22 - بَابُ مَا جَاءَ فِي فَضْلِ الصَّلَاةِ فِي مَوَاقِيْتِهَا

85 - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ طَلْحَةَ بْنِ نَافِعٍ، عَنْ جَابِرٍ ، قَالَ: سُئِلَ رَسُوْلُ اللهِ : أَيُّ الْعَمَلِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: «اَلصَّلَاةُ فِيْ مَوَاقِيْتِهَا».


বাব নং ৩৭.২২. ওয়াক্ত মতে নামায পড়া


৮৫. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা তালহা ইবনে নাফে থেকে, তিনি হযরত জাবির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ’র কাছে প্রশ্ন করা হয়েছে যে, কোন আমল উত্তম? উত্তরে তিনি বলেন, ওয়াক্ত অনুযায়ী নামায পড়া। (বুখারী, ৩/১০২৫/২৬৩০)

ব্যাখ্যা: বুখারী শরীফে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে মারফু হাদিসে বর্ণিত আছে যে,  اي الاعمال احبّ اليه قال الصلوة على وقتهاকেউ রাসূল (ﷺ) ’র নিকট প্রশ্ন করল যে, আল্লাহর নিকট কোন আমল অধিক পছন্দনীয়? উত্তরে তিনি বলেন, ওয়াক্ত মতে নামায পড়া।”  

➥ ইমাম বুখারী (رحمة الله), (২৫৬ হি), বুখারী, খন্ড ৬, পৃষ্ঠাঃ  ২৭৪০

 

উক্ত হাদিসে যথাসময়ে নামায আদায়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

23 - بَابُ مَا جَاءَ فِي فَضْلِ الْإِسْفَارِ بِالصُّبْحِ

86 - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَبْدِ اللهِ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، عَنِ النَّبِيِّ ، قَالَ: «أَسْفِرُوْا بِالصُّبْحِ، فَإِنَّهُ أَعْظَمُ لِلثَّوَابِ».

বাব নং ৩৮.২৩. পূর্বাকাশ পরিস্কার হওয়ার পর নামায আদায়ের ফযীলত

৮৬. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আব্দুল্লাহ থেকে, তিনি ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ)  থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, তোমরা ফজরের নামায আকাশ ফর্সা হওয়ার পর আদায় কর। কারণ এতে অধিক সওয়াব রয়েছে। (নাসাঈ, ১/৪৭৯/১৫৩১)

ব্যাখ্যা: এ হাদিসের বিষয় বস্তু নিয়ে ইমামগণের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। এখানে মাসয়ালাটি মূলত ফজরের নামায সম্পর্কে। ইমাম মালিক, ইমাম শাফেঈ ও ইমাম আহমদ (رحمة الله)’র মতে ফজরের নামায غلس তথা অন্ধকারে পড়া উত্তম। পক্ষান্তরে ইমাম আ‘যম আবু হানিফা (رحمة الله)’র মতে اسفار তথা আকাশ পরিস্কার অবস্থায় পড়া মুস্তাহাব। সিহাহ্ সিত্তাহ্ হাদিস গ্রন্থসমূহে একই অর্থে বিভিন্ন শব্দ প্রয়োগে এ হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে। হযরত রাফে ইবনে খাদীজ (رضي الله عنه) থেকে ইবনে মাজাহ শরীফে এক মারফু রেওয়ায়েত বর্ণিত আছে। اصبحوا بالصبح فانه اعظم الاجر “ভোরের অন্ধকার দূরীভূত হওয়ার পর ফজরের নামায আদায় কর। কেননা, এতে অধিক সওয়াব রয়েছে।” আবু দাউদ শরীফে একই হাদিস বর্ণিত আছে, তিরমিযী শরফে বর্ণিত আছে- اسفروا بالفجر فانه اعظم للاجر “আলো স্পষ্ট হওয়ার পর ফজরের নামায আদায় কর। কেননা এতে অনেক সওয়াব রয়েছে।”  

➥  ইমাম তিরমিযী (رحمة الله), (২৭৯ হি), তিরমিযী, খন্ড ১, পৃষ্ঠাঃ  ২৮৯, হাদীস নং ১৫৪, বৈরুত

 

ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) রাফে ইবনে খাদীজের হাদিসকে সহীহ ও হাসান বলেছেন। সাহাবী ও তাবেঈগণের মধ্যে অনেকেই এই মত পোষণ করতেন। ইমাম সুফিয়ান সওরী (رحمة الله)ও এমত পোষণ করতেন। নাসাঈ, ইবনে হাব্বান এবং তাবরানী একই বাক্য দ্বারা এ হাদিস বর্ণনা করেছেন। তাছাড়া এ হাদিসের সমর্থনে কয়েকটি বিশুদ্ধ হাদিসও রয়েছে। যেমন: রাসূল (ﷺ)  হযরত বেলাল (رضي الله عنه) কে বললেন, ফজরের নামায আলোকিত হলে আদায় কর। যাতে আলোর কারণে নামাযী তাদের সিজদার স্থান দেখতে পায়। মুসান্নিফে ইবনে আবি শায়বা, ইসহাক ও আবু দাউদ (رحمة الله) স্বীয় মুসনাদে এ হাদিস রেওয়ায়েত করেছেন। 

