিনি আরও লিখেন- وَقَالَ أَبُو عَلِيٍّ الغَسَّانِيُّ الحَافِظُ -‘‘মুহাদ্দিস আবূ আলী গাস্সানী (رحمة الله) বলেন, তিনি হাফেযুল হাদিসদের একজন ছিলেন।’’ (ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ১০/৪০৮ পৃ. ক্রমিক.১১৫) 


তিনি আরও লিখেন- استَشْهَدَ البُخَارِيُّ فِي (صَحِيْحِهِ) -‘‘তাঁর হাদিস সহীহ বুখারীতে রয়েছে।’’(ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ১০/৪০৬ পৃ. ক্রমিক.১১৫) 


তাই সহীহ বুখারীতে থাকা রাবীর সমালোচনা করার কোন সুযোগ নেই। অপরদিকে ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার অন্য পুস্তকে লিখেন- قال عبد الملك بن شعيب بن الليث: ثقة مأمون -‘‘মুহাদ্দিস আব্দুল মালক বিন শুয়াইব বিন লাইস বলেন, তিনি সিকাহ এবং নিরাপদ রাবী।’’ (ইমাম যাহাবী, মিযানুল ই‘তিদাল, ২/৪৪০ পৃ. ক্রমিক.৪৩৮৩) 


তিনি আরও উল্লেখ করেন- وقال أبو حاتم: هو صدوق أمين -‘‘ইমাম আবু হাতেম (رحمة الله) বলেন, তিনি সত্যবাদী, নিরাপদ রাবী।’’(ইমাম যাহাবী, মিযানুল ই‘তিদাল, ২/৪৪০ পৃ. ক্রমিক.৪৩৮৩) তাহলে এ সনদটির মান কমপক্ষে ‘হাসান’ তাতে কোন সন্দেহ নেই। 


চতুর্থ সূত্র: 


ইমাম আবূ নুয়াইম ইস্পাহানী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-


حَدَّثَنَا حبيب بْن الْحَسَن حَدَّثَنَا أَحْمَد بْن عَلِيّ السكن حَدَّثَنَا أَحْمَد بْن مُحَمَّد بْن عُمَر الْيَمَانِيّ حَدَّثَنَا عمَارَة بْن عُتْبَة حَدَّثَنَا الْفُرَات بْن السّائب عَن مَيْمُون بْن مهْرَان عَن ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ الله: اتَّقُوا فِرَاسَةَ الْمُؤْمِنِ فَإِنَّهُ يَنْظُرُ بِنُورِ اللَّهِ.


-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, তোমরা মু‘মিনদের অন্তরদৃষ্টিকে ভয় কর, কেননা তারা আল্লাহর নূর দ্বারা দেখেন।’’  ২০

২০ . আবু নুয়াইম ইস্পাহানী, হিলইয়াতুল আওলিয়া, ৪/৯৪ পৃ. সাখাবী, মাকাসিদুল হাসানা, ১/৫৯ পৃ. হাদিস, ২৩, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ১/৩৬ পৃ. হা/২৪৩, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১১/৮৮ পৃ. হাদিস, ৩০৭৩, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি, জামিউল আহাদিস, ১/৩৩৪ পৃ. হাদিস,  ৫৩১, ইমাম ত্বাবারী, আত্-তাফাসীর, ১৪/৪৬ পৃ. ইবনে আদি, আল-কামেল, ৪/২০৬ পৃ. ক্রমিক. ১০১৫, আব্দুল্লাহ বিন ছালেহ এর জীবনীতে, খতিবে বাগদাদী,  তারীখে বাগদাদ,  ৫/৯৯ পৃ.


ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) বলেন, সনদে ‘ফুরাত ইবনে সায়িব’ রাবী হিসেবে দুর্বল। (ইমাম সুয়ূতি, আল-লাআলিল মাসনূ, ২/২৭৮ পৃ.)


পঞ্চম সূত্রঃ 


এ ব্যাপারে মাকতু সূত্রে শক্তিশালী সনদে একটি হাদিস বর্ণিত আছে যেমন-


أَخْبَرَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، عَنْ مَعْمَرٍ، عَنِ الْحَسَنِ، قَالَ: كَانَ يُقَالُ: إِيَّاكُمْ وَفِرَاسَةَ الْمُؤْمِنِ، فَإِنَّهُ يَنْظُرُ بِنُورِ اللَّهِ


-‘‘হযরত হাসান বসরী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলতেন, ‘তোমরা মু‘মিনের দূরদৃষ্টি থেকে বেঁচে থাক, কেননা তারা আল্লাহর নুর দ্বারা দেখে।’’  ২১

এ সনদটি অনেক শক্তিশালী, কারণ সনদে কোন দুর্বল রাবী নেই।

২১. ইমাম আব্দুর রায্যাক,  জামে মা‘মার বিন রাশেদ,  ১০/৪৫১ পৃ. হা/১৯৬৭৪


৬ষ্ঠ সূত্র : 


ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) আরেকটি সূত্র উল্লেখ করেন এভাবে-


أَخْبَرَنَا عَبْد اللَّه بن عَليّ الْمقري أَنْبَأنَا الْحَسَن بْن أَحْمَد بْن طَلْحَة الثعالبي أَنْبَأَنَا أَبُو بَكْر مُحَمَّد بْن أَحْمد بْن وصيف حَدَّثَنَا أَبُو بَكْر الشّافعيّ حَدَّثَنَا أَحْمَد بْن زَكَرِيّا حَدَّثَنَا مُحَمَّد بْن مُوسَى بْن بزيع حَدَّثَنَا حَمَّاد بْن خَالِد الْخياط حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاذ الصَّائِغ عَنِ الْحَسَن عَن أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُول الله: اتَّقُوا فِرَاسَةَ الْمُؤْمِنِ فَإِنَّهُ يَنْظُرُ بِنُورِ اللَّهِ


-‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, তোমরা মু‘মিনদের অন্তরদৃষ্টিকে ভয় কর, কেননা তারা আল্লাহর নূর দ্বারা দেখেন।’’  ২২

২২. ইমাম সুয়ূতি, আল-লাআলিল মাসনূ, ২/২৭৮ পৃ., ইমাম আবিল হুসাইন বিন বিশরান, মাজালিসানে মিন আমালি, ১/২২৭ পৃ. হা/২০


ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) এ সনদ সম্পর্কে বলেন-


أَبُو مُعَاذ هُوَ سُلَيْمَان بْن أَرقم مَتْرُوك. قَالَ الْخَطِيب: وَالْمَحْفُوظ مَا أَخْرَجَهُ العُقَيْليّ.


-‘‘এ সনদে আবূ মুয়াজ তিনি হচ্ছেন ‘সুলাইমান ইবনে আরকাম’ সে মাতরুক বা পরিত্যক্ত রাবী। 


ইমাম খতিবে বাগদাদী (رحمة الله) বলেন, ইমাম উকাইলী (رحمة الله) যে সূত্রটি সংকলন করেছেন সেটি মাহফুয।’’ (ইমাম সুয়ূতি, আল-লাআলিল মাসনূ, ২/২৭৮ পৃ.) 


তবে উক্ত রাবীর বিষয়ে মুহাদ্দিসদের সিদ্ধান্ত হলো তিনি বর্ণনাকারী হিসেবে দুর্বল, মাতরুক নন। 


যেমন ইমাম হাইসামী (رحمة الله) বলেন- وَفِيهِ سُلَيْمَانُ بْنُ أَرْقَمَ وَهُوَ ضَعِيفٌ. -‘‘সনদে সুলাইমান বিন আরকাম রয়েছেন, সে দুর্বল রাবী।’’ (হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ২/৬৯ পৃ. হা/২৩৫৫) তাহলে বুঝা যায় এ সনদটি দুর্বল।


৭ম সূত্র: এ বিষয়ে প্রথম হাদিসটির ন্যায় হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) থেকে একটি সনদে বর্ণিত আছে। ২৩

২৩.    ইমাম সাখাবী, মাকাসিদুল হাসানা, ১/৫৯ পৃ. হাদিস,  ২৩


৮ম সূত্র: এ বিষয়ে আরেকটি হাদিস পাওয়া হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) বলেন, 


الْمُؤْمِنُ يَنْظُرُ بِنُورِ اللَّه الَّذِي خُلِق مِنْهُ


-‘‘মু‘মিন সে নুর দ্বারা দেখে যে নূর দ্বারা তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।’’  ২৪

২৪ . ইমাম দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ৪/১৭৮ পৃ. হা/৬৫৫৪, আজলূনী , কাশফুল খাফা, ২/২৬৪ পৃ. হা/২৭০০, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১/১৬৫ পৃ. হা/৮২৩, তাহের পাটনী, তাযকিরাতুল মাওদ্বুআত, ১৯৫ পৃ., ইমাম সাখাভী, মাকাসিদুল হাসানা, ৬৮৮ পৃ. হা/১২৩৪


আল্লামা তাহের পাটনী এবং ইমাম সাখাভী এ হাদিসটির কোন সমালোচনা করেননি। (আল্লামা তাহের পাটনী, তাযকিরাতুল মাওদ্বুআত, ১৯৫ পৃ., ইমাম সাখাভী, মাকাসিদুল হাসানা, ৬৮৮ পৃ. হা/১২৩৪) 


তাই সর্বশেষ বলতে চাই এ হাদিসটি মোটামুটি মুতাওয়াতির পর্যায়ের মর্যাদা রাখে, আর এ পর্যায়ের হাদিসকে অস্বীকার করা কুফুরী পর্যায়ের। আল্লাহ আমাদেরকে এ আহলে হাদিসদের হাদিসের অপব্যাখ্যা করার খপ্পর থেকে হিফাযত করুন, আমিন।

 
Top