এই বির্তক দূর করার জন্য বুখারী ও মুসলিম শরীফের বর্ণিত হযরত ইবনে মাসউদের হাদিস পেশ করা যায়। তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) কে দু’টি নামায ব্যতীত প্রত্যেক নামায ওয়াক্ত মতে আদায় করতে দেখেছি। প্রথমতঃ মুযদালিফায় মাগরিব ও এশা একত্রে আদায় করতেন আর দ্বিতীয়তঃ মুযদালিফায় ফজরের নামায সাধারণ সময়ের পূর্বে অন্ধকারে আদায় করতেন। কেননা মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে قبل ميقاتها بغلس এটা এজন্য যে, উকুফের সময় অধিক মিলে থাকে।

ইবনে মাসউদ রাসূল (ﷺ) ’র বিশেষ খাদেম ছিলেন। তিনি রাসূল (ﷺ) ’র পারিবারিক, বাহ্যিক, সফর ও বাড়ীতে দিবারাত্রি জীবনের অভ্যন্তরীন খবর সম্পর্কে অবহিত হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছিলেন। তিনি বলেছেন, রাসূল (ﷺ)  ফজরের নামায اسفار এ পড়ার অভ্যস্থ ছিলেন। সুতরাং এ বিষয়ে আর কারো সাক্ষীর প্রয়োজন আছে কি?

তাছাড়া শরহে মাআনিউল আসার নামক গ্রন্থে হযরত ইব্রাহীম নখঈ (رحمة الله) থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত আছে যে, রাসূলের সাহাবাদের মধ্যে অন্য কোন বিষয়ে এরূপ ঐক্য সৃষ্টি হয়নি যেরূপ এ বিষয়ে সৃষ্টি হয়েছিল।

কিয়াসও ইমাম আ‘যমের মতকে সমর্থন করে। কেননা যতটুকু সম্ভব মুসল্লীদেরকে অধিক সংখ্যক জামাতে অংশগ্রহণের সুযোগ দান করা উত্তম। জামাতে অংশ গ্রহণ করতে পারবেনা এমন সংক্ষিপ্ত সময় নির্ধারণ করা ঠিক নয়। অতএব উপরোক্ত হাদিস ও কিয়াসের আলোকে ফজরের নামায اسفار এ পড়া মুস্তাহাব, অন্ধকারে নয়।

যারা غلس তথা অন্ধকারে ফজরের নামায আদায় করার পক্ষে মত পোষণ করেন, তারা সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত হাদিস দলীল হিসেবে পেশ করেন। হাদিসে বর্ণিত আছে-ان رسول الله صلى الله عليه وسلم ليصلى الصبح فتنصرف النساء متلفعات بمروطهن ما يعرفن من الغلس “রাসূল (ﷺ)  ফজরের নামায আদায় করতেন তখন মহিলাগণ (জামাত শেষে) তাদের চাদরে আবৃত হয়ে বাসায় ফিরে যেতেন। অন্ধকারের কারণে তাদেরকে চেনা যেতনা।”  

    বুখারী ও মুসলিম, সূত্র: মেশকাত, পৃষ্ঠাঃ  ৬


 ‘চেনা যেতনা’ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, তখন যথেষ্ট অন্ধকার থাকত। তবে বাস্তবে চেনা না যাওয়ার দু’টি কারণ রয়েছে। প্রথমতঃ অন্ধকার হওয়া, দ্বিতীয়তঃ চাদরে আবৃত থাকা। মূলত চাদরে আবৃত থাকার কারণেই তাদেরকে চেনা যেতনা, অন্ধকারের কারণে নয়।

তাছাড়া এটি ঐ সময়ের ঘটনা যখন ইসলামের প্রারম্ভে মহিলাদের জন্য মসজিদে জামাতে নামায আদায়ের অনুমতি ছিল। যখন এটা রহিত হয়ে যায় তখন সম্ভবত غلس তথা অন্ধকারে ফজরের নামায আদায়ের বিষয়টি বাকী থাকেনি। তবে এসব সন্দেহ দূরীভূত করার জন্য ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه)’র রেওয়ায়েত সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য। এছাড়া হযরত আয়েশা (رضي الله عنه)’র হাদিস হল আমলের সাথে জড়িত (فعلى) কিন্তুاسفار  এর হাদিস হল বর্ণনা সূচক (قولى)। হানাফী মাযহাব মতে قولى কে فعلى এর উপর প্রাধান্য দেওয়া হয়। এখানে দু’টি হাদিসের মধ্যে এভাবে সমন্বয় করা যায় যে, غلس অর্থ হলো হালকা অন্ধকার থাকা এবং اسفار অর্থ হলো এরূপ আলোকিত হওয়া যাতে কিঞ্চিৎ অন্ধকার বিদ্যমান থাকে যাকে غلس ও বলা যায়। তবে যদি উভয়ের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়, তা হলে اسفار কে প্রাধান্য দেওয়া হবে এবং ফজরের নামায اسفار এ আদায় করা বৈধ হবে। আর যদিاسفار  এর অর্থ আলো- অন্ধকার মিশ্রণ হয় তবে غلس এর চেয়ে এটি অধিক শুদ্ধ হবে।

 
Top